Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কিংবদন্তি পরিচালকের মরদেহ দেশে আনা নিয়ে ভোগান্তি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:৩৬ PM
আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:৩৬ PM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী এবং লেখক আমজাদ হোসেন গত শুক্রবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর প্রায় ৪ দিন হয়ে গেছে তারপরও এখন পর্যন্ত তার মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারছেন না পরিবার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ব্যাংককে আমজাদ হোসেনের সঙ্গে রয়েছেন ছোট ছেলে সোহেল আরমান। গত সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু বাবার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি সঠিকভাবে কিছুই জানাতে পারেননি। তবে সোহেল আরমান শুধু বলেন, ‘বাবার মরদেহ দেশে নেওয়ার জন্য সব প্রক্রিয়া চলছে।’

আমাজাদ হোসেন ঢাকার পর ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে টানা ১৬ দিন চিকিৎসার পর গত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। পরদিন  সোহেল আরমান ব্যাংকক থেকে জানান, সাপ্তাহিক ছুটির কারণে প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম বন্ধ আছে। তাই প্রশাসনিক কার্যক্রম শেষ করে বাবার মরদেহ নিয়ে সোমবার সকালে ঢাকায় ফিরতে পারবেন। কিন্তু আজ সন্ধ্যায় আবার জানালেন ভিন্ন কথা।

সোহেল আরমান বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রায় সব শেষ। বাবার চিকিৎসার ব্যাপারে ব্যাংককের বাংলাদেশ দূতাবাস যুক্ত আছে, তাই দূতাবাস থেকে হাসপাতালের বিল পরিশোধের নিশ্চয়তাসংক্রান্ত কাগজটি দিলেই বাবাকে নিয়ে রওনা করতে পারব। কিন্তু দূতাবাস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সেই ধরনের কোনো কাগজ এখনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়নি, তাই দেরি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়, আমজাদ হোসেনের বকেয়া বিলের দায়িত্ব সরকার নিয়েছে, তাহলে কিন্তু আর কোনো কথা থাকবে না। বাংলাদেশ দূতাবাস বাবার মরদেহ দেশে পাঠাবে, এটা তো তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমি জেনেছি, বাবার চিকিৎসার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীই নিয়েছেন।’

বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগেই উন্নত চিকিৎসার জন্য বরেণ্য পরিচালক আমজাদ হোসেনকে ২৭ নভেম্বর রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর সে সময় আমজাদ হোসেনের পরিবারের হাতে প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার খরচ বাবদ ৪২ লাখ (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ২২ লাখ ও চিকিৎসায় ২০ লাখ) টাকা অনুদান করেন। তবে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অনুদানের বাইরেও এই ১৬ দিনে আমজাদ হোসেনের চিকিৎসা বাবদ বাংলাদেশি টাকায় খরচ হয়েছে প্রায় ৬১ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমজাদ হোসেনের মরদেহ দেশে আনার বিষয়টি নিয়ে আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আশা করছি কাল মঙ্গলবার হয়ে যাবে। যদি সেটি সম্ভব হয়, তাহলে আগামীকাল মঙ্গলবার রাতেই তার মরদেহ দেশে নিয়ে আসা হবে।’

গত ১৮ নভেম্বর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমজাদ হোসেনকে। হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন তিনি। শুরু থেকেই তাঁকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। ভর্তির তিন দিনের মাথায়  বরেণ্য এই নির্মাতার শারীরিক অসুস্থতার খবর শুনে হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তার উন্নত

চিকিৎসার খরচ বাবদ ২০ লাখ টাকা এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বাবদ ২২ লাখ টাকা পরিবারের হাতে তুলে দেন তিনি।

পরিচালক আমজাদ হোসেনের জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, বড় বাড়ির মেয়ে, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’, ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ইত্যাদি।

১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন আমজাদ হোসেন। এছাড়া তিনি আরও ১৪ বার জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার তিনি পেয়েছেন।

 

Bootstrap Image Preview