Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এক নজরে ‘ইজতেমার প্রথম পর্ব'

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:৪৫ PM
আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:৫২ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: প্রতিবেদক


আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে তাবলীগ জামাতের ৫৪ তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এবার তাবলিগের মুরুব্বি মাওলানা মো. যুবায়েরেরপন্থীদের ময়দান খালি করার পালা। দ্বিতীয় পর্ব ইজতেমা পরিচালনা করবেন মাওলানা সাদপন্থীরা।

আজ শনিবার(১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা ৪৩ থেকে ১১টা ৬ মিনিট পর্যন্ত প্রথম পর্বে মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মসজিদের খতিব, কাকরাইলের মুরব্বি ও বিশ্ব তাবলিগের শুরা সদস্য হাফেজ মাওলানা যোবায়ের। 

বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের ভেতরে দু'টি গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছে, যার সূত্র ধরে এবারের বিশ্ব ইজতেমা দুটি পৃথক আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম দু’দিন অর্থাৎ ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি তাবলিগের মুরুব্বি মাওলানা মো. যুবায়েরের তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত হয়। পরবর্তী দু’দিন ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার কার্যক্রম পরিচালিত হবে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের তত্ত্বাবধায়নে।

শুক্রবার আম ও খাস বয়ান, তালিম ও তাশকিল, নামাজ-কালাম ও জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগতীরে কাটে বিশ্ব ইজতেমার প্রথমদিন। এদিন জুমার জামাতে শরিক হন কয়েক লাখ মুসল্লি। মাঠে জায়গা না পেয়ে আশপাশের রাস্তা, বাড়িঘর, দোকানপাট এমনকি নদী ও সড়কে বিভিন্ন যানবাহনেও শরিক হন জুমার জামাতে।

এদিন যারা বয়ান করলেন: বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক আম বয়ান করেন। তা বাংলায় ভাষান্তর করেন বাংলাদেশের মাওলানা নূর-উর-রহমান। বাদ জুমা বয়ান করেন সৌদি আরবের মাওলানা শেখ গাছছান, বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা আবদুল মতিন। বাদ আসর বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা জুহায়েরুল হাসান, অনুবাদ করেন মাওলানা মো. দেলোয়ার হোসেন।

বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা। বাংলায় ভাষান্তর করেন মাওলানা জোবায়ের আহমেদ। মূল বয়ান আরবি ও উর্দুতে হলেও সঙ্গে সঙ্গেই তা অনুবাদ করা হচ্ছে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, উর্দু, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ ২৪ ভাষায়। এসব বয়ানে ইমান ও আমলের গুরুত্ব, মুসলমান হিসেবে করণীয় ও দ্বীনের পথে চলার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়।

সকালে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নামাজের মিম্বর থেকে খাস বয়ান, ওলামা হজরতদের জন্য খাস বয়ান, শিক্ষকদের জন্য বয়ানের মিম্বার থেকে খুসুসি বয়ান ও বধিরদের জন্য পৃথকভাবে বয়ান করা হয়।

খাবারের ব্যবস্থা প্রত্যেক গ্রুপের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় করা হচ্ছে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় মুসল্লীদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা ইজতেমা প্রাঙ্গনেই রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে চার মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।

মৃতরা হলেন, ফেনীর শফিকুর রহমান (৫৮), কুষ্টিয়ার মো. সিরাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. আব্দুল জব্বার ওরফে রাজ্জাক (৪২) ও একই জেলার মোহাম্মদ আলী (৫৫)।

বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের দক্ষিণ পার্শ্বে মাসলেহাল জামাতের কামরার পাশে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তীব্র পানি সংকট দেখা দেয়। তাই অনেক মুসল্লির ওজু, গোসল ও শৌচাগার ব্যবহারে সমস্যায় পড়েন।

