Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হত্যার আগে দুই শিশুকে স্ত্রীর লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়েছিলো মোস্তফা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৭:১৩ PM
আপডেট: ০৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৭:১৩ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: সংগৃহীত


রাজধানীতে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে দুই শিশুকে ছাঁদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশ জুরে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়ায়। নিহত শিশু নুসরাত জাহান (৪) ও ফারিয়া আক্তার দোলাকে (৫)ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার রাতে লাশ উদ্ধারের পর যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দ্রুততার সাথে ঘটনার সাথে যুক্ত দুজনকে আটক করে ডেমরা থানা পুলিশ। আটককৃত দুই আসামি হলেন গোলাম মোস্তফা (২৮) ও আজিজুল (৩০)।

বুধবার গ্রেফতারকৃতদের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফরিদ উদ্দিন।

এদিকে দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম আসামিদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ডিসি ফরিদ উদ্দিন বলেন, লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ শিশু নুসরাত ও ফারিয়াকে ঘরে ডেকে নেয় গোলাম মোস্তফা। ভাই আজিজুল বাওয়ানীকে আগেই খবর দিয়ে বাসায় ডেকে আনেন তিনি। ঘরে ডেকে প্রথমে শিশু দুটিকে নিজের স্ত্রীর লিপস্টিক দিয়ে সাজায় মোস্তফা।

এরপর তারা দুই ভাই মিলে ইয়াবাসেবন করে শিশু দুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের চিৎকারে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ফারিয়াকে গলা টিপে হত্যা করে আজিজুল। আর নুসরাতকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে মোস্তফা।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিসি ফরিদ উদ্দিন বলেন, শিশু দুটিকে ঘরে এনে আজিজুল ও মোস্তফা ইয়াবা সেবন করে। এরপর উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দেয়। শিশু দুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে তারা চিৎকার করে। তখন গানের শব্দ আরও বাড়িয়ে দেয়া হয়। এরপরও ব্যর্থ হয়ে তাদের হত্যা করা হয়। হত্যার পর আজিজুল পালিয়ে যায় আর মোস্তফা দুই শিশুর মরদেহ নিয়ে বাসায় থাকে। এক পর্যায়ে সে খাটের নিচে মরদেহ রেখে দেয়।

তিনি বলেন, মোস্তফার স্ত্রী সন্ধ্যার দিকে গার্মেন্টস থেকে বাসায় ফিরলে স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণ দেখতে পান। মেঝেতে শিশুদের স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় স্বামী-স্ত্রীর চিৎকার চেঁচামেচিতে আশপাশের লোকজন টের পায় এবং পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ পৌঁছানোর আগেই মোস্তফা পালিয়ে যায়। মোস্তফা সিরামিকের কারখানায় ও আজিজুল একটি বেকারিতে কাজ করতেন।

ডিসি বলেন, শিশুরা চিৎকার করলেও উচ্চশব্দে গান বাজানোর কারণে বাইরে কেউ শুনতে পায়নি। শিশু দুটি নার্সারিতে পড়ত। স্কুল শেষে এলাকায় দুজন ঘোরাঘুরি করছিল। এ সময় তাদেরকে সাজিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে ডেকে নেয় মোস্তফা।

ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত কি না জানতে চাইলে ফরিদ উদ্দিন বলেন, মোস্তফা ফোন করে আগেই আজিজুলকে বাসায় ডেকে নেয়। তার মানে বোঝা যাচ্ছে এখানে কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছিল। তারা একে অপরের মামাত-ফুফাত ভাই।

তিনি আরও বলেন, এটি বিকৃত মানসিকতা থেকে হচ্ছে। তাছাড়া মাদকাসক্ত এর বড় কারণ। আর যেসব জায়গায় এসব ঘটনা ঘটছে সেখানে অভিভাবকরা একটু কম সচেতন। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ ও আলামত সরবরাহ করে পুলিশ সহায়তা করবে বলেও জানান তিনি।

গত সোমবার রাতে ডেমরার নাসিমা ভিলার মোস্তফার ঘর থেকে দুই শিশু নুসরাত জাহান (৪) ও ফারিয়া আক্তার দোলা (৫) মরদেহ পাওয়া যায়। এদিন দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল তারা। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহত নুসরাতের বাবা পলাশ হাওলাদার বাদী হয়ে এই দুজনের বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

Bootstrap Image Preview