Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নলকূপের পানি ইটভাটায় বিক্রি, অতিরিক্তি সেচমূল্য ফেরতের দাবি কৃষকদের

আবু ইউসুফ, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১০:৫৪ PM
আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১০:৫৪ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


নওগাঁর রাণীনগরে সেচ ভূর্তুকি সুবিধার আওতায় গভীর নূলকূপের বিদ্যুৎ দিয়ে ইটভাটায় বাণিজ্যিক চুক্তিতে পানি সরবারহ, একই স্থানে অটো চার্জিং স্টেশন, সেচ কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত সেচ মূল্যের চাইতে কৃষকের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরৎ এবং জিম্মিদশা থেকে গভীর নলকূপ উদ্ধার করে সমিতির নিকট হস্তান্তরের দাবিতে উপজেলা সেচ কমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চকমনু গ্রামের মৃত শফির উদ্দিনের ছেলে মো: আসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে এই লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নের চকমনু মৌজায় কৃষক সমবায় সমিতির মাধ্যমে প্রায় ৩৫/৪০ বছর আগে স্থাপিত গভীর নলকূপের আওতায় প্রায় ২শ' বিঘা ফসলী জমি রয়েছে। নলকূপ স্থাপনকাল থেকে অত্র মাঠের কৃষকগণ ঘণ্টা পিটিয়ে যৌথভাবে বৈঠক করে সর্বসম্মতিক্রমে পানির মূল্য নির্ধারণ করে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করত। গত প্রায় ২০/২৫ বছর আগে চকমনু গ্রামের মৃত শফির উদ্দিনের ছেলে মো: আসমাইল হোসেন হঠাৎ করে গভীর নূলকূপটি কৌশলে তার নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং কৃষকদের মাঝে প্রচারণা করেন, তিনি এই নলকূপটি ক্রয় করেছেন।

এ বিষয়ে ওই নলকূপের আওতাভুক্ত চাষিরা প্রতিবাদ ও কার কাছ থেকে কিভাবে কিনেছে তা জানতে চাইলে অদ্যবদি পর্যন্ত তিনি ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়টি কাউকে জানায়নি। নলকূপটি তার নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর কৃষকদেরকে জিম্মি করে তার ইচ্ছে স্বাধীন মতো সেচমূল্য নির্ধারণ করে পরিচালনা করে আসছে। তার নিয়ন্ত্রণে থাকা এই নূলকূপ দিয়ে ফসলী জমিতে সেচ প্রদান ছাড়াও দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে নলকূপ সংলগ্ন ইটভাটায় গোপনে বাণিজ্যিক চুক্তিতে পানি সরবারহ করছেন। চলতি ইরি-বোরো মৌসুম শুরুতে সেচমূল্য নির্ধারণ না হওয়ার সুযোগে ওই নলকূপের তথাকথিত মালিক বিঘা প্রতি ২ হাজার টাকা করে কৃষকের কাছ থেকে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু গত ৬ ফেব্রুয়ারি চাষিরা জানতে পারে উপজেলা সেচ কমিটির পক্ষ থেকে ইউনিয়ন ওয়ারী সেচমূল্য নির্ধারণ, এলাকা জুরে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়।

কাশিমপুর ইউনিয়নের জন্য সর্ব্বোচ সেচমূল্য করা হয়েছে ১৪শ’ টাকা। সেই হিসাবে নলকূপের মালিক বিঘা প্রতি অতিরিক্ত ৬শ’ টাকার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই যে সব কৃষকের কাছ থেকে আগাম সেচ বাবদ টাকা নেওয়া হয়েছে তাদেরকে অতিরিক্ত টাকা ফেরতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নলকূপটি জিম্মীদশা থেকে কৃষকের স্বার্থে উদ্ধার করে নতুন সমিতি গঠন অথবা সমিতি পুনঃগঠন করে সুষ্ঠুভাবে নলকূপ পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

এ ছাড়াও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, গত ৩ বছর আগে নলকূপের সাথে অর্থাৎ একই স্থানে বড় গুদামঘর নির্মাণ করে অবৈধভাবে ব্যাটারী চার্জিং স্টেশন গড়ে তোলেন। তার নূলকূপে সেচ সুবিধার আওতায় পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ এবং অটোচার্জিং এর ক্ষেত্রে পিডিবি সংযোগও নিয়েছেন তিনি। নলকূপ ও গুদামঘর একই প্রাচীরের মধ্যে হওয়ায় কোন সংযোগ দিয়ে কোন ব্যবসা করছেন তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে প্রশ্ন যাই হোক একই স্থানে দুই সংস্থার বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে অবাধে নানামুখি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে উপজেলার পশ্চিম বালুভরা গ্রামের সাহেবউল্লাহ শাহ'র ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৫৫) অটোচার্জার নেওয়ার জন্য ওই নলকূপের গুদামঘরে গেলে তিনি বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যান। এ মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় খবরও প্রকাশিত হয়। তবে কোন সংযোগের স্পর্শে ওই অটোচালকের মৃত্যু হয়েছে এ নিয়ে দায় এড়াতে দুই দফতরের কর্তা ব্যক্তিরা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। এই গভীর নলকূপটিতে সেচ সুবিধার আওতায় পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ এবং একই স্থানে পিডিবি’র সংযোগ নেওয়ার কারণে কখন কোন সংযোগ দিয়ে কোন কাজ করা হয় তা সাধারণ মানুষের জানার বাহিরে।

রাণীনগর পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মো: আসাদুজ্জামান বলছেন, আমার সংযোগের আওতায় ওই নলকূপের বিদ্যুৎ কোন প্রকার বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহার করা হয় না। আর পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ থেকে কারও মৃত্যু হয়নি।

অপরদিকে পিডিবি'র আবাসিক প্রকৌশলী সুব্রুত চক্রবর্তী বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন কিছু জানা নেই। তবে একই নলকূপে দুইটি সংস্থার বিদ্যুৎ সংযোগ কেন? এমন প্রশ্নের কোন সদউত্তর দেয়নি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে ইট ভাটার ম্যানেজার মো: জসির উদ্দিন জানান, এই গভীর নলকূপ থেকে প্রায় ২৫ বছর ধরে চুক্তিভিত্তিক ইটভাটার যাবতীয় কাজের জন্য আমরা পানি ব্যবহার করে আসছি।

স্থানীয় অটো চার্জার চালকরা জানান, পল্লী বিদ্যুৎ ও পিডিবি’র সংযোগ থাকার কারণে আমরা এখানে চার্জের ক্ষেত্রে ভাল সুবিধা পাই।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সেচ কমিটির সভাপতি মো: আল মামুন বলেন, এ বিষয়ে ওই নলকূপের আওতাভুক্ত কৃষকের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। শীঘ্রই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্ধারিত সেচমূল্য প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের জানানোর লক্ষ্যে ৮টি ইউনিয়নে মাইকিং, মূল্য তালিকাসহ লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। আর অতিরিক্তি সেচমূল্য ফেরতের ব্যাপারে কয়েকদিনের মধ্যে গভীর নলকূপের অপারেটর ও মালিকদের সাথে বৈঠক করা হবে।

Bootstrap Image Preview