Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফিরে এসেছে ঐতিহ্য, দখলমুক্ত হয়ে জমিদারের বাগানটি এখন ইকোপার্কে দৃশ্যমান

এসএম বাচ্চু, তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:৩৭ PM
আপডেট: ১৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:৫৯ PM

bdmorning Image Preview


সাতক্ষীরার তালায় দখল হয়ে যাওয়া জমিদার বাবুর আমবাগান ও বাড়িটি এখন দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যমান খোলাজানালা ইকো পার্কে পরিণত হয়েছে। উপজেলার পাটকেলঘাটা-তালা বাইপাস সড়কের ইসলামকাটি ইউনিয়নের গোপালপুর এলাকায় বাবুর আমবাগান হিসেবে খ্যাতি পাওয়া জায়গাটি এখন বদলে গেছে। সেই আমবাগানটি এখন ইকোপার্ক। যা তালা উপজেলার মানুষের জন্য অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র পরিণত হয়েছে।

গত ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল সাংবাদিক এসএম আকরামুল ইসলামের প্রতিবেদন 'হারিয়ে গেছে ঐতিহ্য, দখল হয়েছে জমি' শিরোনামে বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটির পর তৎকালীন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দীনের সহযোগিতায় তৎকালীন তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বর্তমান মাগুরা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফরিদ হোসেন শুরু করেন অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম। একই সঙ্গে দখল হওয়া বাবুর আমবাগানটিকে ঘিরে শুরু করেন বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন তৈরীর কার্যক্রম। অবশেষে প্রশাসনের উদ্যোগে খোলা-জানালা ইকোপার্ক হিসেবে রুপায়ন করা হয়েছে দখল হয়ে যাওয়া আমবাগানটি আর জমিদার বাড়িটি ব্যবহার হচ্ছে দর্শনীয় স্থান হিসেবে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, গোপালপুর এলাকায় তৎকালীন জমিদার ছিলেন অবলা কান্ত ঘোষ। অবলা কান্ত ঘোষ, বলয় ঘোষ, রবি ঘোষ ও উৎপল ঘোষের বাবা সুরেন ঘোষ ছিলেন সে সময়কার খুলনা জেলার চেয়ারম্যান। তৎকালীন প্রভাবশালী এ পরিবারটি দেড়শ বছর আগের কোনো এক সময়ে তালার গোপালপুর এলাকায় গড়ে তোলেন জমিদারি। এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য থাকা সুরেন ঘোষ প্রায় ৯০ বিঘা জমির উপর নির্মাণ করেন বসতভিটা। প্রায় একযুগ পর জমিদার সুরেন ঘোষের মৃত্যুর পর বড় ছেলে অবলা কান্ত ঘোষ জমিদার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

আরও জানা যায়, সব মিলিয়ে এলাকায় তাদের সাতশ' বিঘা জমি ছিল। যা এখন দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন মানুষ। কেউ কেউ জাল দলিল তৈরি করে নিজের জমি বলে দাবি করেন। দুটি পরিবার সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে স্থায়ী বসবাসও শুরু করেছেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সময় হঠাৎ রাতের আধারে পরিবার পরিজন নিয়ে জমিদার অবলা কান্ত দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমান। তারপর থেকে তাদের কেউ আর এখানে ফিরে আসেননি। এরপর থেকে ধীরে ধীরে সব দখলে নিতে শুরু করে স্থানীয় মানুষ। তবে এই জমিদারের দেশ ছাড়ার কারণ কেউ সঠিক জানাতে পারেননি।

স্থানীয় সমাজকর্মী মো. আলাউদ্দীন গাজী বলেন, জমির সঙ্গে সঙ্গে বাবুর রেখে যাওয়া আমবাগানটিও সব দখল করে নিয়েছিল বিভিন্ন মানুষ। দেড় বছর আগে এখানে ইকোপার্ক তৈরী কার্যক্রম শুরু হয়। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষরা এখানে একটু নিরিবিলি সময় কাঁটানোর জন্য এখানে আসেন। তালাবাসীর অন্যতম  বিনোদন কেন্দ্র হয়েছে এই খোলা জানালা ইকোপার্কটি। ২৮ বিঘা জমির উপর ইকোপার্কটির বিভিন্ন স্থানে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া চলাফেরার জন্য ইটের সোলিং করা হয়েছে। ছাউনি করে গোল চত্বর করা হচ্ছে।

ইকোপার্কটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র সেন জানান, মান্ত্রনালয় থেকে একটি টিম ইকো পার্কটি পরিদর্শন করেছেন। এটাকে বলা হচ্ছে ডিজিটাল জরিপ। এটাকে পূর্ণাঙ্গ পার্ক হিসেবে রুপদান করার জন্য কাজ করছে সরকার।

তৎকালীন তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বর্তমান মাগুরা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ফরিদ হোসেন জানান, জমিদার অবলা কান্ত ঘোষের ২৮ বিঘা মত জমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। পুরো জমিটাই খোলা জানালা ইকোপার্ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগেই ধীরে ধীরে এটা পূর্ণাঙ্গ পার্ক হিসেবে রুপলাভ করবে। তালাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমঞ্চালের লোকজন প্রধান বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে ব্যাবহার করতে পারবে এতে করে তালা উপজেলার দৃশ্যপট বদলে যাবে বলে আশা করছি।

Bootstrap Image Preview