ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে বেকার সমস্যা সমাধানে নিজ উদ্যোগে বাড়ির পাশেই স্বল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় কিছু পুঁজি বিনিয়োগ করে ব্রয়লার মুরগির খামার গড়ে ছিলেন অনেক জন যুবক। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শ ছাড়াই খামারীদের নিকট পরামর্শ নিয়েই এসব খামার গড়ে তুলছেন তারা। এভাবেই গত কয়েক বছরে উপজেলায় খামারের সংখ্যা দাড়িয়েছে অর্ধশতাধিক।
প্রথম এসব ব্রয়লারের খামার প্রতিমাসেই কিছু লাভের মুখ দেখলেও বর্তমানে খাদ্যদ্রব্য, ঔষধ ও বাচ্চার অব্যাহত দাম বৃদ্ধি, উৎপাদিত ব্রয়লারের দাম কম হওয়ায় এখন লোকসান হচ্ছে সেই খামারীদের। ফলে অনেক ব্রয়লার খামারী তাদের স্বপ্নের খামার বন্ধ করে দিয়ে আবারও বেকার হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ এ ব্যবসার সুদিনের আশায় খামারে উৎপাদন কমিয়ে ধরে রেখেছেন ব্যবসার হাল। এমনি এক ব্রয়লার মুরগির খামারী হরিপুর উপজেলার টেংরিয়া ঝারবাড়ি গ্রামের আব্দুল হাকিম। কয়েক বছর ধরে এই ব্যবসা পরিচালনা করছেন তিনি।
তার ভাষ্যমতে, এই এলাকায় কয়েকটি ব্রয়লার মুরগির খামার গড়ে উঠেছে কিন্ত কেউ টিকে রাখতে পারেনি। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা, খাদ্য, ঔষধের দাম অনেক বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং খামারে উৎপাদিত ব্রয়লার দাম কম হওয়ায় এ ব্যবসা নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন তিনি। তবুও ব্রয়লার মুগির উৎপাদন কিছুটা কমিয়ে ভালো বাজারের আশায় ব্যবসাটা টিকিয়ে রেখেছেন তিনি।
ব্রয়লার মুরগি খামারের ব্যবসা কেমন চলছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যবসার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। প্রতি চালানেই লস গুনতে হচ্ছে। আজ থেকে ৫-৭ বছর আগে ব্রয়লার মুরগির খাবার প্রতি ৫০ কেজি ওজনের বস্তার দাম ছিল ১৫-১৮'শ টাকা। এখন সেই খাবারের বস্তার দাম ২ হাজার ২১'শ ৫০ টাকা। ৫-৭ বছর আগে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম ছিল প্রতি পিস ১২-১৫ টাকা বর্তমানে ৩০ টাকা। বেড়েছে ঔষধ ও শ্রমিকের দামও। কিন্ত উৎপাদিত ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়েনি। ৫-৭ বছর আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হয়েছে ২'শ থেকে ২৫০ টাকা আর বর্তমানে ১'শ থেকে ১৫০ টাকা। গত চালানে তাকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা লস গুনতে হয়েছে বলে জানানও জানান তিনি।
লসের পরও খামারে মুরগি উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকবছর ধরে এই ব্যবসা করে আসছি তাই ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে না। তারপরও এই আশায় ব্যবসাটা ধরে রেখেছি যে যদি হট করে ব্রয়লারের দাম বেড়ে যায়।
দুই বছরে ৩ লক্ষ টাকা লসের কারণে ব্রয়লার মুরগির খামার বন্ধ করে দিয়েছেন উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন জনাব। তার সাধের ব্রয়লার মুরগির খামার বর্তমানে খালি পরে আছে।
একই এলাকার উপজেলা তাঁতি লীগের সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, তিন বছরে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা লস খেয়ে ব্রয়লার মুরগির ব্যবসা বন্ধ করেছি গত ১৮ সালে।
উৎপাদন কময়ে ব্রয়লার মুরগির খামার ধরে রেখেছেন উপজেলা চৌরঙ্গী এলাকার কামরুলজ্জামান, হলদিবাড়ির কারিম উদ্দীন।
মালিকরা জানান, তারা সকলেই নিজেদের বেকার সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নিজ খরচে ব্রয়লারের খামার গড়ে তুলছেন। কিন্ত গত বছর থেকে ব্রয়লারের খাদ্য ও বাচ্চার দাম যে হারে বেড়েছে সেই হারে উৎপাদিত ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়েনি। বর্তমানে দ্বিগুন দামে বাচ্চা ও খাবার কিনেও ১০ বছর আগের দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কোন খামারীই এ ব্যবসা ধরে রাখতে পারবে না।
জানা গেছে, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে ৫টি আর অনিবন্ধিত খামার রয়েছে ৪৫টি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ রেজুয়ানুল হক ইতিমধ্যেই অনেক ব্রয়লার মুরগির খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অব্যাহত ব্রয়লারের খাদ্যেরও দাম বৃদ্ধি ও ব্রয়লার মুরগির মাংসের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এতে করে আমাদের করার কিছু নেই। সামনে কোনো প্রকল্প আসলে আমরা খামারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন কৌশল শেখাতে পারবো, পরামর্শ দিতে পারবো কিন্তু ব্রয়লারের খাবারের দাম কমানোর বিষয়ে কিছু করতে পারবো না।