Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মাটির তৈরি জিনিসপত্র এখন শুধুই স্মৃতি!

ইলিয়াস হোসেন, পাটকেলঘাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৫১ PM
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৫১ PM

bdmorning Image Preview


আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাটকেলঘাটায় হারিয়ে যেতে বসেছে নিপুণ হাতের তৈরি মৃৎশিল্পের (মাটির তৈরি) তৈজসপত্র। মৃৎশিল্প। কালের বিবর্তনে মাটির তৈরি অনেক জিনিসপত্র বিলীন হয়ে গেছে। এক সময়ে মাটির জিনিসপত্র তৈরিতে কুমার পাড়ায় মৃৎশিল্পীরা সারাক্ষণ ব্যস্ত সময় কাটাত।

এখন আধুনিক যুগে কাঁচ, সিলভার, এ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক অথবা মেলামাইনের তৈজসপত্র বাজারে ভরপুর থাকায় মাটির তৈরি জিনিসপত্র হারিয়ে যেতে বসেছে। হাঁড়ি-পাতিল, ডাবর-মটকি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু যেমন মাটির ব্যাংক, শো-পিস, গহনা, কলস, ফুলের টব, ফুলদানি, ঢাকনা, পিঠা তৈরির ছাঁচসহ নানা রকম খেলনা তৈরি করেন মৃৎশিল্পীরা। পুরানো ঐতিহ্য ধরে রাখতে অনেক সৌখিন পরিবারের বাসা-বাড়িতে মাটির তৈরি ফুলের টপ শোভা পাচ্ছে। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন সভ্যতায় মৃৎশিল্প মর্যাদা লাভ করেছে। আজ সে গৌরব ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।

আধুনিকতার ভিড়ে মৃৎশিল্প আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনে আনতে হাটবাজারে ছুটে যেত লোকজন। কিন্তু এখন আর মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনতে হাটে ছুটে যেতে কাউকে দেখা যায় না। হাটের নদীর ঘাটে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বোঝাই নৌকাও এখন আর ভিড়ানো থাকে না। 

পাটকেলঘাটা থানাসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক পরিবারে মাটির তৈরি দু’একটা খেলনা ছাড়া আর কোন তৈজসপত্র খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা তাও সন্দেহ রয়েছে। অনেকের কাছে মাটির তৈরি জিনিসপত্র এখন শুধুই স্মৃতি। গ্রামবাংলায় ধান কাটার মৌসুমে এ শিল্পে জড়িত কুমারদের আনাগোনা বেড়ে যেত। সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে মাটির হাঁড়ি-পাতিল বোঝাই ভার নিয়ে বিক্রেতারা দলে দলে ছুটে চলত গ্রামগঞ্জে। রান্না ও বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন রকমের হাঁড়ি-পাতিল, সরা, গামলা, থালা, যাঁতা, দোনা, ভাক্কুন, ঝাঁজর, মটকি, গরুর খাবার দেয়ার চাড়ি, কোলকি, কড়াই, কুয়ার পাট, মাটির ব্যাংক, শিশুদের জন্য রকমারি নকশার পুতুল, খেলনা ও মাটির তৈরি পশুপাখি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ছুটে যেত।

অনেক সময় ধান, গম, মসুর, বুট, ছোলাসহ নানা উৎপাদিত পণ্য দিয়েও গৃহবধূরা মাটির তৈরি জিনিসপত্র সংগ্রহ করত। মাটির তৈরি জিনিসপত্র গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। এক সময়ে মাটির তৈরি জিনিসপত্র ছাড়া সংসার জীবনে চলাই মুশকিল হয়ে দাঁড়াত। মনের আনন্দে গ্রামবাংলার গৃহবধূসহ সব বয়সী নারী-পুরুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

পাটকেলঘাটার পারকুমিরা কুমোর পাড়ার সঞ্জয় পাল (৩৮) ও মৃত্যুণজয় পাল (৪২) জানান, বাজারে প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন, সিলভার, এমনকি লোহার তৈরি সামগ্রীর সহজলভ্যতা, কম দামের কারণে মানুষ মৃৎশিল্প (কুমার শিল্প) ব্যবহারে অনীহা দেখায়। ফলে শিল্পীরা তাদের উৎপাদনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে।

এছাড়া মৃৎশিল্পের কারিগর কার্ত্তিক পাল ও উত্তম পাল বলেন, এ  পেশায় আয় কম। হয়তো সরকার সহযোগিতা করলে একটু ভালো থাকতে পারতাম।

মৃৎশিল্পী (কুমার শিল্প) বৃন্ধ বীরেন্দ্রনাথ পাল (৭০) বলেন, এ ব্যবসায় এখন আর সংসার চলে না। যা আয় হয় তা দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে সংসার চালাতে হয়। বাপ-ঠাকুরদার পেশা ছাড়তে পারছি না। তাই এ শিল্প নিয়েই পড়ে আছি। 

তিনি আরো বলেন, অনেকে পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ করতে শুরু করেছে। আগে মানুষ মাটির হাঁড়ি-পাতিল, কলসী, টালী ইত্যাদি ব্যবহার করতো। বাজারে প্লাস্টিক সহজলভ্য হওয়ায় মাটির তৈজসপত্রের চাহিদা কমে গেছে।

Bootstrap Image Preview