Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ শনিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘সুইসাইড নোট’: আভিজাত্যের আড়ালে জ্যোতিকে নির্যাতনের লোমহর্ষক তথ্য

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:২০ PM
আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:২০ PM

bdmorning Image Preview


নীলফামারীর সৈয়দপুরে মৃত্যু আগে গৃহবধূ জ্যোতি আগারওয়ালের ডায়েরিতে লেখা ২ পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচনার ঝড় উঠেছে সারা দেশে। জ্যোতি তার সুইসাইড নোটে আভিজাত্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।

ডায়েরিতে লেখা দুই পৃষ্ঠার ওই সুইসাইড নোটে জ্যোতি তার মৃত্যুর জন্য চারজনকে দায়ী করে তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন: স্বামী সুমিত কুমার, শাশুড়ি উমা দেবী, দেবর অমিত কুমার ও জা ডা. অমৃতা কুমারী। এ ক্ষেত্রে তার দুই সন্তান একেবারে নির্দোষ বলেও তুলে ধরেন জ্যোতি।

ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী সেই গৃহবধূ জ্যোতি আগারওয়াল রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তবে মৃত্যুর পরপরই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন গা ঢাকা দিয়েছেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সৈয়দপুরে শহীদ বদিউজ্জামান সড়ক এলাকায় ভাড়া বাড়িতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে গুরুতর অসুস্থ হন জ্যোতি। এরপরই তাকে রমেকে ভর্তি করা হয়।

জ্যোতি আগারওয়াল সৈয়দপুর শহরের ব্যবসায়ী সুমিত কুমার আগারওয়াল নিক্কির স্ত্রী। তবে তারা শহীদ বদিউজ্জামান সড়ক এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। জ্যোতি আগারওয়ালের বাবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ।

স্বামী সুমিত কুমার আগারওয়াল নিক্কি সৈয়দপুর উপজেলা হিন্দু কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি। তিনি শিল্পপতি সুশীল কুমার আগারওয়ালার বড় ছেলে।

জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে দুই পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখে তার ছবি তুলে সৈয়দপুর হিন্দু কমিউনিটির ব্যক্তিদের কাছে মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন জ্যোতি। কিন্তু কেউই তার ওপর পারিবারিক অত্যাচারের বিষয়ে সুরাহা করতে এগিয়ে না আসায় গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে না নিয়ে পারিবারিকভাবে চিকিৎসা করাতে থাকেন নিক্কির ছোট ভাই অমিত কুমার আগারওয়ালের স্ত্রী ডা. অমৃতা কুমারী আগারওয়াল। এতে তার অবস্থার আরও অবনতি হয়।

পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জ্যোতি আগারওয়ালকে। তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে রমেকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থেকে রোববার মারা যান জ্যোতি।

দুই পৃষ্ঠার সুইসাইড নোটে জ্যোতি লিখেছেন, আমার বিয়ে হয়েছে ২০০১ সালের ১২ ডিসেম্বর। বিয়ের পর থেকেই শাশুড়ি ও স্বামী-দেবর মানসিক নির্যাতন করছেন। দেবরের বিয়ের পর জা অমৃতাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে অত্যাচার চালিয়ে আসছেন। এরা আমাকে চারবার মেরে ফেলার চেষ্টাও করেছেন। বেঁচে আছি সেটা আমার ভাগ্য।

আমাকে সাজিয়ে মিথ্যে বলে আমার গহনা ও জমানো টাকা নিয়েছেন তারা। ফেরত দেবে বলে আজও দেননি; বরং টাকা ও গহনার কথা বললেই অত্যাচারের মাত্রা বাড়ায়। গায়েও হাত তুলেছে সবাই মিলে। আমার মা-বাবা নেই। ভাই-বোনদের জন্য বেঁচে ছিলাম। কে জানত ওরা আমাকে মেরে ফেলবে? তাহলে তো ভাই-বোনরা ছেড়ে দিত না।

শাশুড়ি উমা দেবী আমাকে কখনো দেখতে পারেননি, ভালোও বাসেননি। আমার সংসার ভাঙার পেছনেও তার হাত রয়েছে। তিনি উল্টাপাল্টা বলে তার ছেলে সুমিতের কান ভরতেন। এমনকি আমার বাচ্চা দুটোকেও এরা ভয় দেখিয়ে রাখেন। এ কারণে তারা কিছু বলতে পারে না। বাচ্চাদের রক্ষার জন্যও আকুতি জানিয়েছেন জ্যোতি।

জ্যোতি আরও লিখেছেন, ‘মানুষ মৃত্যুর সময় কখনো মিথ্যে বলে না। বিশ্বাস না হলে কাজের লোক ও পাড়া-প্রতিবেশীদের জিজ্ঞেস করে দেখবেন। আমার শাশুড়ি অনেক অত্যাচার করেছে। ২১ বছর ধরে আমি শুধু কাঁদছি। এরা কখনোই সুখের দিন দেখতে দেয়নি। আমার মৃত্যুর বিচার চাই।’

তবে শনিবার জ্যোতির স্বামী সুমিত কুমার আগারওয়াল নিক্কি মোবাইল ফোনে বলেন, ‘সুইসাইড নোট বলে যে উড়ো চিঠির কথা প্রচার করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। কারণ, এটি আমার স্ত্রীর লেখা নয়। তার হাতের লেখার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। কীভাবে প্রমাণ করবেন যে চিঠিটা জ্যোতি লিখেছে?’

এদিকে জ্যোতির মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারের সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। রোববারও স্বামী সুমিত কুমার ও জা ডা. অমৃতা কুমারীর মোবাইল চালু ছিল। এখন সবার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও চেম্বারে ঢু মারলেও সব বন্ধ ছিল।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, মৃত্যুর খবর শুনেছি। তবে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। মৃত জ্যোতির ভাই মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, মরদেহ নিয়ে সৈয়দপুরে আসছেন। তিনি অভিযোগ দিলে আসামিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Bootstrap Image Preview