Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মনিপুরী তাঁতবস্ত্র দেশি-বিদেশি পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৩১ PM
আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৩১ PM

bdmorning Image Preview


দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলের নাম এখন সকলেরই জানা। শ্রী আর মঙ্গলে নিহিত অপরূপ সৌন্দর্য্যের  লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল। এখানকার আবহাওয়া, মাটি-পানি-বাতাস, হাওর-নদী, বাগান-বাড়ি আর পাহাড়-টিলায় বেষ্টিত পর্যটন স্পটগুলো ক্রমেই যেন মানুষকে আরো মুগ্ধ করে তুলছে।

শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী লেবু, আনারস আর চায়ের পাশাপাশি এখানে রয়েছে অনেক প্রাকৃতিক, পারিপার্শ্বিক, সামাজিক ও কৃত্রিম সম্পদের সমাহার। এদের মধ্যে অন্যতম একটি আকর্ষণ হচ্ছে মনিপুরী তাঁতবস্ত্র। মনিপুরী তাঁতবস্ত্র আমাদের দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে একটি প্রধান আকর্ষণ।

মনিপুরী নারীদের নিপুণ হাতে গড়া পুরুষ ও মহিলাদের জন্য রকমারী পোষাকগুলো যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিঃসন্দেহ। কাপড়ের আঁচলে গাঁথা আর পরতে পরতে আঁকা রঙ-বেরঙের নকশাগুলো যেন সহসাই মনে করিয়ে দেয় মনিপুরী সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের কথা। তাই শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে এসে এই মনিপুরী তাঁতবস্ত্রের দিকে ঝুকতে হয় যে কাউকেই। আর সেজন্য যেতে হবে মনিপুরী পাড়ায়।মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোণ ইউনিয়নের রামনগর মনিপুরী বস্তিটি এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনায় মূখরিত হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে মনিপুরী পোষাক পরিধান করা পর্যটকদের জন্য একটি ব্যতিক্রমী ফ্যাশন হয়ে উঠেছে। আর তাই প্রতিদিন কয়েকশত পর্যটক তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে পছন্দসই পোষাক কিনতে এখানে আসেন। এখানে রয়েছে দীপা, শর্মিলা, প্রীতি, বর্ণা, থিংগুজাম, মাঙান সহ নামে বেনামে ছোট-বড় প্রায় ১০/১২টি হ্যান্ডিক্রাফটস্ এর দোকান। এ বস্তির প্রতিটি ঘরের নারীরা তাদের ঘরের কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাঁত বুনে তৈরি করে থাকেন রকমারী পোষাক। এ পোষাক পার্শ্ববর্তী দোকানে কিংবা বাড়ির পুরুষরা শহর ও শহরের বাইরের বিভিন্ন দোকানে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করে থাকেন। অনেকে আবার কাপড় বুনে বাড়িতে রেখেই বিক্রি করে থাকেন। পাইকাররা এসব বাড়িতে এসে কাপড় সংগ্রহ করেন।

মনিপুরী তাঁতবস্ত্র সমূহের মধ্যে রয়েছে- থ্রি-পিস, শাড়ি, ওড়না, ফতুয়া, পাঞ্জাবী, চাঁদর, গামছা, শাল, ব্যাগ ইত্যাদি। এর মধ্যে বিভিন্ন ডিজাইন অনুযায়ী থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। শাড়ি ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, পাঞ্জাবী ও ফতোয়া ৩০০ থেকে ৮৫০ টাকা, চাঁদর ৩৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, গামছা ১০০ থেকে ২৫০ টাকা, বিছানার চাঁদর ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, নকশীকাথা ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, মাদুর ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

মনিপুরী বস্তির বাইরেও শ্রীমঙ্গল শহরের স্টেশন রোডের খাতুন সুপার মার্কেটে রয়েছে বিশাল মনিপুরী হ্যান্ডিক্রাপ্ট এর দোকান। পার্শ্ববর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ও মাধবপুরসহ মণিপুরী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও গড়ে উঠেছে মনিপুরী পোষাকের দোকান। এছাড়াও কমলগঞ্জের ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল সড়কে চিত্রাঙ্গদা মনিপুরী মার্কেটসহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন শপিং সেন্টার সমূহে মনিপুরী তাঁতবস্ত্রের সমাহার লক্ষ্য করা যায়।

বিশেষ করে শীতকালে মনিপুরী তাঁতবস্ত্রের চাহিদা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। কারণ শীতে পুরুষ ও মহিলাদের অন্যতম ফ্যাশনেবোল পোষাক হিসেবে মনিপুরী চাঁদর ও শাল দেশ ছেড়ে বিদেশেও সুখ্যাতি অর্জন করেছে। অন্যদিকে ভ্রমন পিপাষুরা ভ্রমনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বেশি ঘুরে বেড়ায় এই শীতকালেই। আর স্থানীয় বাসিন্দাদের চেয়ে অধিক পরিমাণে মনিপুরী পোষাক কিনে থাকেন পর্যটকরাই। তাই বৃহত্তর সিলেটের মণিপুরী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এখন নারী-পুরুষ সকলেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

মনিপুরী পরিবারগুলোর মধ্যে এসময় দিনরাত বিরামহীন প্রতিযোগীতায় চলে তাঁতের কাপড় বুননের কাজ। ঐতিহ্যের ধারায় মনের স্বপ্ন ফুটিয়ে তুলতে যেমন ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন মনিপুরী নারীরা তেমনি ব্যস্ত হয়ে উঠেছে তাঁতগুলোও। তাঁতের প্রতিটি সুতার ফাঁকে যেন লোকিয়ে আছে মনিপুরী জীবনের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।

Bootstrap Image Preview