নাম মোঃ রাজিব (১৯)। পেশায় পত্রিকা বিক্রেতা। পারিবারিক অভাবের তাড়নায় পড়ালেখার ইতি ঘটে তার। পাঁচ ভাইবোন ও বাবা-মা কে নিয়ে বসবাস করেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর ২নং ওয়ার্ডে। সাত সদস্যের এই অভাবের সংসার চলে তার পত্রিকা বিক্রির মাধ্যমে।
হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় রাজিবের অভাবের সংসারে নেমে আসে ঘোর আন্ধকার। বন্ধ হয়ে যায় পত্রিকা বিক্রি। গত ৪ নভেম্বর বেলা ১২টায় চরফ্যাসন বাস টার্মিনাল থেকে পৌরশহরের উদ্দেশ্যে পত্রিকা নিয়ে আসার পথে হ্যালিপ্যাড নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ডান রানের হাড় ভেঙে যায় তার।
উন্নত চিকিৎসা নিতে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান রাজিব কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে না পারায় অসুস্থ্যতা নিয়ে ফিরে আসেন কর্মস্থলে।
কাঁথা-বালিশ জড়িয়ে রিকশা চড়ে শহরের থানা রোডে পত্রিকা বিক্রি করতে দেখা যায় পত্রিকা বিক্রেতা রাজিবকে। কথা হয় তার (রাজিব) সঙ্গে।
রিকশা চড়ে পত্রিকা বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলে, রানের হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে হাটা-চলা করতে পারি না। গত একমাস ধরে পত্রিকা বিক্রি করতে পারি নি। পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে রিকশা ভাড়া করে পত্রিকা বিক্রি করি। দৈনিক যা আয় হয় তা রিকশা ভাড়া দিয়েই শেষ হয়ে যায়। আমি সুস্থ্য হয়ে পত্রিকা বিক্রি করতে চাই। তাই সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য চাই।
জানা গেছে, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে চরফ্যাশন পৌরশহরের অলিগলিতে পত্রিকা বিক্রি করে পাঠকদের মনে স্থান করে নিয়েছে সে (রাজিব)। তার পিতা নূরে আলম মিয়া পেশায় একজন ক্ষেতমজুর। বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই পরিবারটির। তাই টাকার অভাবে অসুস্থ্য ছেলের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না নূরে আলম মিয়া।
রাজিবের পিতা নূরে আলম মিয়া বলেন, আমি অসহায়। অন্যের ক্ষেতখামারে কাজ করে যা পাই তা দিয়ে পরিবারের সবার জন্য আহার জোগার করার চেষ্টা করি। কোনোদিন তিন বেলা সবার মুখের আহার জোটাতে পারি, কোনদিন তাও পারি না। ছেলের চিকিৎসা করার সাধ্য আমার নাই। চোখের সামনে ছেলেটা ধুকে ধুকে মরছে। আর সহ্য করতে পারছি না। দেশে এত মানুষ, কেউ যদি গরিবের দুঃখটা বুঝতো। তাহলে হয়তো সবাই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতো।