Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করলো জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারী ২০১৯, ১২:০৪ AM
আপডেট: ২৩ জানুয়ারী ২০১৯, ১২:১৪ AM

bdmorning Image Preview


গ্রাম থেকে গ্রামে পাঠাগার গড়ার নেশায় ছুটে চলছে একদল বই প্রিয় যুবক। অনেকেই এদের পাঠাগার প্রেমী বলেন। অনেকে আবার বই পাগল বেকারের দল বলে গালি দিয়ে গাল ভরে হাসিতেই যেন তৃপ্তি পান। কিন্তু কারো কথায় যেন কর্ণপাত নেই তাদের। সব সমালোচনা মাথা পেতে নিয়ে প্রত্যেকেই গর্ব করে নিজেদের পরিচয় দেন জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন(জাপাআ) এর সদস্য হিসেবে।

সমাজের জন্য প্রত্যেকেরই শপথ একটি। ‘বই পড়ি পাঠাগার গড়ি স্লোগনে’ বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি করে পাঠাগার গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এই তরুণ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী আরিফ চৌধুরী শুভ।

মাস গড়িয়ে বছর যায়। তাদের কাজের পরিধিও বাড়ে শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে পাড়ায় আর পাড়া থেকে মহল্লায়। অনেকটা প্রচার বিহীন কাজ করে যাওয়া এই তরুণেরা সবাই উচ্চ শিক্ষিত যুবক। কেউ পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, কেউ আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার করে কর্মজীবন নিয়ে ব্যস্ত। বইয়ের প্রতি অগাধ ভালোবাসায় তারা একত্রিত হয়েছে একটি সংগঠনের মধ্যে। শুধু নিজেরাই বইপড়েন না, অন্যের বই পড়ার জন্যে গড়ে তুলেছেন জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন(জাপাআ)নামের সংগঠন। প্রত্যেকেই পাঠাগার গড়ার কাজে উদ্ধুদ্ধ করে আরিফ শুভ ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে গড়ে তোলেন জাপাআ। ২২ জানুয়ারি জাতীয় পাঠাগার আন্দোলনের দ্বিতীয় জন্মদিন। শুভ জন্মদিন জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন।

জন্মদিন উপলক্ষে সংগঠনটির সদস্য, উপদেষ্ঠাবৃন্দ এবং শুভাকাঙ্খিরা মিলিত হয়েছেন  রাজধানীর বাংলামোটর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ৮ম তলায়। মঙ্গলবার সারাদিন ফটোশেসন, র্যালি শেষে বিকেলে নিজেদের মতো করে ঘরোয়া আয়োজনে কেক কেটে পালন করা হলো জাপাআ এর ২য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এ সময় আরিফ চৌধুরী শুভকে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মো. সোহেল রানাকে সাধারণ সম্পাদক, মো. নোমান হোসেনকে কোষাদক্ষ্য এবং শামছুন্নাহার পপিকে সাংগঠনিক সম্পাদক  করে ৩৩ সদস্যের একটি কার্যকরী পরিষদ ঘোষণা করেন জাপাআ এর উপদেষ্ঠা পরিষদের অন্যতম সদস্য প্রফেসর ড. এম ফিরোজ আহমেদ।

এছাড়াও জাপাআ এর অফিসিয়াল ওয়বসাইটেরও উদ্বোধন করা হয়। ওয়েবসাইটটি উদ্বোধন করেন জাপাআ এর উপদেষ্ঠা পরিষদের অন্যতম সদস্য বুয়েটের সাবেক ডীন ও এশিয়ার এডুকেশন এক্সিলেন্স এওয়ার্ড প্রাপ্ত গবেষক ড. এম ফিরোজ আহমেদ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, চ্যানেল ২৪ এর জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক আরিফুল সাজ্জাত, তপন সরকারসহ প্রমুখ।

শুরুতেই সংঘঠনের পক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাপাআ’র প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জি. আরিফ চৌধুরী শুভ। তিনি বলেন, ‘এই সময়ে বাংলাদেশে সুস্থ ও অহিংস সমাজ গঠনের জন্যে একটি সম্মিলিত আন্দোলনের প্রয়োজন মনে করি। সেটি  হলো পাঠাগার আন্দোলন। শুধু পাঠক সৃষ্টিই নয়, বিপথগামী তরুণ সমাজকে মাদক, ধর্ষণ, আত্মহত্যা ও সকল অপকর্ম থেকে ফিরিয়ে আনার জন্যে সমাজে পাঠাগারের বিকল্প নাই। আমি বিশ্বাস করি সংস্কৃতমনা মানুষ কখনো বিপথগামী হতে পারেন না। তাই জাপাআ বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি করে পাঠাগার গড়ার যে কাজে নেমেছে সেটি একদিন সম্পন্ন হবেই’। এজন্যে সরকার ও দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ১০টি পাঠাগার দিয়ে শুরু করেছিলাম। আমরা সারাদেশে ২০০টির বেশি পাঠাগারকে অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছি। আমরা বিশ্বাস করি সবার সহযোগিতা থাকলে এই সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছাতে বেশি দিন লাগবে না।

জাপাআ এর উপদেষ্ঠা পরিষদের অন্যতম সদস্য ড. এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, এই সময়ের জন্যে এটা একটি কষ্টসাধ্য ব্যাপার এবং উদহরণতুল্য। তবুও জাপাআ এর মতো একটি সংগঠন দাঁড়ালো। সময়ের সাথে আমরা পরিবর্তন হয়েছি সত্য, কিন্তু বইয়ের প্রতি ভালোবাসা আজও রয়েছে সমাজের একটি শ্রেণির। সেই শ্রেণিকে আরো বেশি সংঘবদ্ধ করতে জাপাআ কাজ করে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি।

‘পাঠাগার আন্দোলন নামে দুই বছর আগেও আমি কিছু চিন্তা করতে পারিনি এই বাংলাদেশে’ বলেন, ড. এম ফিরোজ। তিনি বলেন, তবে জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন সারাদেশব্যাপি পাঠাগার গড়ার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আমি সেটাকে সাধুবাদ জানাই। এই সংঘঠনের প্রতিষ্ঠাতা আরিফ চৌধুরীকে আমি শুধু অভিনন্দই দিব না, আমি তাকে এই আন্দোলনটি গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে দেয়ার আহবানও জানাই। আমার বিশ্বাস তারা সত্যিকারের একটি পরিবর্তন আনতে পারবে যা তারা চায়। তাদের মতো এমন তরুণরা আছে বলেই এখনো বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে। আমি জাপাআ এর উত্তর উত্তর সাফল্য কামনা করছি।

বক্তব্য শেষ করার পর তিনি জাপাআ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন।

উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য আরিফুল সাজ্জাত বলেন, সমাজের যে জায়গায় পরিবর্তন হওয়া দরকার সেটি আসলেই হয়নি। কিন্তু তাই বলে পরিবর্তনের ধারা থেমে থাকেনি। এই সমাজেরই তরুণদের একটা অংশ সেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন পাঠাগার গড়ার মাধ্যমে এই সমাজকে সত্যিকারে একদিন বদলে দিবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

এছাড়াও সারাদেশ থেকে আগত অতিথি, শুভাকাঙ্খি ও পাঠাগার আন্দোলনের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।

Bootstrap Image Preview