এক ছেলে বিসিএস ক্যাডার অন্য দুই ছেলে ধনী ব্যবসায়ী, পরিবার নিয়ে যার যার নিজ নিজ বাড়িতে থাকেন। নিঃসঙ্গ বাড়িতে স্মৃতি আঁকড়ে একা থাকতে হয়েছে অভাগা মা’র।
২০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন ফেনীর মধুপুরের মৃদুল সাহা। এরপর একে একে তাকে ছেড়ে গেছে শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত পাঁচ সন্তান।
শেষ চার বছর ধরে কার্যত মায়ের খোঁজ রাখেনি কেউ। অবশেষে তাকে মৃত্যুর মুখ থেকে উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। নির্জন বাড়িতে ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া মেয়ে থাকেন স্বামীর বাড়ি। আর মায়ের স্থান হয়েছে গ্রামের একটি বাড়িতে। সেখানে তাকে দেখার কেউ নেই। বৃদ্ধা মা অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকেন বিছানায়। অনেক সময় লেপটে থাকেন নিজের মলমূত্রের মাঝেই।
গতকাল মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে ফেনী পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড মধুপুর থেকে মৃদুল সাহা নামের এই বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। কক্সবাজার থেকে বিসিএস ক্যাডার ছেলের দেয়া খবরে পুলিশ ও স্থানীয় কাউন্সিলর লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে দেখেন তিনি এখনও জীবিত। নিজের মল-মূত্রের মাঝে ডুবে আছেন।
বাড়ির বাসিন্দা শুভ সাহা জানান, দীর্ঘ ৪ বছর ধরে মধুপুরের ওই বাড়িতে একা থাকেন বৃদ্ধা মা। তার বড় ছেলে বাপ্পি সাহা ও বিপুল সাহা ফেনী শহরের চালের আড়তের মালিক। তাদের বাবা হরিপদ সাহার রেখে যাওয়ার চালের আড়তে ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকায় মায়ের খোঁজ খবর নিতে পারেন না। স্ত্রী-ছেলে মেয়ে নিয়ে অন্য বাসায় থাকেন তারা। অপর ছেলে সুশান্ত সাহা বিসিএস ক্যাডার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক। থাকেন কক্সবাজারে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা মেয়ে শর্বরী সাহা ও গৃহিণী সুমি সাহা থাকেন তাদের শ্বশুর বাড়িতে।
ফেনীর সিভিল সার্জন কর্মকর্তা হাসান শাহরিয়ার কবির জানান, বৃদ্ধাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো আছে।
ফেনী পুলিশ সুপার এস.এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ পোদ্দার বাড়ির ওই বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে। এই বৃদ্ধা মাকে সন্তানরা অবহেলা করে মেরে ফেলার পাঁয়তারা করছিল কি-না তা দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।