Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ঝিকরগাছায় নির্মাণের সপ্তাহ পার না হতেই ব্রীজে ফাটল

শহিদুল ইসলাম, বেনাপোল প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:৩৬ PM
আপডেট: ১৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:৩৬ PM

bdmorning Image Preview


যশোরের ঝিকরগাছার বেড়ারুপানি গ্রামের বেতনা খালের উপর নতুন সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ব্রীজটির নির্মাণে এলাকার প্রায় দশ/বার হাজার মানুষ স্বাধীনতার পর তথা দীর্ঘদিনের। স্বপ্নের সেতুর স্বপ্ন পুরণের আশায় বুক বেঁধেছে। গত সপ্তাহে সেতুটির স্ল্যাব ঢালাই দেওয়ার পরের দিন সকালে বাঁশের রেলিং খুলতেই ভয়াবহ মাঝ বরাবর ফাটল দেখা দেয়। স্ল্যাবের মধ্যের রড পর্যন্ত বের হয়ে পড়েছে। সেতুটি নির্মাণের সপ্তাহ খানেকের মধ্যে এই ফাটল ধরায় যে কোন মুহুর্তে ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ।

ঝিকরগাছা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সেতু নির্মাণের জন্য জনপ্রতিনিধি বা স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে আবেদনের পর সেতু নির্মাণের জন্য যাচাই-বাছাই করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে প্রকল্পের বিপরীতে সেতুটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় ঝিকরগাছা উপজেলার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শিমুলী এন্টারপ্রাইজ।

যার প্রোপাইটর হলেন, জাহিদুর রহমান জাহিদ। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের গ্রামীণ রাস্তায় কমবেশী ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যকারে সেতু/কালভার্ট নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প-২০১৮/১৯ আওতায় মির্জাপুর-পাঁচপোতা রাস্তার বাজারের নিকট বেতনা খালের উপর ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ২০ফুট চওড়া সেতু। উপজেলার নির্বাসখোলা ইউনিয়নের বেড়ারুপানিতে নির্মাণাধীন সেতুটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৬ শত ৫৬ টাকা ১০ পয়সা। গত ২০১৮ সনের ৮ই অক্টোবর যার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত স্থায়ী কমিটির সদস্য ৮৬, যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড: মনিরুল ইসলাম মনির। 

সরেজমিনে নির্মাণাধীন সেতুটি পর্যবেক্ষণে গেলে ইমরান হোসেন বলেন, ৫ সেফটি পাথর ও ৭ সেফটি বালি ও ১ বস্তা সিমেন্টের মিশ্রণে রাত্রে ঢালাই দিয়েছে। এই সেতুর সমস্ত ঢালাইয়ের কাজ রাতে করা হয়েছে।

রওশনারা বলেন, কাজ সব ২ নাম্বারী হয়েছে। যেসব ভিটবালি ঢালাইয়ে চলেনা সেইসব ভিটবালি দিয়ে ঢালাই দেওয়া হয়েছে। একটিও সিলেট স্যান্ড দেয়নি, সাদা বালি ও ভালটা আনেনি, সব চিকন বালি নিয়ে এসেছে। যা এনেছে তা সব ২ নাম্বার মাল  এনেছে। বেতনায় পানি আসার আগেই সেতুটি ঠিক করে দিতে হবে। তা নাহলে আমাদের নতুন করে বাঁশের সাঁকো বানাতে হবে।    

মান্নান বলেন, সেতুটি ভাল হওয়ার দরকার ছিল। তার মধ্যে এরা ফাঁকি দিয়েছে। মাল মেডিসিন কম দিয়েছে। ফলে সেতুর মধ্য বরাবর ফেটে গেছে। সেতুটির আমরা ভাল চাই এবং আমরা যেন ভালভাবে চলাচল করতে পারি। আমাদের জোর দাবি ব্রীজটি ভেঙ্গে যেন আবার নতুন করে হয়। আগামী ২ মাসের মধ্যে এগুলো ঠিক করতে হবে, না হলে পানিতে ভরে যাবে।

