Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২১ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে বোনের প্রেমিককে হত্যা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:২৯ PM
আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:২৯ PM

bdmorning Image Preview


খাগড়াছড়ির পানছড়ি থানার চাঞ্চল্যকর রাকিব হোসেন (২০) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এরইমধ্যে দুইজনকে আটক করা হয়েছে।

তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতার দুজন হলেন ভিকটিমের ঘনিষ্ট বন্ধু আরিফুল ইসলাম (২০) ও মো. জুলহাস (২০)।

মূলত বোনের প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে প্রেমিক রাকিবকে হত্যার পরিকল্পনা করেন হাশেম (২৪)। হত্যার মিশনে তিনি ভিকটিম রাকিবের ঘনিষ্ট বন্ধু ও ভাড়াটিয়া খুনি ব্যবহার করেন।

ভিকটিম রাকিব পানছড়ির আলী নগর এলাকার মো. আলী হোসেনের ছেলে। তিনি পানছড়ি কলেজে এইচএসসি ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা যায়, ভিকটিম রাকিবের সঙ্গে একই এলাকার স্থানীয় রিপন মেম্বারের মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি মেয়ের পরিবার জেনে গেলে রাকিবকে মারধর করে এবং মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে। কিছুদিন যোগাযোগ বন্ধ থাকার পর দুজনের যোগাযোগ আবার শুরু হয়।

আবারও বিষয়টি জেনে গেলে মেয়েটির ভাই হাশেম রাকিবকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক হাশেম ভিকটিমের ঘনিষ্ট বন্ধু গ্রেফতারকৃত আসামি আরিফুল ইসলাম ও জুলহাসের সঙ্গে আঁতাত করেন।

২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় প্রতিবেশী আরিফসহ ভিকটিম মোটরসাইকেলযোগে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আসামি আরিফের বাড়ি ভিকটিমের বাড়ির আগে হওয়ায় তিনি ভিকটিমের মোটরসাইকেল থেকে নেমে সংবাদটি ভাড়াটিয়া খুনি তুলা মিয়াকে জানিয়ে দেন।

ভিকটিম রাকিব মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থল কনকবাগানের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পৌঁছা মাত্রই ভাড়াটিয়া খুনি তুলা মিয়া ও তার আরও ৪ সহযোগী ভিকটিমের মাথার বাম পাশে ধারালো দা দিয়ে আঘাত করে। এসময় জুলহাস ভাড়াটিয়া খুনিদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এ অবস্থায় রাকিব মোটরসাইকেল ফেলে দৌড়ে পাশেই আসামি বন্ধু আরিফুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে লুটিয়ে পড়েন।

এ সময় আরিফুলের পরিবারের সদস্যরা ভিকটিমের মাথা গামছা দিয়ে বেঁধে দেয়। পরে সেখান থেকে প্রথমে পানছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোরে তার মৃত্যু হয়।

২০ জানুয়ারি নিহত রাকিবের বাবা আলী হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে পানছড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ তদন্তে তুলা মিয়াকে আসামিকে দেখিয়ে আদালতে মামলার চার্জশিট দেয়। চার্জশিটে রাকিব হত্যায় জড়িত আরিফুল ও জুলহাসকে সাক্ষী দেখানো হয়। পরিপূর্ণ ছিল না তথ্য উদঘাটন।

তাই মামলাটির বাদী ভিকটিমের বাবা নারাজী দিলে আদালতের নির্দেশে পিবিআই, চট্টগ্রামকে অধিকতর তদন্ত ভার ন্যস্ত করে।

পিবিআই তদন্তের এক পর্যায়ে চলতি বছরের গত ৫ সেপ্টেম্বর পানছড়ি বাজার থেকে আরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। ৬ সেপ্টেম্বর আদালতে তোলা হলে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তার তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে গতকাল মো. জুলহাসকে আটক করা হলে তিনিও বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ির আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।  

পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার এসআই পরিতোষ দাশ বলেন, মামলাটি হাতে পাওয়ার পর আমাদের অতিরিক্ত আইজি বনজ কুমার মজুমদার এবং পুলিশ সুপার নাজমুল হাসানের দিকনির্দেশনায় কাজ শুরু করি। ইতিমধ্যে গ্রেফতারকৃত দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, আমরা সব সময় মামলার গভীরে গিয়ে তদন্ত করে থাকি। নিজস্ব সোর্স এবং আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হই। তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, মামলার সাক্ষী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। পরিকল্পনামাফিক হক্যাকাণ্ডটি হয়েছে।

অন্য আসামিদেরও দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলে জানান তিনি।

Bootstrap Image Preview