Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘পরিকল্পিত’ হত্যার শিকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:১১ PM
আপডেট: ০৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:১১ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: সংগৃহীত


চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজারে ছাত্রলীগের সাবেক উপশিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক মহিউদ্দিন সোহেলকে গণপিটুনির নামে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সোহেলের পরিবারের সদস্যরা এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তার পরিবারের পক্ষ্য থেকে দাবী করা হয়,স্থানীয় কাউন্সিলর সাবের আহমদ সওদাগর ও জাতীয় পার্টির নেতা ওসমান খান পরিকল্পিতভাবে সোহেলকে গণপিটুনির নামে খুন করেছেন।

এদিকে পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনেও সোহেলের শরীরে ২২টি গভীর ক্ষতচিহ্ন আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব ক্ষতের কারণে দ্রুত রক্তক্ষরণ হয়ে মারা গেছেন সোহেল। তার কপালের বাম পাশে, মাথার ডান পাশে ও পেছনে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের দাগ রয়েছে। ডান কাঁধে, পেটের বাম পাশে, বুকের নিচে, শরীরের পেছনে ও ঊরুতে ১৩টি এবং বাম পায়ে দুটি গভীর ক্ষত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে দা দিয়ে কুপিয়ে বা ছুরিকাঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

ডবলমুরিং থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন বলেন, সাধারণত দেখা যায় গণপিটুনির সময় মানুষ লাঠি দিয়ে পেটায়। কিন্তু কোপানো অথবা ছুরিকাঘাত করাটা পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমরা তদন্ত চালাচ্ছি। কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সোহেলের ছোট ভাই শাকিরুল ইসলাম শিশির অভিযোগ করেন, সাবেক জামায়াত নেতা ও বর্তমানে জাতীয় পার্টির স্থানীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ওসমান খান পাহাড়তলী বাজারে চাঁদাবাজি করেন এবং জুয়া ও মাদকের আসর বসান। তার ভাই সোহেল জুয়ার আসর তুলে দিয়ে সেখানে জানাজার নামাজের জায়গা করে দেন। এটা ওসমান খান ও স্থানীয় সরাইপাড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবের আহমদ মেনে নিতে পারেননি। তাই তারা পরিকল্পিতভাবে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে মহিউদ্দিন সোহেলকে খুন করেছেন। সাবের ও উসমান খান এই খুনের পরিকল্পনা করেন। আমার ভাই কখনো সন্ত্রাসী কিংবা চাঁদাবাজ ছিলেন না। তিনি রেলওয়ের একজন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, নিহত সোহেলের বাবা আবদুল বারেক, মা ফিরোজা বেগম, দুই শিশু সন্তানসহ স্ত্রী নিগার সুলতানা প্রমুখ।

সোহেল হত্যা নিয়ে গণমাধ্যমে যেভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, তার জন্য সাংবাদিকদের দোষারোপ করেন পরিবারের সদস্যরা। শিশির বলেন, হত্যাকা-ের সময় অনেক সাংবাদিক উপস্থিত ছিল। তবু তারা সংবাদ লিখেছেন অপরূপ টিভি নামে একটি অনলাইন দেখে। কোনো সাংবাদিক প্রশ্ন করেননি, যাকে চাঁদাবাজ বলা হচ্ছে, তার নামে কোনো থানায় মামলা আছে কিনা। আর হত্যার পর আমার ভাইয়ের শরীরে ২৬টি ছুরিকাঘাতের দাগ কোথা থেকে এলো? কোনো বিচার বিশ্লেষণ না করেই আমার ভাইকে চাঁদাবাজ বানিয়ে দিলেন সাংবাদিকরা।

পাগাড়তলী রেলওয়ে বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সোমবার সকালে সোহেলের অনুসারীদের সঙ্গে ওসমান খানের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে ওসমান খান মাথায় আঘাত পান। এর পর ওসমান খান ও তার সমর্থকরা পাশের মসজিদ থেকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে লোকজন জড়ো করে সোহেলের ওপর হামলা চালায়। তবে ঘটনার সময় এবং ঘটনার পরও বাজারের পরিস্থিতি দেখতে আসেননি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক সাবের আহমদ সওদাগর।

অভিযোগ প্রসঙ্গে সাবের আহমদ সওদাগর বলেন, মহিউদ্দিন সোহেলের সঙ্গে আমার তুলনা হয় না। সে কি আমার সমতুল্য? আমি পাহাড়তলী বাজারে চাঁদাবাজি করেছি সেটা কেউ কোনোদিন প্রমাণ করতে পারবে না। তা হলে এত বড় ঘটনার পরও বাজারে গেলেন না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ঘাড়ে ব্যথা। তাই বের হইনি। তবে সারাক্ষণ সব খবরই রেখেছি। তিনি ঘটনার জন্য ওসমান খানকে দায়ী করে বলেন, ওসমান নিজেও চাঁদাবাজ। সে বাজারে জুয়ার আসর বসিয়েছিল। আমি সেসব তুলে দিয়েছিলাম। ওসমানই বিএনপি ও তার দলের লোকজন নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

মাথায় আঘাত পাওয়া ওসমান খান বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, সোহেলের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ করি। এ জন্য তারা আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়। এটা দেখে লোকজন ক্ষেপে গিয়ে তার আস্তানায় হামলা চালায়।

Bootstrap Image Preview