Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দেশে মিলিয়ন ডলার আনবে কওমি মাদরাসার ছাত্ররা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৩৫ PM
আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৩৫ PM

bdmorning Image Preview


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১১ এপ্রিল ‘দাওরায়ে হাদিস’ পরীক্ষাকে মাস্টার্স সমমানের মর্যাদা দেয়ার ঘোষণা দেন। এরপর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এরপর চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ শিক্ষা সনদ দাওরায়ে হাদিসকে আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স সমমান স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে বিল পাস হয়। আর কওমি মাদরাসার সনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ।

কিন্তু এই সনদের স্বীকৃতির ফলে কওমি মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা কী কী সুবিধা তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

এ ব্যাপারে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ বলেন, অভিভাবকসহ হিসেব করলে কোটি মানুষ কওমি মাদরাসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারার বাইরে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই স্বীকৃতির ফলে তারা যেমন সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পেল তেমনি দেশও উপকৃত হয়েছে। তবে প্রতি শিক্ষা মাধ্যমে ধাপে ধাপে শেষ করে সর্বোচ্চ শিক্ষা সনদ দেয়া হয়। কিন্তু কওমি শিক্ষায় কেন নিচের স্তরে কোনও সনদের ব্যবস্থা না করে একবারে সর্বোচ্চ সনদের স্বীকৃতি দেয়া হলো?

তিনি মনে করেন, এই সনদ সরকারি স্বীকৃতি লাভের ফলে দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী শিক্ষিত সমাজ হিসেবে সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পেল। এছাড়া তারা বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। শুধু তাই নয় এখন তারা দেশের রেমিটেন্সেও বিশাল অবদান রাখবে। তাদের নিয়ে এখন সেই পরিকল্পনাই করা হচ্ছে। এছাড়া কওমি মাদরাসায় কারিগরি শিক্ষা চালু করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় একটি চুক্তিও হয়েছে।

কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ব্যাপারে ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ আরও বলেন, কওমি মাদরাসার ছাত্ররা যোগ্যতায় অন্যান্যদের থেকে এগিয়ে আছে এটি সবাই স্বীকার করে। যে বিষয়ের উপর যার দক্ষতা তাকে সে বিষয়েই প্রতিযোগিতা করতে হবে। যদি কেউ বিজ্ঞান পড়ে আরবিতে প্রতিযোগিতা করতে যায় তাহলে যেমন টিকতে পারবে না, তেমনি আরবি পড়ে বিজ্ঞানের প্রতিযোগিতাও সে টিকতে পারবে না।

কওমি মাদরাসার সদনের স্বীকৃতি দাবি আদায়ের আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত মুফতি ফয়জুল্লাহ।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, এসএসসি, এইচএসসি পর যেমন অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে যায়। তারা সেই সনদ দিয়ে জীবনের প্রয়োজনে কর্মক্ষেত্রে ঢুকে পড়ে। তেমনি যদি অন্যান্য কোনো ধাপে কওমি মাদরাসায় স্বীকৃতি থাকে, আর শিক্ষার্থী ঝরে যায় তাহলে পূর্ণ আলেম হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে অনেকে। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে মুরব্বিরা পরিকল্পনা করবেন।

মুফতি ইহ্তিশামুল হক নোমান বলেন, সাধারণত নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই বেশি কওমি মাদরাসায় লেখাপড়া করে। কিন্তু সরকারি স্বীকৃতির ফলে এখন সব ধরনের পরিবার থেকেই ছাত্র-ছাত্রী বাড়বে।

তবে শিক্ষা উন্নয়ন বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধু্রী মনে করেন, তিনটি কারণে অভিভাবকরা সন্তানদের কওমি মাদরাসায় দিয়ে থাকেন। এক. দারিদ্রতা। অর্থাৎ এই মাধ্যমে লেখা পড়ার কোনও খরচ দিতে হয় না। দুই. অনেকেই মনে করেন সন্তান ধর্মীও ভাবধারায় মানুষ হবে। সেই ইচ্ছা থেকেই অনেকে মাদরাসায় দিয়ে থাকেন। আর তিন নম্বর হচ্ছে, সব ধরনের পরিবারেই দেখা যায় তারা বলে থাকেন যে, আমার তিনটি সন্তান থাকলে অন্তত একটি সন্তানকে মাদরাসায় পড়াবো। মাদরাসায় লেখাপড়ার পেছনে পরিবারের এসব মানসিকতার প্রমাণ পাওয়া যায়।

কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের তথ্য মতে, ২০১৩ সালে তাদের শিক্ষার্থী ছিল ৫৫ হাজার। ২০১৪ সালে ৬৩ হাজার, ২০১৫ সালে ৭৪ হাজার, ২০১৬ সালে ৮৬ হাজার, ২০১৭ সালে ১ লাখ ৫ হাজার ও২০১৮ সালে ১ লাখ ২১ হাজার। অর্থাৎ গত ৬ বছরে এই মাধ্যমে ছাত্র বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। এছাড়া আরও পাঁচটি কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। যেখানে আরও কয়েক লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।

এছাড়া বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এর সবশেষ ২০১৫ সালের জরিপ তথ্য মতে দেশে কওমি মাদরাসা আছে ১৩ হাজার ৯০২টি। যার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। তবে বেসরকারি হিসেব মতে দেশে কওমি মাদরাসার সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি।

প্রসঙ্গত, স্বীকৃতির দাবিতে কওমি আলেমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। আল্লামা শাহ আহমদ শফী ওই কমিশনের চেয়ারম্যান মনোনীত হন। কমিশন এক বছর ধরে আলোচনা, পর্যালোচনা ও জনমত যাচাই করে পরের বছর সরকারের কাছে একটি রিপোর্ট দাখিল করে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার আগের খসড়া আইনটি বাতিল করে স্বকীয়তা অক্ষুণ্ন রেখে একটি গ্রহণযোগ্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। এরপরই ওই কমিশন বিলুপ্ত হয়। এছাড়া আগের কমিটিতে সরকারের মনোনীত দুই কর্মকর্তাকে রাখা হয়।

২০১২ সালে সরকারের কাছে জমা দেয়া কওমি মাদরাসা শিক্ষানীতিতে কওমির প্রাথমিক থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সব স্তরের স্বীকৃতির সুপারিশ করা হয়েছিল। সরকারেরও পরিকল্পনা তেমনটি ছিল। কিন্তু হেফাজতে ইসলামসহ কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক একটি অংশের আপত্তির কারণে তা হয়নি।

কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রথম খসড়ায় দারুল উলুম দেওবন্দের আটটি ভিত্তি সংযোজনের দাবি করে, সরকারি কর্মকর্তা না রেখে এর কর্তৃপক্ষ গঠনের বিরোধিতা এবং বেফাক থেকে চেয়ারম্যানসহ একাধিক সদস্য রাখার দাবি করে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বাধীন বেফাক। তবে বেফাকের বাইরে থাকা অন্যান্য কওমি মাদরাসার নেতারা এ সরকারের আমলে দ্রুত আইনটি বাস্তবায়নের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করে ঐক্যবদ্ধ হন। পরবর্তীতে হেফাজতে ইসলামের দাবির পূর্ণতা দিয়ে চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করে সরকার।

Bootstrap Image Preview