Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নদীকে একটি জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি 

জাহিদ রিপন, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৬:৫২ PM
আপডেট: ২৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৬:৫২ PM

bdmorning Image Preview


নদীরও অনুভূতি আছে। আছে বেঁচে থাকার অধিকার। এজন্য একে বাস্তবিক ও আইনগতভাবে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া উচিৎ। তখন নদীকে নদীর মতো থাকতে দেয়া আরো বেগবান হবে। এক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড এবং ভারতের দৃষ্টান্তকে বিবেচনায় নেয়া যায়। যেখানে আইন প্রণয়ন এবং আদালতের বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে নদীকে মানুষের মতই সমান আইনগত অধিকার দেয়া হয়েছে। হোয়াঙ্গানুই, গঙ্গা এবং যমুনা নদীর এখন আইনগত অধিকার আছে। যার অর্থ হল এদের অবশ্যই জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সংস্থা 'একশন এইড বাংলাদেশে' মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) বেলা এগারটায় কুয়াকাটার হোটেল গ্রেভার ইন'র হলরুমে এ পানি সম্মেলনের আয়োজন করে। অনুষ্ঠিত কুয়াকাটায় 'রিভার: এ লিভিং বিয়িং' নামের এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।   

দুইদিনের এই সম্মেলনের প্রথমদিনে পানি ও শক্তি এবং জীববৈচিত্র্য ও নদীবাহিত পলি বিষয়ক মোট ছয়টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গবেষকরা। এছাড়া সম্মেলনে 'নদী ও জলের ছবি' বিষয়ক ভিন্নধর্মী ছবি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়। 

নদীর অধিকার রক্ষায় এবং নদীকে নদীর মতো থাকতে দিয়ে তার অনুভূতিকে আমলে নিয়ে তার সত্ত্বার স্বীকৃতি দিতে হবে এমন দাবি জানিয়ে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক গবেষক এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, দখল, দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন করে আমরা নদী মেরে ফেলছি। কারণ নদীর অনুভূতিকে আমরা আমলে নেই না। নদীর নিজস্ব একটা সত্ত্বা আছে, সেটি আমরা ভাবি না। 

দু'দিনের আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের প্রথমদিনের ধারণাপত্র এবং  মূল বিষয় তুলে ধরতে গিয়ে একশন মএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, পানি এবং জীবন সমার্থক। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ পানির অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে নদীর অধিকার এখনো ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি পায় নি। দক্ষিণ এশিয়া শত শত নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। যেহেতু এ নদীগুলোর অধিকাংশই আন্ত:সীমান্ত নদী। তাই বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং মায়ানমারে বসবাসরত মানুষের কাছে এসব নদীর পানি একটি সাধারণ প্রাকৃতিক সম্পদ। যা মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, 'নদীকে বাঁচাতে হলে আমাদের নদীকে ভালভাবে বুঝতে হবে। নদী একটি জীবন্ত সত্ত্বা। এই জীবন্ত সত্ত্বাকে ভালভাবে বুঝতে হবে। অনুভূতিকে বুঝতে হবে। এসব অনুধাবনের পর নদী বিষয়ক প্রকল্প হাতে নিতে হবে। নদীর যে সত্ত্বা আছে সেটি বুঝা যায় যখন নদী মরে গেলে মানুষের উপর তার প্রভাব পরে। নদী যখন খারাপ থাকে তখন মানুষের জীবনেও খারাপ প্রভাব পড়ে। নদীর অধিকার ও সত্ত্বা আমার ধ্বংস করছি দখল, দূষণ, অপরিকল্পিত পরিকল্পনা এবং জলবায়ু পরির্তনের মাধ্যমে। নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের নদীকেন্দ্রিক এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করতে হবে।

আলোচনায় আরও বলা হয়, এক্ষেত্রে পানির অধিকার এবং সাধারনের সুরক্ষা, পানি গণতন্ত্র, পানি বিষয়ক উদ্ভাবন এমন বিভিন্ন ধ্যান-ধারণার বিনিময় এবং সংলাপকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। সম্মেলনে চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নদীর সত্ত্বাকে বাঁচানোর কথা বলা হয়েছে। পানি, শক্তি, জীববৈবিচত্র্য ও নদীবাহিত পলি এই চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নদীর বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেন আলোচকরা। 

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম বলেন, 'দেশের বেশিরভাগ নদী জীবন্ত সত্ত্বা থেকে মৃত সত্ত্বায় পরিণত হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই নদী নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু কেউ নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে বিবেচনা করছে না। উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে নদী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব আমাদের জীবনে পড়ছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, জীবন বাঁচাতে পানি দরকার, জীবনের জন্য পানি দরকার। সেই পানিই যদি না থাকে তবে আমরা থাকতে পারব না। বাস্তবতা হলো আমরা নদীগুলো মেরে ফেলছি। আইন থাকলেও তার প্রয়োগ আমরা করতে পারি না। যারা প্রয়োগ করবেন তারা তা করেন না বা করতে পারেন না। নদীর মালিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্র নদীর সত্ত্বাকে বাঁচাতে আইন করেছে। তবে পরিকল্পনায় অনেক গলদ আছে। আছে সমন্বয়ের অভাব।

তিনি আরো বলেন, পানি ও নদী নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কনভেশন নদীকে তার মত থাকার অধিকার দিয়েছে। তবে রাষ্ট্রগুলো যখন এটি না মানে তখন তার প্রভাব ভাটির দেশে বেশি পরে। আমরা তার উদাহরণ। নদীর অধিকার রক্ষায় সব দেশগুলোকে একটি প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে।

আলোচনায় আসে জলবায়ু ন্যায্যতার বিষয়টিও। যেখানে বলা হয়, নদীপাড়ের মানুষ প্রতিনিয়তই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতির শিকার। দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে এই ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের যুগে বিভিন্ন দেশের মানুষের সক্রিয় কর্মকাণ্ড এবং উদ্যোগ কোন সাধারণ বিষয়কে এগিয়ে নেয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে, নদীর অধিকারের দাবিতে সাধারণ মানুষের উদ্যোগ অ্যাডভোকেসির বিষয় নির্ধারণের জন্য এই সম্মেলনের ধারণাগুলোর যোগসূত্র স্থাপন করে।

আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন ব্যান্ড দল 'জলের গান'-এর সদস্যরা।

সম্মেলনের শেষদিন জলবায়ু ন্যায্যতা, এবং আন্ত:সীমান্ত নদী ও নদীর অধিকার রক্ষায় সাধারণ মানুষের উদ্যোগ বিষয়ক মোট নয়টি প্রবন্ধ উপস্থাপনের মাধ্যমে নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানানো হবে।
 

Bootstrap Image Preview