Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

লালমনিরহাটে দুর্নীতির আখড়া মহিলা বিষয়ক অফিস

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি 
প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৩:২৪ PM
আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৩:২৪ PM

bdmorning Image Preview


অতিরিক্ত দায়িত্ব নিলেও টানা দুই মাস ধরে অফিসে না এসে বাসায় বসে ফাইল স্বাক্ষর করে চলেছেন লালমনিরহাট জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পাটগ্রাম উপজেলা মহিলা বিষয় কর্মকর্তা সাবরীনা লাকী। এ সুযোগে জেলা কার্যালয়ের বড় বাবু খ্যাত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মতিয়ার রহমান বড়কর্তা সেজে চালিয়ে যাচ্ছেন অফিসের সকল কার্যক্রম। ফলে তদারকির অভাবে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে সরকারি এ দফতরটি।

জানা গেছে, বদলি জনিত কারনে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পান পাটগ্রাম উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার সাবরীনা লাকী। জেলার পাশাপাশি হাতীবান্ধা উপজেলারও অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন ওই কর্মকর্তা। পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলায় যার বিরুদ্ধে রয়েছে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। দায়িত্ব ভার গ্রহনের পর থেকে ৮৩ কিলোমিটার দুরে পাটগ্রাম অফিস থেকে চালিয়ে যাচ্ছে জেলা অফিসের কার্যক্রম। গত দুই মাস ধরে তিনি জেলা অফিসে আসেননি বলেও স্বীকার করে ওই কর্মকর্তার দাবি, অসুস্থতার কারণে এমনটি হয়েছে। তাছাড়াও দুই অফিসের দূরত্ব প্রায় ৮৩ কিলোমিটার। যা নিয়মিত হওয়া অনেকটাই কষ্টকর।

প্রধান কর্মকর্তার অনুপস্থিতির সুযোগে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মতিয়ার রহমান নিজেই বড়বাবু থেকে বড়কর্তা হয়ে গেছেন। তার ইচ্ছা ও মর্জির উপর চলে এ অফিস। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। দুস্থ ও বেকার নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে জীবীকায়ন প্রকল্পের আওতায় এসব নারীদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে সরকার। যা বাস্তবায়ন করছে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়। এ প্রকল্পের আওতায় ৫টি ট্রেডে লালমনিরহাটের বেকার নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

আধুনিক দর্জি বিজ্ঞান, কাগজের প্যাকেট তৈরী, পাটজাত দ্রব্যের ব্যাগ তৈরী, বিউটি ফিকেশন ও শোপিস তৈরীর ট্রেডে ২০জন করে মোট ১ শত জন নারী প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। তারা ৩ মাস প্রশিক্ষণে যাতায়াত ও খাওয়া বাবদ দৈনিক একশত টাকা হারে সম্মানী পাবেন। কিন্তু এ অফিসের বড়বাবু খ্যাত অফিস সহকারী মতিয়ার রহমান ইচ্ছামত প্রশিক্ষনার্থীদের টাকা কর্তন করে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ অর্থের একটা বড় অংশ যায় দায়িত্ব প্রাপ্ত জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাবরীনা লাকীর কাছে।  

প্রশিক্ষণার্থীরা জানান, একটি রেজিস্টারে স্বাক্ষর নিয়ে ইচ্ছেমত টাকা দেন মতিয়ার রহমান। প্রশিক্ষনার্থীরা সবাই জন প্রতি ৩ মাসে সম্মানী বাবদ ৬ হাজার ৬ শত টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তাদেরকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা কেটে নিয়ে দেয়া হচ্ছে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। এ ছাড়াও প্রশিক্ষণের উপকরণ ক্রয় বাবদও ৩-৫ শত করে টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। 

গত প্রশিক্ষণ ব্যাচের দর্জি বিজ্ঞান ট্রেডের রেখা খাতুন জানান, তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকলেও তাকে অনুপস্থিত দেখিয়ে সম্মানী বাবদ মাত্র ৫ হাজার ৬ শত টাকা দেয়া হয়েছে। একই কথা বলেছেন ওই ব্যাচের আর্জিনা, সুমনা ও হোসনে আরা। তারা জানান, স্ট্যাম্প কিনে দিলেও তাতে স্বাক্ষর না নিয়ে একটি খাতায় স্বাক্ষর নিয়ে সম্মানীর টাকা দিয়েছেন অফিস সহকারী।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একটি সূত্র দাবি করেছে, প্রশিক্ষণার্থীদের সম্মানীর রেজিস্টার দুইটি। একটিতে স্ট্যাম ছাড়া প্রশিক্ষার্থীদের ইচ্ছেমত সম্মানী পরিশোধ করা হয়। পরে মূল রেজিস্টারে স্ট্যাম্পে ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে শতভাগ পরিশোধ দেখিয়ে প্রতি ব্যাচে এক থেকে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন অফিস সহকারী মতিয়ার রহমান। যার সিংহভাগ পাটগ্রামে বসেই পাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাবরীনা লাকী।

অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে অফিস সহকারী মতিয়ার রহমান জানান, যারা যতদিন উপস্থিত ছিলেন, তত দিনের সম্মানী পেয়েছেন। তবে অনুপস্থিতির সম্মানীর টাকা ফিরিয়ে দেননি কেন? এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দেখাতে পারেননি। তার অফিসে সম্মানী পরিশোধের দুইটি রেজিস্টার দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে দুই রেজিস্টারের স্বাক্ষর প্রশিক্ষণার্থীদের বলে দাবি করেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাবরীনা লাকী বলেন, অসুস্থতার কারণে দুই মাস ধরে জেলা অফিসে যাওয়া হয়নি। প্রয়োজনীয় কাজ থাকলে ফাইল পাটগ্রামে নিয়ে এসে স্বাক্ষর করে নিয়ে যান অফিসের লোকজন। তবে অফিস সহকারীর অভিযোগটি আমার জানান নেই। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Bootstrap Image Preview