পোড়া বা দগ্ধ রোগীদের মৃত্যুহার হ্রাসে স্কিন ব্যাংক, হাসপাতালটিতে হেলিকপ্টার অবতরণে হেলিপ্যাডের ব্যবস্থা রাখা এবং দুর্ঘটনায় মানবদেহের কোনো অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে ৬ ঘণ্টার মধ্যে আবার প্রতিস্থাপনে অত্যাধুনিক মাইক্রোবায়োলজি সার্জারি বিভাগ থাকছে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। আগামী ১৮ অক্টোবর হাসপাতালটির উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম জানিয়েছেন, প্রকল্পের অধীন তিনটি বেসমেন্টসহ ১৮ তলা ভবনের অবকাঠামো নির্মাণকাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে চুক্তি ও অন্যান্য কার্যক্রমসহ ৩৩টি প্যাকেজের মধ্যে ২৮টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যার প্রি-শিফটমেন্ট ইনস্পেকশন জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। ইউরোপ থেকে সমুদ্রপথে যন্ত্রপাতি এনে স্থাপন করতে সময় প্রয়োজন। আগামী ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনটি আংশিকভাবে উদ্বোধন করতে পারবেন।
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট প্রকল্পের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন। হাসপাতালের সার্বিক বিষয় সর্ম্পকে তিনি বলেন, এটি হবে বিশ্বের সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ হাসপাতাল। ভবনের বেসমেন্ট ও ফ্লোর বৃদ্ধি পাওয়ায় নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে। এখানে থাকছে অত্যাধুনিক মাইক্রোবায়োলজি সার্জারি বিভাগ। দুর্ঘটনায় মানবদেহের হাত-পা বা কোনো অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে ৬ ঘণ্টার মধ্যে যদি নিয়ে আসা হয় তা হলে সেটি আবার দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে। দূর-দূরান্তের দুর্ঘটনাকবলিতরাও যেন দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছতে পারেন, সে জন্য হাসপাতালটির ছাদে হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়েছে। মাইক্রোবায়োলজি সার্জারি বিভাগ থাকায় দেশের মানুষের অঙ্গহানি কমানো যাবে।
ডা. সামন্ত লাল সেন আরও বলেন, ৪০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীকে বাঁচাতে স্কিন প্রয়োজন হয়। তাদের স্কিন সরবরাহ করতে হাসপাতালটিতে স্কিন ব্যাংক রাখা হচ্ছে। মৃত ব্যক্তির স্কিন সংগ্রহ করে ব্যাংকে রাখা হবে। স্কিন পাওয়া গেলে অনেক রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হবে।
তার দেয়া তথ্যমতে, আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ মানুষ দগ্ধ হন। অথচ দগ্ধদের চিকিৎসাসেবা নিয়ে দেশে কোনো গবেষণা নেই। এ সংক্রান্ত গবেষণা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের জন্মগত রোগ নিয়ে গবেষণার ব্যবস্থা রাখা হবে এ হাসপাতালে। গবেষণার বিষয়ে অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ কিছু দেশের সঙ্গে চুক্তি আছে।
প্রথিতযশা এ চিকিৎসক বলেন, এই হাসপাতালটি হবে সর্বাধুনিক। এখানে চিকিৎসার পাশাপাশি গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষারও ব্যবস্থা থাকবে। এখান থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সারা দেশে চিকিৎসা দিতে পারবেন। ফলে রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রোগীদের ঢাকায় আসতে হবে না।
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় জানুয়ারি ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত। ব্যয় ধরা হয় ৫২২ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। যা পরবর্তীতে সংশোধিত হয়ে ৯১২ কোটি ৭৯ লাখ ৮২ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন চানখাঁরপুল এলাকায় ১ দশমিক ৭৬ একর জমিতে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন