Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চিকিৎসক নেই ওয়ার্ড বয়ের কাজ করে সুইপার

খুরশিদ আলম শাওন, রানীশংকৈল (ঠাকুরগাও) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৫:৪২ PM
আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৫:৪২ PM

bdmorning Image Preview


তখন রাত ১২টা একজন অসুস্থ রোগীকে তার আত্মীয়-স্বজনরা চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি চিকিৎসা বিভাগে। সে-সময় জরুরি চিকিৎসা বিভাগের দরজা বন্ধ থাকায় তা নক করতেই খুললেন একজন ব্যক্তি। তিনি নাকি ওয়ার্ড বয় আর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার নাকি বাসায়।

তড়িঘড়ি করে ডেকে আনতে সে যাত্রায় রোগী প্রায় শেষ পর্যায়ে। মিনিট বিশেক পড়ে আসলেন চিকিৎসক এসে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিতে দিতেই মারা যান সে রোগী।

সম্প্রতি এমনি ঘটনা ঘটে ঠাকুরগায়ের রানীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আর রোগীটির বাড়ী পৌরশহরের ভান্ডারা গ্রামে তিনি ব্যবসায়ী আকবর আলী। সে রোগীর স্বজনরা আফসোস করে বলে আসার সাথেই যদি চিকিৎসা শুরু হতো বিশেষ করে অক্সিজেন দেওয়া হতো তাহলে হয়তো রোগীটি বেঁচে যেতো।

এদিকে পরে জানা যায়, ওয়ার্ড বয় সেজে থাকা ব্যক্তির পরিচয় তিনি হচ্ছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সুইপার দিলীপ। এভাবে করেই চিকিৎসকের অভাবে অনেক গরীব দুঃখী বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসা সেবা থেকে। কেউ কেউ আবার মারাও যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরটি বেহাল দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

উত্তরবঙ্গের শেষ জেলা ঠাকুরগায়ের রানীশংকৈল উপজেলার পঞ্চাশ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার নেই। এক্সেরে মেশিন বিকল পাচঁ বছর যাবৎ। বিদ্যুৎ না থাকলে বৈদ্যুতিক জেনারেটর চলে না। নেই কোন নিয়ম শৃঙ্খলা। কর্মচারীরও চলে ইচ্ছেমতো। গুরুত্বপূর্ণ পদের বেশিরভাগ কর্মচারীরা রয়েছেন প্রেষণে অন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

মো জাহেদুল ইসলাম স্বাস্থ্য সহকারী কিন্তু তিনি সে কাজ করেন না। শুধুমাত্র বসে বসে প্রতি মাসে নেন সরকারি বেতন। তাকে কেউ কিছু বলতে পারেন না। কারণ তার রয়েছে শাসক দলের নেতাদের সাথে সখ্যাতা এবং সিভিল সার্জন অফিসের কর্তাদের সাথে গভীর সম্পর্ক।

এদিকে জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড বয়ের পদ ২টি হলেও রয়েছে বাবুল নামে একজন আয়া ২টি পদ থাকলেও রয়েছে একজন আফসানা মিমি, জুনিয়র মেকানিকেল সোহরাদী, ইমাজেন্সি এটেনডেন্স সাইদুর রহমান, অটি আইয়ুব আলী, মালি জিয়াউর রহমান, নাইট গার্ড ৩টি পদের রয়েছেন ১টি, সুইপার পদ ৫টি রয়েছেন ৪জন কর্মরত তার মধ্যে রমানন্দসহ উল্লেখিতরা প্রেষণে রয়েছেন ঠাকুরগাও সদর হাসপাতালে। তার মধ্যে সুইপার দিলীপ করছেন ওয়ার্ড বয়ের কাজ।

এছাড়াও স্বাস্থ্য সহকারী পদের সংখ্যা ৩০ হলেও কর্মরত রয়েছে ২৪জন তার মধ্যে জাহেদুল ইসলাম প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি তার দায়িত্ব পালন করেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলা স্ব্যস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিক উপ-স্বাস্থ্য কন্দ্রে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মোট চিকিৎসকের সংখ্যা ৩০টি তার মধ্যে ৭টি পদে উপজেলা স্বাস্থ্য পঃ পঃ কর্মকর্তা আর,এম,ও মেডিকেল অফিসার ডেন্টাল সার্জন এ্যানেসথেটিস্ট মেডিকেল অফিসার সহকারী সার্জন চিকিৎসক কাগজে কলমে থাকলেও প্রেষণে রয়েছেন ২জন চিকিৎসক এরা হলেন, মেডিকেল অফিসার ডাঃ শিহাব মাহমুদ শাহরিয়ার ঠাকুরগাও সদর হাসপাতালে। এ্যানেসথেটিস্ট ডাঃ উজ্জল কুমার ঘোষ রয়েছেন সহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঢাকাতে।

পাশাপাশি সহ-সার্জন ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন ২০১২ সাল থেকে এবং ডাঃ খন্দকার নাদিয়া আফরিন ২০১১ সাল থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

অন্যদিকে জুনিয়রকনসালটেন্ট (এনেসথিয়া) চক্ষু/শিশু/ জুনিয়র কনসালটেন্ট, গাইনী/কার্ডিও/চর্মও যৌন, সার্জারি/অর্থোপেডিক্স, মেডিসিন/ই,এন,টিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের চিকিৎসকের পদ থাকলেও এগুলো কখনো এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলে জানা যায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ শামীম আহম্মেদ বলেন, নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ হবে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে নিয়োগ দিলে আমি তাদের থাকার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে দিবো বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Bootstrap Image Preview