'একটি গণতান্ত্রিক দেশে কারো মতামত ছাড়াই হঠাৎ করে জাতীয় সংসদে নারী আসনের মেয়াদ ২৫ বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণরুপে ব্যাহত করেছেন। পোশাক শিল্প, প্রশাসন সব জায়গাতেই নারীরা নিজের যোগ্যতায় আজ সফল । কিন্তু রাজনীতি পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্য দিয়েই চলছে। রাজনীতির সংষ্কৃতি সংসদের অভ্যন্তরে কেউ কোন কিছু না বলার এই সংস্কৃতি কেন তৈরি হল এই প্রশ্ন আমার সবার কাছে।'
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আজ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে "জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন নয়, নির্বাচন চাই’’ বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এমন বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম।
গোত্র, শ্রেণী, ধর্ম, লিঙ্গভেদে সককলের জন্য রাষ্ট্র কতটুকু সহায় হচ্ছে সেই বিষয়গুলো দেখা প্রয়োজন এবং রাজনীতিতে নারীকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
সভাটি পরিচালনা করেন ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী এবং সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিচালক অ্যাডভোকেসি এন্ড লবি জনা গোস্বামী। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম।
বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'আজকের আলোচনায় রাজনীতিতে নারীদের এই দাবি সমস্ত জাতির অগ্রগতির মূল ভিত্তি। এই দাবিটাকে আদায় করা সমগ্র জাতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। হাজার বছর ধরে যাদের বঞ্চনা করে পিছনে ফেলা হয়েছে তাদের জন্য যদি ইতিবাচক বৈষম্যের সুযোগ না দিয়ে সামনে না আনা হয় তাহলে এই বৈষম্য থেকে যাবে। পিছিয়ে পরা মানুষকে বিশেষ সুবিধা দেয়াটা ক্ষমতায়নের সাথে সম্পর্কিত। নারীদের যার যার অবস্থান থেকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।'
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আক্তার হোসাইন বলেন, 'সংসদে নারীরা কিভাবে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব টিকিয়ে রাখবে তাই মূল বিষয়। বর্তমানে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ খুবই কম, তা কোন গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতির চিত্র হতে পারে না। যে নারী প্রতিনিধিরা সংসদে বসছেন তারা নারীদের ভোটে নয়, জনগণের ভোটে নয় এমনকি রাজনৈতিক দলের ভোটেও নয়, যারা জাতয়ি সংসদে নীতিনির্ধারনী পর্যায় আছেন তাদের ভোটে তারা নির্বাচিত হন, যা কখনো নারীর প্রতিনিধিত্ব হতে পারে না।'
তিনি আরও বলেন, 'আরো ২৫ বছরের জন্য নারীদের এই জায়গাতেই বেড়ি পরিয়ে দেয়া হয়েছে। যে নারীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে সেই নারীদের কখনোই রাজনীতিতে এমন পশ্চাৎপদ অবস্থানে রাখা উচিৎ নয়। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় দেখা যায় নারী বিষয় নিয়ে একটি কথা বলতে গেলে তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয় এবং নারীদের নানাভাবে অমর্যাদাকর বাক্য ব্যবহার করে নির্বাচনের পথে নারীকে বাধাগ্রস্থ করা হয়। যারা নারীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনের সময় বাজে বা কটু কথা ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে আইন করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিৎ।'
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কাস পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, বাসদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ এবং সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সম্পা বসু। তারা সকলে মহিলা পরিষদের এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।