আসমত আলী বলেন, সিমেন্ট রডের মাত্রা কম দিয়েছে। ১৬ মিলি ও ১২মিলি রড দিয়ে স্ল্যাব ঢালাই দিয়েছে এবং কিউরিং মোটেও করেনি।

শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এই সেতুর জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সাধনা করে আসছি। সাধনা করেই আমরা সেতুটি পেয়েছি। খোয়া বালি মিশানোর সময় এলাকার প্রতিটি লোক অবজেকশন দিয়েছে। ১০ ঝুড়ি খোয়া, ১০ ঝুড়ি বালি ও ১ ঝুড়ি সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই দিয়েছে। এলাকার লোকজন এই বিষয়টা নিয়ে গন্ডগোলও করেছে। কিন্তু তারা বলেছে সেতু টিকলে হলেতো। সেন্টারিং এর তক্তা খুলে নিলেই ব্রীজটি ঝুলে গেছে। এর ফলে মাঝখানে ফাটল দেখা দিয়েছে। আমাদের দাবি ব্রীজটি নতুন করে তৈরী করে দিতে হবে। আমাদের ৫ গ্রামের লোকজন এই পথে চলাচল করি।

হারুনুর রহমান বলেন, লে-আউট দেওয়ার পর নিচে ভিট বালির দেওয়ার পরিবর্তে কাদার মধ্যে দিয়েছে মাটি। মাটি দেওয়ার ফলে স্প্রীং করছে। এর পরে ইট বিছিয়ে সিসি ঢালাই করেছে। এ ফাউন্ডেশনে কাজ করার ফলে দক্ষিণ পাশের এক ফুট বসে গিয়েছে। যার কারণে সেতুটিতে ফাটল ধরেছে। অফিসারদের বলার পরও তারা কোন কথায় কর্ণপাত করেনি। সেতুটি নতুন করে তৈরী করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।  

ঝিকরগাছা উপজেলার ৮নং নির্বাসখোলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বেড়ারুপানি গ্রামের ইউপি সদস্য শেখ আয়নাল হোসেন বলেন, উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বায়েজিদ সাহেব সেতু নির্মাণের শুরু থেকে বতর্মান পর্যন্ত পুরোটাই তদারকি করেছেন এবং এই কাজের বর্তমান অবস্থার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনিও সমানভাবে দায়ী।

সেতু নির্মাণের আগে এখানে বাঁশের সাঁকো ছিল, প্রয়োজনে আমাদের আবারও বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে পার হতে হবে। আমরা এলাকার লোকজনের একটা গণস্বাক্ষর ইতিমধ্যেই শুরু করেছি। জনস্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ এই প্রাণঘাতী সেতু ভেঙে পুণরায় নতুন করে পাইল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এবং মজবুত করে সেতুটি নির্মাণের জন্য দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের বহুদিনের প্রাণের দাবিটির প্রতি নজর দেন।

পাশাপাশি সেতু নির্মাণের নামে যারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা করতে চেয়েছে সে বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিনীত প্রার্থনা করছি।

এ ব্যাপারে ঝিকরগাছা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বায়েজিদ’র নিকট মুঠোফোনে সেতুটি নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ফোনে সব কথা বলাত সম্ভব না। সরাসরি সাক্ষাতে আসেন বসে কথা বলবো। এখন আমি ব্যস্ত এবং বাহিরে আছি বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।এর পর থেকে তিনি আর ফোনটি রিসিভ করেননি।

সেতুর মধ্য বরাবর আড়াআড়ি ফাটল দেখে ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কা করেছে এলাকার সর্বশ্রেণির মানুষ। সেতুটি নির্মাণের শুরু থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি ও নানান কারসাজির মধ্যদিয়ে চলতে থাকায় তা পুন:নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানান এলাকাবাসী। 
 

Bootstrap Image Preview