Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অস্তিত্ব হারাচ্ছে নরসুন্দা নদী, চলছে দখল ও দূষণ

রমজান আলী, নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৮:০৭ PM
আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৮:০৭ PM

bdmorning Image Preview


ময়মনসিংহের নান্দাইলে নদীর নাব্যতা হ্রাস, দখল ও বর্জ্যদূষণের কারণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে নরসুন্দা নদী। অযত্ন ও নদী খনন না করায় বিলীনের পথে নদীটি। বর্তমানে নদীর বুকে কৃষকেরা বোরো ধান আবাদ করেছে। এক সময় এটি ছিল প্রবাহমান নদী। নদীতে ভাসতো পাল তোলা নৌকা। কিন্তু সেই নদী আজ নিশ্চিহ্ন পর্যায়। আগের মতো নেই জৌলস। এক সময় এই নদী দেশী মাছের একমাত্র ধারক ও বাহক ছিল।

নরসুন্দা নদীর এ করুণ দশায় নদী পাড়ের হাজার খানেক মৎস্যজীবী তাদের পেশা থেকে ছিটকে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এখন নদীতে পণ্য বোঝাই ট্রলার চলার পরিবর্তে ধান আবাদ করার জন্য চলছে কৃষকের লাঙ্গল। নদীর যেটুকু অস্তিত্ব রয়েছে তা এখন দখল ও দূষণের কবলে। নদীর ধার ঘেষে অবস্থিত নান্দাইল উপজেলা সদর। সদরের বণিকদের মালামাল আমদানী রপ্তানীর একমাত্র সহজ পথ ছিল এই নদী। নদীতে ছিলো দু’টি নৌঘাট যা বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে নদীতে পানিশূণ্য থাকায়।

নদীর ধার ঘেঁষে যে যার মতো জায়গা দখল করে নদী ভরাট করে দোকানপাট তৈরি করছে। এই অবস্থায় পরিবেশ রক্ষায় নদীটি পুরোনো রূপে দেখতে চায় সাধারণ মানুষ। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে তলদেশে পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে এখন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। নদীতে পানি না থাকার কারণে নদী সংলগ্ন এলাকার জমিতে খড়া মৌসুমে তেমন আবাদ হচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা। আবার প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীতে প্রচুর পানি আসে। তখন বন্যার পানিতেও কৃষকের সহস্র একর আবাদি জমির ফসল নষ্ট হয়।

এতে দেশের প্রচুর পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়। যদি মাটি খনন করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়, তাহলে খড়া মৌসুমেও কৃষকরা উপকৃত হবেন। পাশাপাশি অঞ্চলটির জনসাধারণ আর্থ-সামাজিকভাবে লাভবান হবে। রক্ষা পাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ।

নরসুন্দা নদীর কাছে গিয়ে দেখা যায়, এক শ্রেণির দখলদার ইচ্ছেমত নদীর দু’পাড় দখল করে ধান চাষ করছে। উৎপাদিত হচ্ছে ধান। এতে দখলদাররা লাভবান হলেও সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ না থাকায় প্রতিনিয়ত প্রভাবশালী ও দু’পাড়ের মানুষ ইচ্ছে মতো দখল করে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ব্রীজের একপাশে পৌরসভা থেকে বর্জ্য ফেলে নদী ভরাট ও দূষণের পরিবেশ সৃষ্টি করছে।

নরসুন্দা পাড় এলাকার প্রবীণ শিক্ষক আলী আফজাল খান জানান, এক সময় নদীতে বড় বড় বজ্রা নৌকাসহ বিভিন্ন নৌযান চলতো। নদীটি পুনঃখনন করা না হলে ২০-২৫ বছর পর আগামী প্রজন্ম বিশ্বাসই করতে চাইবে না যে নান্দাইলে নরসুন্দা নদী নামে একটি নদী ছিল।

মানবাধিকার সংগঠক এডভোকেট মগবুল হোসেন সরকার জানান, নরসুন্দা নদীকে পুনঃখনন ও দখল মুক্ত করতে বিগত সব সরকারই উদ্যোগ নিলেও অদ্যবদি এর কোন বাস্তবায়ন হয় নি।

নান্দাইল আসনের সংসদ সদস্য মো. আনোয়ারুল আবেদীন খাঁন তুহিন বলেন, উপজেলাটি কৃষি নির্ভর এলাকা। বর্তমান সরকারের নদী খননের আওতায় এই নদীটি পুনঃখননের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে নরসুন্দার হারানো গৌরব ফিরে আসে। এছাড়াও নরসুন্দা নদীর পাড়ে একটি শিশু পার্ক তৈরি করে শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. মোসাদ্দেক মেহেদী ইমাম বলেন, নদী রক্ষায় সরকারের নানামুখি পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে মানুষের আরো বেশি সচেতন হওয়া জরুরী।
 

 

Bootstrap Image Preview