এদিকে জুমার নামাজে অংশ নিতে সকাল থেকেই ইজতেমা ময়দানমুখী মানুষের ঢল নামে। সময় যত গড়াতে থাকে এ ঢল বাড়তে থাকে। দুপুর ১২টার মধ্যেই ভরে যায় মাঠ। পরে মাঠে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা জায়নামাজ, হোগলা-পাটি, পলিথিন, চট ও পলিবস্তা, বাঁশ কাগজ, খবরের কাগজ বিছিয়ে বসে পড়েন মাঠের রাস্তা, আশপাশের গলি ও ভবনে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান প্রমুখ ইজতেমা ময়দানে জুমার জামাতে অংশ নেন।

গতকাল  অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আজাদ মিয়া জানান, বয়ান মঞ্চের দক্ষিণে রান্না করার সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একটি গ্যাসের চুলার আগুল বর্ধিতভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সিলিন্ডার বিস্ফোরণের গুজবে আতঙ্কিত হয়ে মুসল্লিরা ছোটাছুটি শুরু করেন। এতে আশপাশে চুলার গরম হাঁড়ি-পাতিল পড়ে গিয়ে, চুলায় পা পড়ে, আগুনে পুড়ে ও দা-বঁটিতে কাটা পড়ে ২০ মুসল্লি আহত হন।

এর আগে শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন দু’পক্ষের শীর্ষ মুরুব্বিরাই করেন। তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইজতেমা চলছে। সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। সরকার শুধু বলেছে, আপনারা দু’পক্ষ একসঙ্গে ইজতেমা করবেন এতে করে আপনাদের মধ্যে যে শঙ্কা আছে, ভয়ভীতি আছে তা দূর করার দায়িত্ব আমাদের। ইনশাআল্লাহ এটা কোনো মতে হবে না। ইজতেমায় যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

এছাড়া ইজতেমার ময়দানে নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি ছিলো ব্যাপক, সার্বক্ষনিক র‍্যাবের একটি হেলিকপ্টারকে টহল দিতে দেখা যায়। অপরদিকে স্থানীয় প্রশাসন পুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশ, গোয়েন্দা নজরদারিসহ নিরাপত্তা বলয়ে ছিলো গোটা ইজতেমার মাঠ।

তুরাগ নদীর ওপার থেকে যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আসা-যাওয়ার জন্য তিনটি পৃথক অস্থায়ী ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। পানি ও স্যানিটেশনের ব্যাবস্থা বরাবরের মতো তাবলীগ জামায়াতের নিজস্ব ব্যাবস্থাপনাতেই করা হয়েছে।

এদিকে র‌্যাব-১ এর সিও (কমান্ডিং অফিসার) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেছেন, ‘তাবলীগের দুই পক্ষকেই আমরা আগেই নির্দেশনা দিয়েছিলাম যাতে কোনও পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করে বক্তব্য না দেন। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে নিয়ে যেন কটাক্ষ না করেন। সেই অনুযায়ী মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা বয়ান এবং ইজতেমার অভ্যন্তরে প্রতিপক্ষ গ্রুপকে কটাক্ষ বা উস্কানিমুলক কোনো কথা বলেননি। আশা করছি পরে যারা ইজতেমা পরিচালনা করবেন তাও নির্দেশনাগুলো মেনেই ইজতেমা শেষ করবেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান বলেছেন, যেহেতু তাবলীগের অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য ইজতেমা দুই পর্বে ভাগ করা হয়েছে। সেহেতু এক গ্রুপেরটা শেষ হলে অন্য গ্রুপকে সুযোগ দিতে হবে। যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আলাদা আলাদা আখেরি মোনাজাতের ব্যবস্থাও করা হয়। অথচ প্রথমের দিকে ইজতেমা তিন দিন এবং আখেরী মোনাজাত একটাই হওয়ার কথা ছিল। দুই পক্ষের আবেদনের কারণেই ইজতেমা বাড়িয়ে চারদিন এবং আখেরী মোনাজাত দুটো করা হয়। উভয় গ্রুপের শীর্ষ পর্যায়ের মুরুব্বিরাও একে অপরকে সুযোগ দেওয়া এবং সহযোগিতা করার লিখিত প্রতি্শ্রুতি দিয়েছেন। যা প্রশাসনের কাছে রয়েছে।

Bootstrap Image Preview