পরিবহন বান্ধব টাট্টু ঘোড়ার গাড়ি গাইবান্ধা জেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গাইবান্ধা জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চল শুকনো মৌসুমে নদ নদীর পানি শূন্যতায় হয়ে উঠে ধু ধু বালুচর। এ সময় গাইবান্ধা জেলার নদী বেষ্টিত সাঘাটা, ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের যাতায়াত ও কৃষি পণ্যসহ প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
চরাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে এ অঞ্চলে একটি কথা প্রচলিত আছে, তা হলো ‘চরে যাতায়াতে পাও, না হয় নাও’। অর্থাৎ শুকনো মৌসুমে পায়ে হাটা আর বর্ষায় নৌকা। এছাড়া কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এখন অবস্থা ভিন্ন। শুকনো মৌসুমে যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘবে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘টাট্টু ঘোড়ার গাড়ী’। এক ঘোড়া দিয়ে ছোট ছোট মোটরের টায়ারের চাকায় চলে এসব গাড়ী।
চরের বালুর উপর দিয়ে ওই গাড়ীগুলো দিব্যি চলতে পারে। প্রতিটি গাড়ীতে অনায়সে ১৬ থেকে ২০ মণ কৃষি পণ্য পরিবহন করা যায়। এছাড়া চালকসহ ৫ থেকে ৬ জন যাত্রী বালু চর পেরিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। বালু চর ছাড়াও এসব ‘টাট্টু ঘোড়ার গাড়ীতে’ মেইন ল্যান্ডে এবং উপজেলা পর্যায়ের সড়কেও মালামাল পরিবহণ করা হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, ঘোড়ায় টানা গাড়িতে পাকা সড়কে ৩০ মণ মালও টানা সম্ভব।
ঘোড়া গাড়ি চালকরা জানায়, ছোট্ট আকৃতির টাট্টু ঘোড়াগুলো খুব কষ্ট সহিষ্ণু এবং মাল টানায় অত্যন্ত পারদর্শী। টাট্টু ঘোড়াগুলো বালুতে হাঁটতে পারদর্শী বলে চরাঞ্চলে এদের কদর অনেক বেশি। এসব ঘোড়া আকৃতিতে ছোট এবং এদের লেজ অনেক বড়। গাধার চেয়ে উচ্চতা সামান্য বেশি কিন্তু পেশী বহুল শরীরও বেশ শক্ত সামর্থ্য। অন্যদিকে এসব ঘোড়ার দামও বেশি নয়। মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় একটি ঘোড়া পাওয়া যায়।
ঘোড়ার গাড়ির চালকরা জানায়, গাইবান্ধা জেলায় এই ঘোড়া পাওয়া যায় না। কিনে আনতে হয় দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রামের খড়িবাড়ী এবং টাঙ্গাইলের তুলসিপুর হাট থেকে। সেখানে গরু ছাগলের হাটের মত টাট্টু ঘোড়ার হাটও বসে।
জানা যায়, প্রতিদিন একটি ঘোড়ার গাড়ির সাহায্যে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। এর মধ্যে ঘোড়ার খাবার বাবদ প্রতিদিন ব্যয় হয় ২শ’ টাকা। তবে বর্ষা মৌসুমে চরে নৌকা চলে বলে তাদের আয় কমে যায়। ইদানিং টাট্টু ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে। পাশাপাশি এ টাট্টু ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে এ এলাকার অনেক মানুষই নতুন কর্মস্থান খুঁজে পেয়েছে।