Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মানবতার ফেরিওয়ালা ওসি মনিরুল

মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৮:৪৮ PM
আপডেট: ২৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৮:৪৮ PM

bdmorning Image Preview


পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মহৎ কাজ করেন নাটোরের সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম।

সিংড়ায় যোগদানের পর থেকে তিনি অসহায় মাকে সন্তানের কাছে, শিশু সন্তানকে মায়ের কোলে, শিকল পরা গৃহবধূকে উদ্ধার করাসহ বিভিন্ন কাজ করে ইতিমধ্যেই সিংড়াবাসীর মনে নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

মসিরন বেওয়া, বয়স আনুমানিক ৮৫ বছর। এ বৃদ্ধা প্রায় ২০ বছর যাবৎ সিংড়া পৌর শহরের দমদমা কবরস্থানের পাশে চকলেট ও বিড়ির দোকান দিয়ে আসছিলেন। অসহায় জীবন-যাপনের বিষয়টি ওসি মনিরুল ইসলাম অবগত হয়ে তিনি সরেজমিনে দেখে দ্রুত বৃদ্ধার ছেলে আবু সাইদকে এনে পুলিশী হেফাজতে নেন এবং মাকে তাঁর জিম্মায় নিয়ে ভরণপোষণের জন্য নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ তাঁর মাকেও থানায় নিয়ে আসেন। অত:পর ছেলে আবু সাইদ মুচলেকা দেন যে মাকে সে দেখভাল করবে।

উপজেলার কুষাবাড়ী গ্রামের মৃত হুসেন প্রামাণিকের স্ত্রী রহিমা বেওয়া প্রায় ১০ বছর পূর্বে তার স্বামীকে হারান। এরপর থেকেই তার ৭ ছেলে-মেয়ের পরিবারের সাথে জীবন যাপন করতে থাকেন।

সম্প্রতি মেজ ছেলে বেল্লাল হোসেন একটু বেশি আদরের হওয়ায় তাকে জমি-জমা ও ঘর-বাড়ি লিখে দেন। একদিন সকালে ছেলের কাছে টাকা চাইলে মায়ের মুখে লাথি মেরে ফেলে দেয় ছেলে বেল্লাল হোসেন। গ্রাম্য প্রধানদের সামনেই করা হয় মারপিট।

এদিকে থানার সামনে মাটিতে বসে একজন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মহিলাকে কাঁদতে দেখে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় বিষয়টি সিংড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলামকে অবগত করা হয়। বৃদ্ধার ছেলে বেল্লালকে থানায় ডেকে তার মাকে হাতে তুলে দেন ও মায়ের সব দায়িত্ব বুঝে দেন ওসি মনিরুল ইসলাম।

উপজেলার বেলোয়া গ্রামের মৃত মছির উদ্দিন প্রামাণিকের স্ত্রী ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মর্জিনা বেওয়া দীর্ঘ দিন ধরে ছেলেদের অবহেলার শিকার হয়ে আসছিলেন। পরে বিষয়টি সিংড়া থানা পুলিশ জানতে পেরে সম্প্রতি সেই অবহেলিত বৃদ্ধাকে তার ছেলে মহাব্বত প্রামাণিকের কাছে দায়িত্ব বুঝে ওসি মনিরুল ইসলাম। আর কোন দিন ‘মা’ কে অবহেলা করবে না মর্মে ছেলের কাছ থেকে নেয়া হয় মুচলেখা।

যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন মমতাজ বেগম (২২) নামের এক গৃহবধু। স্বামীর মধ্যযূগীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।

মমতাজ বেগমের ভাষ্য অনুযায়ী, স্বামী ও শাশুড়ি শাফিয়া বেগম মিলে মাঝে মধ্যে তাকে যৌতুকের টাকার জন্য মারপিট করে। একদিন সন্ধ্যায় একই বিষয় নিয়ে ঝগড়া লাগলে স্বামী এবং শাশুরী তাকে বেধড়ক মারপিট করেছে।

এদিকে, গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে খবর পাওয়ার পর রাত ১টায় হাসপাতালে নির্যাতিতা মমতাজ বেগমের কাছে ছুটে যান সিংড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম। মমতাজ বেগমের কাছে ঘটনা শুনে দেড় বছরের সন্তানকে রাত ৩টায় তার কোলে ফিরিয়ে দেন তিনি।

উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের গাড়াবাড়ি গ্রামে রেবেকা নামে এক গৃহবধূকে মাঝে মধ্যেই তার স্বামী শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতেন। স্থানীয় সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষনাৎ গভীর রাতে তিনি সঙ্গীয় ফোর্সসহ রওনা দেন উপজেলার দূর্গম এলাকায় এবং তাকে উদ্ধার করে তার পিতার বাড়িতে পৌঁছে দেয়।

মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানের বিধবা মেয়ে দেলচানের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন ওসি মনিরুল ইসলাম। দেলচান জানান, আমি ১ বিঘা জমি আবাদ করলে পার্শ্ববর্তী গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের হরদমা গ্রামের সোহরাব তার ধান জোড়পূর্বক কেটে নেয়। দীর্ঘদিন থেকে ঘুরে কোন সমাধান হয়নি। দীর্ঘদিনের জমির ধানের টাকা নিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে বিরোধ চলছিলো, ওসি বিষয়টি জানতে পেরে দেলচানের সমুদয় টাকা আদায় করে তাঁর হাতে তুলে দেন।

সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, মানবতার পাশে দাঁড়ানো সকলের কর্তব্য, সবাই যদি স্ব স্ব অবস্থান থেকে মানবতার জন্য এগিয়ে আসে তাহলে এ বিশ্ব হবে ভালবাসায় পরিপূর্ণ। সবাইকে তিনি মানবতার জন্য এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান সেই সাথে ভবিষ্যতে তিনি এ রকম কাজ আরও করার জন্য প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

Bootstrap Image Preview