Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান

সালাহ উদ্দিন আকাশ, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধিঃ 
প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৫:৫৫ AM
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৫:৫৫ AM

bdmorning Image Preview


মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য নির্মিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান। উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার প্রায় ছয় হাজার একর ভূমিতে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

ক্যাম্পের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে রোহিঙ্গাসহ স্থানীয় জনগোষ্ঠী নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তায় রোহিঙ্গাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান নির্মাণ করছে সরকার। নতুন নির্মাণাধীন এসব বাসস্থান পুরনো বাসস্থানের চেয়ে দ্বিগুণ টেকসই ও স্বাস্থ্যসম্মত হবে বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্টরা।

রোহিঙ্গা শরণার্থীবিষয়ক সরকারি ও বেসরকারি একাধিক সংস্থার তথ্যানুসারে, শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের বাসস্থান নির্মাণের নিয়ম রয়েছে। শুরুতে রোহিঙ্গাদের ছোট ত্রিপলের অস্থায়ী ঘরে রাখা হলেও বর্তমানে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, একজন শরণার্থীর জন্য ন্যূনতম ৩ দশমিক ৫ বর্গমিটার স্থান প্রয়োজন। তবে এসব মডেল বাসস্থানের দৈর্ঘ্য হবে ১৬ ফুট ও প্রস্থ ১২ ফুট। প্রতিটি বাসস্থানে গড়ে পাঁচজন করে বসবাস করতে পারবে। প্রতিটি বাসস্থানে ভেন্টিলেশন ছাড়াও অধিকতর স্থায়ী জায়গা রাখাসহ কক্ষ ঠাণ্ডা রাখতে বিভিন্ন স্থায়ী উপাদান ব্যবহার করা হবে।

এসব বাসস্থান তৈরির আগে উখিয়ার ২০ নম্বর ক্যাম্পে রেপ্লিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি বাসস্থানে থাকবে তিনটি জানালা। এক বাসস্থান অন্য বাসস্থানের দূরত্ব হবে ৬ থেকে সর্বোচ্চ ১০ ফুট। বাঁশ ও কংক্রিটের পিলার দিয়ে ঘরের মূল কাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত হওয়ায় নির্মাণের পর ন্যূনতম এক বছর এসব ঘর ঝড়-বৃষ্টিসহ যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনীয় হবে।

এদিকে শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের বাসস্থান তৈরির জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সরকার। বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলোর আর্থিক সহযোগিতায় সরকারের রোহিঙ্গা শরণার্থীবিষয়ক একাধিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের নতুন বাসস্থান নির্মাণের কাজ তদারকি করছে। শুরুতে বাঁশ ও ত্রিপলবেষ্টিত ঘরে রোহিঙ্গাদের রাখা হলেও শুষ্ক মৌসুমে আলো-বাতাসের অভাবে অনেক রোহিঙ্গা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ডিপথেরিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন-বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গারা এ দেশে আসার পর তাদের আশ্রয় দেওয়াই ছিল আমাদের প্রথম কাজ। ওই সময় ক্যাম্পগুলোয় যেসব ঘর তৈরি করা হয়েছে, তা অস্থায়ী। স্বল্প স্থানে কোনো রকমে মাথাগোঁজার ঠাঁই দেওয়া হলেও বর্তমানে কিছুটা টেকসই আবাসস্থল নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

আগামী দুটি সাইক্লোন মৌসুমে টিকে থাকতে পারে এমন ঘর নির্মাণের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে দুই লাখের বেশি মডেল ঘর নির্মাণ করে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা হবে।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মিয়ানমার থেকে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার শুরুতে ৮৪ হাজার ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে উখিয়া উপজেলার ছয় হাজার একর বনভূমিতে এসব ঘর নির্মাণের মাধ্যমে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ অব্যাহত থাকায় পরবর্তীতে ২ লাখ ১১ ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।

এ পর্যন্ত ক্যাম্প এলাকায় ১ লাখ ৯০ হাজার ৯২৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নতুন করে মডেল ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্যাম্প এলাকার খালি জায়গায় প্রস্তাবিত মডেল ঘর নির্মাণ করে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের কাজ শুরু করেছে সরকার। বর্তমানে ২০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও আগামী এক বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের মানসম্মত ঘরে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা-বিষয়ক সরকারি কর্মকর্তারা।

বেসরকারি সংস্থা কারিতাসের আঞ্চলিক সমন্বয়ক পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ফায়ার ডিসট্যান্স ৬-১০ ফুটের দূরত্ব দরকার। আমরা বিভিন্ন সংস্থার অধীনে ১০টি ডেমু শেল্টার, ৪৬১টি ট্রানজিশনাল শেল্টার ও ৮০টি মিডটার্ম শেল্টার নির্মাণ করেছি। অন্যান্য সংস্থাও আমাদের মতো স্বাস্থ্যসম্মত ঘর নির্মাণে কাজ করছে। এসব ঘর নির্মাণে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব ঘর কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হবে। কোনো ধরনের সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় হলেও ঘরের মূল অবকাঠামো ঠিক থাকবে। ফলে রোহিঙ্গাদের অন্তত বাসস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হবে।

Bootstrap Image Preview