Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২২ বুধবার, মে ২০২৪ | ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সিরাজগঞ্জে ছাদ থেকে পড়ে ভারতীয় তরুণীর মৃত্যু, রহস্য উদঘাটনে মাঠে একাধিক টিম

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:২০ AM
আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:২০ AM

bdmorning Image Preview


সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় বর্ষের ভারতীয় জম্মু কাশ্মীরি ছাত্রী খুশবু মঞ্জুর (২২) ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় বুধবার রাতে এনায়েতপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। আর মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানা গেছে।

লাশের ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ পুলিশ খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও নিহতের ভাই আদিল মঞ্জুরের কাছে হস্তান্তর করেছে। বুধবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ছাত্রীর লাশ নিয়ে ১০ সদস্যের একটি টিম ভারতের জম্মু কাশ্মীরের অনন্তনাগ বুনপোড়া অপজান কাটুবিজবেহারার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছে। এছাড়া এ মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ শুরু করেছে।

এনায়েতপুর থানার ওসি আনিছুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে লাশ পৌঁছতে দেরি হওয়ায় ও খুশবুর অকাল মৃত্যুর ঘটনায় তার সহপাঠীসহ কলেজের শিক্ষার্থীরা বুধবার রাতে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রধান গেটের অভ্যন্তরে চত্বরে সমবেত হয়ে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা রাত ৯টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত পৌনে ৩ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান নেন। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

অপরদিকে খুশবুর মৃত্যুতে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজের ক্লাস এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রয়েছে। এছাড়া কলেজও  হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সপ্তাহব্যাপী শোক কর্মসূচি পালন করছে। এ শোক কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে নিহতের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল,আলোচনা ও স্মরণসভা।

এছাড়া কলেজ ও হাসপাতালের প্রধান গেটের সামনে কর্তৃপক্ষ শোক সংবলিত ব্যানার টাঙিয়েছেন। খুশবু মৃত্যুর ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে শোক বিরাজ করছে। কলেজের  শিক্ষক, কর্মচারী, সহপাঠী ও সব বর্ষের শিক্ষার্থীরা শোকে কাতর হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে এনায়েতপুর থানার ওসি আনিছুর রহমান বলেন, কাশ্মীরি ছাত্রী খুশবু মঞ্জুর নিহতের ঘটনায় ইতোমধ্যেই পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম পৃথকভাবে মাঠে নেমে তদন্ত শুরু করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী, উদ্ধারকারী, হোটেল কর্তৃপক্ষ, সহপাঠীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে থেকে এ বিষয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। এছাড়া এটি হত্যা না আত্মহত্যা অথবা নিছক দুর্ঘটনা কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। পুরো তদন্ত শেষ হলে ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ বেরিয়ে আসবে।

এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কৌশিক আহমেদ বলেন, ঠিক কী কারণে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তা এখনো নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। এখন পুলিশ তদন্ত করে এর সঠিক কারণ উদঘাটন করবে।

তিনি আরও বলেন, বুধবার রাত পৌনে ১২টার দিকে লাশবাহী ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। সেখান থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি বিমানে করে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে পাঠানো হবে।

তিনি আরও বলেন, লাশের সাথে ১০ সদস্যের একটি টিম পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন মেডিকেল শিক্ষক, ১ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ৬ জন জম্মু-কাশ্মীরীয় শিক্ষার্থী ও নিহতের ভাই ইন্টার্নি চিকিৎসক আদিল মঞ্জুর রয়েছেন।

এ বিষয়ে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষক ডা. রইসুল হাসান বলেন, মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। আমরা লাশ পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যস্ত আছি।

খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, খুশবু আমাদের কলেজের খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল। আহত হওয়ার পর তাকে আমাদের হাসপাতালে এনে কলেজের ব্যয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। খুশবুর এমন অকাল মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। কলেজ পরিচালনা পরিষদ থেকে শুরু করে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীসহ সবাই এ ঘটনায় মর্মাহত। এ জন্য আমরা ৭ দিনের শোক কর্মসূচি পালন করছি। তার শোকাহত পরিবারের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

উল্লেখ্য, গত ৬ সেপ্টেম্বর বিকাল পৌনে ৩টার দিকে শাহজাদপুর উপজেলার পৌর সদরের শক্তিপুর এলাকার পিপিডি গেস্ট হাউজের ৪ তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তৃতীয় বর্ষের কাশ্মীরি ছাত্রী খুশবু মঞ্জুর (২২) গুরুতর আহত হয়। বুধবার সকাল ৮টার দিকে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি ভারতের জম্মু কাশ্মীরের অনন্তনাগ বুনপোড়া অপজান কাটুবিজবেহারা এলাকার মঞ্জুর আহম্মদের মেয়ে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুরের পিপিডি গেস্ট হাউজের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৪৩ জন শিক্ষার্থী ও ৮ জন শিক্ষক দুই দিনের জন্য রেসিডেনশিয়াল ফিল্ড সাইড ট্রেনিং এর উদ্দেশ্যে শাহজাদপুর পিপিডি রেস্ট হাউজে আসেন। এর মধ্যে কাশ্মীরের খুশবুসহ ১২ জন মেয়ে ও ১৪ জন ছেলে শিক্ষার্থী কাশ্মীরি নাগরিক। বাকি ১৭ জন শিক্ষার্থী বাংলাদেশি নাগরিক। তারা সবাই সকালের নাশতা শেষে ব্যাগপত্র রুমে রেখে শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের মশিপুর-শরিষাকোল এলাকায় ফিল্ড ওয়ার্কে যায়। ফিরে আসে দুপুর ২টার দিকে।

দুপুর আড়াইটার মধ্যে সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে রুমে ফিরে যায়। খুশবু তার ৩ জন সহপাঠীর সঙ্গে ৪ তলার ৩০৫নং রুমে যায়। এরপর পাশের রুমে যাওয়ার কথা বলে রুম থেকে বের হয়ে তিনি সবার অজান্তে ৪ তলার ছাদে চলে যান। কী কারণে তিনি ছাদে যান তা তিনি জানাতে পারেননি। এ সময় শিক্ষক ও নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন ছাত্র দুপুরের খাবার খাচ্ছিল। ছাদ থেকে মাটিতে শিক্ষার্থীর পড়ে যাওয়ার চিৎকারে তারা দ্রুত ছুটে এসে খুশবুকে উদ্ধার করে প্রথমে পাশের পিপিডি ট্রাস্ট হাসপাতাল ও পরে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকাল ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

এনায়েতপুর থানার পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরে ওই রাতেই ময়নাতদন্ত শেষে লাশ কলেজ কর্তৃপক্ষ ও নিহতের ভাই আদিল মঞ্জুরের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

Bootstrap Image Preview