Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাষ্ট্রপতি থেকে বি চৌধুরীর পদত্যাগের সময় যা ঘটেছিল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:৪৬ PM
আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:৪৬ PM

bdmorning Image Preview


২০০২ সালের জুন মাসে পদত্যাগ করেছিলেন একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীএর আগে ২০০১ সালের নবেম্বরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় আসার পর তাকে রাষ্ট্রপতি করা হয়কিন্তু প্রশ্নটা রয়েই যায় কেন পদত্যাগ করেন তিনি?

বর্তমানে বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার দল বিকল্প ধারা বাংলাদেশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির সাথে যোগ না দেওয়ায় আবারও আলোচনায় উঠেছেন।

রাষ্ট্রপতি থেকে পদত্যাগ কারার পর নানা আলোচনা সমালোচনা হয় তাকে নিয়ে। খবরের কাগজ তার পদত্যাগের আচমকা খবরটির জন্য অনেকেই প্রস্তুত ছিলেন না। সেই সময়ে পত্রিকায় উঠে এসেছিল বড় ‘রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ওপর আস্থা নেই খোদ তার দল বিএনপির সংসদ সদস্যদের’।

ঘটনা শুধু তাই নয়, বিএনপির সংসদীয় দলের যে বৈঠক আগের দিন থেকে শুরু হয়েছিল, সেই বৈঠকে অনেক সংসদ সদস্য দাবী তোলেন যে রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী পদত্যাগ করুন। অন্যথায় তাকে ইমপিচমেন্ট করার হুমকি দেন তারা।

১৯শে জুনের বিএনপি সংসদীয় দলের সভায় উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সভায় নেত্রীর উপস্থিতিতে বিএনপি'র নবীন সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতির ওপর প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকে তাতে সমর্থন দেন, আবার নীরবও থাকেন অনেকে।

সভায় তার ওপর ক্ষোভের বিষয় ছিল মূলত দু'টি:

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে না যাওয়া ছিল একটি কারণ। অন্যটি ছিল জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ না করা।

সভায় বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ আনা হয়- তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার মুন্সিগঞ্জ সফরের সময় তাকে স্বাগত জানিয়ে তোরণ নির্মাণ করেন রাষ্ট্রপতির ছেলে মাহী বি. চৌধুরী। মাহী সেখানকার একটি আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

সংসদীয় দলের সভা চলার সময় রাষ্ট্রপতির ছেলে সংসদ সদস্য মাহী বি. চৌধুরী বৈঠক থেকে বেরিয়ে টেলিফোনে বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে সভার মনোভাব সম্পর্কে জানিয়ে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় মাহী বি. চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়, ‘আব্বা, তোমার পক্ষে কথা বলার কেউ নেই, তোমার পদত্যাগ করাই ভালো।‘

প্রথম আলোর এক খবরে বলা হয়, সংসদীয় দলের সভায় বিএনপির একজন সংসদ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- ‘প্রেসিডেন্টের পুত্র বিরোধীদলীয় নেত্রীর জন্য তোরণ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু আমরা যদি এ ধরণের তোরণ নির্মাণ শুরু করি তাহলে কেমন হবে?’ আর গণমাধ্যমে ওই সভার খবর প্রকাশের পরপরই একটা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে- রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন।

সংসদীয় দলের সভা শেষে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে সর্বসম্মতিক্রমে আহ্বান জানানো হয়। সেদিন তৎকালীন চিফ হুইপ খন্দকার দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে রাষ্ট্রপতিকে বলা হয়েছিল- ১৯ এবং ২০ জুন দলের সভায় বিস্তারিত আলোচনার পরে এই মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, বিএনপি সংসদীয় দল মাননীয় প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ওপরে আস্থা হারিয়েছে বিধায় তাকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এরপর ২১ জুন সব খবরের কাগজে প্রধান শিরোনাম হয় রাষ্ট্রপতি আজ পদত্যাগ করবেন। বি চৌধুরীর পদত্যাগের জন্য যেসব কারণের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার সমাধিতে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদন না করা। রাষ্ট্রপতির বাণীতে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ না করা। বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনাকে মুন্সিগঞ্জে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতির ছেলে এবং সংসদ সদস্য মাহী বি চৌধুরীর তোরণ নির্মাণ। রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন বক্তব্যে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' ব্যবহার না করা, কারণ 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' বিষয়টি বিএনপি রাজনৈতিকভাবে ধারণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফতাব আহমদকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগসংক্রান্ত ফাইল রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর না করা। অধ্যাপক আফতাব আহমদের নাম প্রধানমন্ত্রীর দফতর অনুমোদন করেছিল। রাষ্ট্রপতি সেই ফাইলে স্বাক্ষর না করায় পরবর্তীতে আফতাব আহমদকে বাদ দিয়ে অধ্যাপক জিন্নাতুননেসা তাহমিদা বেগমকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

Bootstrap Image Preview