Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

'খালেদার গৃহপরিচারিকা ফাতেমার বেতন না পাওয়ার দাবি ভুয়া ও বানোয়াট'

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ০২:১৩ PM
আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ০২:১৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


১৩ মাস আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যখন জেলে নেয়া হয়, তখন সঙ্গী হন তার গৃহপরিচারিকা ফাতেমা। ফাতেমার বাবা রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে তার পরিবার। গত ১৩ মাসে পরিবারের দেনা হয়েছে লাখ খানেক টাকা।

তবে ফাতেমার বাবা রফিকুল ইসলামের এমন দাবি সর্ম্পূণ ভুয়া এবং বানোয়াট বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, ফাতেমার বাবা কয়েকদিন আগেও আমার আছে এসেছিলো, আমি তাকে টাকা দিয়েছি। এছাড়া চেয়ারপারসনের বাসভবনে দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রতিমাসে তার বেতন দিয়ে দেন এবং খোঁজখবর নেন।

ফাতেমা কবে মুক্তি পাবে জানতে চেয়ে বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রফিকুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া জীবনেও ফাতেমাকে কিছু দেবে না, এমনকি কিছু দরকার কিনা জিজ্ঞেসও করবে না। অন্য কেউ দিলে হয়তো পাবে। খালেদা জিয়ার মুখ দিয়ে বের হবে না যে, এই জিনিসটা তোকে দিলাম।

খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান বা তার পরিবারের কেউ ফাতেমার পরিবারের খবর নেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, টাকার অভাবে ফাতেমার দুই ছেলে এখন স্কুল ছেড়ে মাদ্রাসায় যাওয়ার অবস্থায়। বারবার চেষ্টা করেও জিয়া পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না তিনি।

দশ বছর আগে ফাতেমার স্বামী মারা যাওয়ার পর, সংসারের হাল ধরতে এলাকার এক পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাসভবনে গৃহপরিচারিকা কাজ পান ফাতেমা। বেতন প্রথমে ২ হাজার টাকা থাকলেও বকশিস ছিলো মোটা। পরবর্তিতে বেতন ৫ হাজার করা হয় এবং বেতনের টাকা প্রতিমাসে মানি অর্ডারে যেতো ভোলার গ্রামের বাড়ির ঠিকানায়।

উল্লেখ্য, দুর্নীতির দায়ে পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কারাগারে খালেদা জিয়াকে দেখাশোনার জন্য ফাতেমাকে রাখার নির্দেশ দেন।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা এবং এর পরপরই তাঁকে কারাগারে নেওয়ার পর থেকেই ‘ফাতেমা’কে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বিএনপির আইনজীবী ও নেতারা ফাতেমাকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাখতে না দেওয়ার সমালোচনাও করেন।

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সাবৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে ফাতেমাকে বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে কারাগারে রাখা হয়েছে।

তখন সাবেক কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে  বলেন, সাধারণত প্রথম শ্রেণির বন্দী বা ডিভিশন পাওয়া ব্যক্তিদের দেখভালের জন্য সাজা ভোগরত কোনো কয়েদিকে নিয়োজিত করা হয়। নারী বন্দীদের জন্য একজন নারীকে এবং পুরুষ বন্দীদের টুকটাক কাজের জন্য একজন পুরুষ বন্দীকে নিয়োজিত করা হয়। কারাগারে এমনটিই হয়ে থাকে। তবে আদালতের আদেশে যেকোনো কিছু করা যায়। আদালতের আদেশ কারা কর্তৃপক্ষকে বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে ঘটনাটিকে তিনি ‘নতুন’ বলে আখ্যা দেন।

তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের বলেছেন, এমনকি খালেদা জিয়া তাঁর গৃহকর্মীকেও সঙ্গে নিয়েছেন। যেটা এ দেশে নজিরবিহীন ঘটনা।

সাজার রায়ের পর পুলিশের গাড়িতে করে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে যান ফাতেমা। ওই দিন কয়েক ঘণ্টা তিনি সেখানে ছিলেন। কিন্তু নিয়ম না থাকায় বা ফাতেমা সঙ্গে রাখার ব্যাপারে আদালতের কোনো নির্দেশনা না থাকায় কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে সেখানে রাখতে দেননি। গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাইরের কাউকে রাখার নিয়ম না থাকায় ফাতেমা রাখার অনুমতি দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ।

দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ফাতেমা বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে রয়েছেন। ৩৫ বছর বয়সী ফাতেমা খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কাজগুলো করেন। বিএনপির চেয়ারপারসন তাঁর দৈনন্দিন কাজের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই ফাতেমার ওপর নির্ভরশীল। দেশের ভেতর তো বটেই, দেশের বাইরেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকেন তিনি।

বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা বলছেন, দলীয় চেয়ারপারসনের প্রতি ফাতেমার মমত্ববোধ প্রবল। সব সময় পাশে থাকা, চেয়ারপারসনকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো মনে করিয়ে দেওয়াসহ সব কাজই ফাতেমা করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে দলীয় চেয়ারপারসনের এই কাজগুলো সঠিকভাবে করার কারণে খালেদা জিয়া এখন তাঁর কাজগুলোর ব্যাপারে ফাতেমার ওপর নির্ভর করেন। এ কারণে দৈনন্দিন কাজে সহযোগিতার জন্য তিনি ফাতেমাকে সঙ্গে রাখার জন্য আবেদন করেছেন।

ফাতেমা বাবা-মার সঙ্গে ঢাকার শাহজাহানপুরে থাকতেন। এখন তাঁর বাবা-মা ও কিশোর বয়সী একমাত্র ছেলে শাহজাহানপুর এলাকাতেই থাকেন। ২০১৫ সালে জানুয়ারি থেকে ৯২ দিন গুলশানে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানের সময় খালেদা জিয়ার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন ফাতেমা। ফাতেমার একমাত্র ছেলে ওই সময় মাঝেমধ্যে গুলশান কার্যালয়ে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে যেত।

তাঁর পরিবারের ব্যাপারে বিএনপির সাবেক দুজন সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা সব খবর রাখেন। মূলত তাঁরাই ফাতেমাকে খালেদা জিয়ার বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজে পাঠান।

২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর যখন গুলশানের কার্যালয়ে থেকে খালেদা জিয়াকে বের হতে দেওয়া হচ্ছিল না ওই সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের পেছনে পতাকা হাতে দাঁড়ানো ফাতেমাকে নিয়ে অনেকেই কৌতূহল দেখান। খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ থাকার সময় গুলশান কার্যালয়ে ফাতেমার সঙ্গে কোনো কোনো সাংবাদিকের কথাও হয়েছে। খুবই স্বল্পভাষী ফাতেমা সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে তিনি অনেক দেশে গেছেন।

Bootstrap Image Preview