সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার বারইগ্রাম-আছিরগঞ্জ সড়কের মাত্র চার কিলোমিটার সড়ক কাঁচা থাকায় সাতটি গ্রামের মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। এ সড়কের কাঁচা অংশে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দুইটি ব্যয়বহুল সেতু নির্মাণ করলেও সড়ক পাকা না হওয়ায় এর সুফল পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। সড়কের কারণে সামাজিক সম্পৃতি পড়েছে ঝুঁকি মূখে। এ সড়কটি পুরোটা পাকা হলে গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ আরও সহজতর হবে।
এ সড়ক ব্যবহারকারি ৮ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ বিকল্প সড়ক দিয়ে বিয়ানীবাজার , গোলাপগঞ্জ ও বড়লেখা উপজেলায় যাতায়াত করছেন। এতে সময় ব্যয়ের পাশাপাশি তারা নিত্য দুর্ভোগ পড়ছেন। এছাড়া সড়কটি দিয়ে আছিরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, দাসউরা আলিম মাদ্রাসা, দাসউরা দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ও আশপাশ কয়েকটি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। পাশাপাশি এলাকার কৃষকরা এ সড়কটি দিয়ে ভ্যানসহ অন্য যানবাহনযোগে তাদের কৃষি পণ্য ঘরে তোলে। অথচ মাত্র ওই চার কিলোমিটার সড়ক পাকা না করায় সাধারণ জনগণের পাশাপাশি মুমূর্ষু রোগী ও শিক্ষার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভুক্তভোগী গ্রামবাসী ওই চার কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বারইগ্রাম-আছিরগঞ্জ সড়কের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ৬ কিলোমিটার পাকাকরণ করা হলেও প্রায় মধ্য অংশ এখনো কাঁচা রয়েছে। বন্যা ও অতি বৃষ্টিতে কাঁচা সড়কের অবস্থাটি বর্তমানে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এলাকাবাসী কাদাযুক্ত সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন। সড়কের বারইগ্রাম এলাকা থেকে পীরেরচক এলাকা পর্যন্ত পাকা রয়েছে, মধ্যভাগের চার কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পেরিয়ে দেবারই এলাকা থেকে আছিরগঞ্জ বাজার পর্যন্ত সড়ক পাকা রয়েছে। চার কিলোমিটার কাঁচা সড়কের কারণে বিপাকে পড়েছেন তিলপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম দাসউরার পীরেরচক, দেবারাই, মাটিজুরা, ইসলামপুর টুকা, বরাউট, খাগাইল এলাকার বাসিন্দারা। এ সড়কটি পাকা হলে গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা উপজেলার বাসিন্দারের সড়ক যোগাযোগ আরো সহজতর হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জনদুর্ভোগ লাগবে ওই রাস্তার কুশিটিকি খালের উপর প্রায় ৮ বছর আগে ৫১ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি চলাচল উপযোগী না হওয়ায় সেতু কাজে আসছে না। এছাড়া বর্ষাকালে সেতুর এ্যাপ্রোচ সড়কের মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। বন্যার পানিতে রাস্তাটির অনেক অংশ ডুবে যাওয়ার কথা জানান এলাকাবাসী।
পীরের চক এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন (৪৫) বলেন, ‘বর্ষায় সড়কের উপর কুশিটিকি ব্রিজের দুই সাইডের (পাশের) মাটি সরে যায়। যার কারণে গাড়ি উঠতে পারে না। আমরা স্থানীয় এলাকাবাসী মিলে ব্রিজের গোড়ায় ও রাস্তার পাশে মাটি দিয়েছি।’
স্থানীয় গৃহিণী হাসনা বেগম (৪৫) অভিযোগ, ‘রাস্তা ঠিক না হওয়ায় ছেলেমেয়েদের বিবাহ দেওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দাবি, এই রাস্তাটি দ্রুত উঁচু ও পাকা করা হোক।’
তিলপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের ৪ কিলোমিটার মাটি ভরাট ও পাকাকরণ কাজ হলে এ অঞ্চলের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবে। সড়কটির ওপর কুশিটিকি খালে ৫১ মিটার গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে ৮ বছর আগে; কিন্তু রাস্তার কারণে ব্রিজটি অকেজো বলা চলে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এ রাস্তায় মাটি ভরাট ও পাকাকরণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হলেও এখনো কোন ফল পাচ্ছিনা।’
এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রকৌশলী রমেন্দ্র হোম চৌধুরী বলেন, ‘জনদুর্ভোগ লাঘবে এ রাস্তাটির কাজের একটি প্রাক্কলন স্থানীয় সরকারের এলজিইডি বিভাগের সিলেট অফিসে পাঠানো হয়েছে। রাস্তার প্রাক্কলন অনুমোদিত হলে টেন্ডারের মাধ্যমে অচিরেই এ সড়কের মাটি ভরাট ও পাকাকরণ কাজ শুরু করা হবে।’