পৃষ্ঠপোষকতা, অর্থ সংকটসহ প্লাষ্টিক ও মেলামাইন শিল্পের প্রসারে অস্তিত্ব সংকটে পটুয়াখালীর বাউফলের ঐতিহ্যবাহি মৃৎশিল্প। নানা দৈন্যতায় বেকার হয়ে পড়েছে এ শিল্পের অনেক কারিগর। সুদ মুক্ত দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ এবং সহজলভ্য কাঁচা মাল পেলে রপ্তানিমুখী এ শিল্পটি আবারো ফিরে পাবে হারানো গৌরব। এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নের পাল পাড়া গ্রাম। এখানে ছিল শতাধিক মৃৎশিল্পী পরিবার। দিন-রাত কাজ করতো হাজারো কারিগর। বর্তমানে ৩৫ পরিবার কোন মতে টিকিয়ে রেখেছে পূর্ব পুরুষদের পেশা। এখানকার পণ্য আড়ং, পল্লী জুটারর্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি হলেও বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। প্লাষ্টিক এবং মেলামাইনের পণ্যের প্রসারে দেশের বাজারেও চলছে কোন রকমে।
শ্রমিকদের মজুরি, মাটি ও কাঠের দাম বাড়লেও পণ্য মূল্য না বাড়ায় এ পেশায় টিকে থাকা কঠিন বলে জানান এ পেশার শিল্পীরা। অনেকেই বাপ দাদার পেশায় টিকতে না পেরে অন্য পেশায় চলে গেছেন। পটারী শিল্পী খুকু রানী পাল বলেন, সামনের বৈশাখে অাবারও বাড়বে শ্রমিকদের মজুরি, মাটি ও কাঠের দাম। কিন্তু তুলনামূলকভাবে বাড়বেনা পণ্যের দাম। তাই এ পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে।
কলাপাড়ার মৃৎশিল্প বিক্রেতা নরেন পাল বলেন, মোকামে মালের দাম বেড়ে গেছে। পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। সহজেই ভেঙে যেতে পারে বলে এখন অনেকেই প্লাস্টিক, ম্যালামাইন, এ্যালমুনয়িাম সামগ্রী ক্রয় করছেন। তাই ক্রেতাও কমে গেছে। আগের মত আর বেচা বিক্রি হয়না। শংকর পাল জানান, এক সময় যেমন ক্রেতা ছিল তেমনি লাখ ছিল। এখন ক্রেতা কম, লাভ কম। কিন্তু খরচ বেশি।
মৃৎশিল্পী জানকী পাল বলেনন, এ পেশায় যারা রয়েছে তাদের ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা। সুদ মুক্ত কিংবা বিনা সুদের লোন। অাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং যুগপোযোগী প্রশিক্ষণ।
সনাতন কাজের চাহিদা কমে আসায় এ পেশার অনেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেছেন আধুনিক পটারী তৈরির কাজ। পুরুষদের কাজে সাহায্য করতে গিয়ে এখানকার অনেক নারীই হয়ে উঠেছেন নকশার দক্ষ কারিগর। তাদের পথ অনুসরণ করে এলাকার অনেক নারীই এখন স্বাবলম্বী। এ পেশায় যুক্ত থেকে খুঁজে নিয়েছেন নিজেদের জীবন ও জীবিকা। পরিবাবের ভরণ পোষণ ছাড়াও শিক্ষিত করে তুলছেন ছেলে মেয়েদের।
পটুয়াখালী বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কাজী তোফাজ্জেল হক জানান, বিসিকের ডিজাইন সেন্টার থেকে এই পেশার শিল্পীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্পের আওতায় ঋনের সুবিধা রয়েছে।