Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ সোমবার, মে ২০২৪ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মমতার মন গলাতে বাংলাদেশকে অনুরোধে করছে ভারত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২২, ১০:৫২ AM
আপডেট: ২৮ জুন ২০২২, ১০:৫২ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


দিনক্ষণ ঠিক ছিল। ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। খসড়াও চূড়ান্ত। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁকে বসায় তিস্তা চুক্তি আর সই করতে পারেনি ভারত। ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ওই বাংলাদেশ সফরে তিস্তা চুক্তি যে আটক গেল, তা ১১ বছরেও সমাধা করতে পারেনি দেশটি। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও আশ্বাস দিয়ে তা রক্ষা করতে পারেননি।

বাংলাদেশ তরফে সর্বশেষ ১৯ জুন তিস্তা পানিবণ্টন সমস্যা সমাধানের অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় প্ল্যাটফর্ম যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

তিনি বাংলাদেশ পক্ষকে অনুরোধ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে। তাঁকে রাজি করাতে।

তিস্তা প্রসঙ্গ জেসিসির বৈঠকে এসেছে কি না, জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের এক সদস্য বলেছেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন গলাতে, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে।’ বাংলাদেশের জবাব কী ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, মমতার দিকটি ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন শুধু দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেই বাংলাদেশ আলোচনা করবে।

এ বিষয়ে এর আগে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ কয়েক দফা অনুরোধ করলেও ভারত সাড়া দেয়নি বলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের ভারতের অনুরোধ ‘একটি রাজনৈতিক চাল’। তিনি বলেন, তিস্তা নদীটি নেমেছে ভারতের সিকিম হয়ে। সেখানে সিকিম অন্তত ৩০টি ছোট ছোট বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। তিস্তা বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপদেষ্টা কল্যাণ রুদ্রের নেতৃত্বে একটি সমীক্ষা হয়েছিল। রুদ্র (ইমতিয়াজকে) বলেছেন, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পশ্চিমবঙ্গেই জল থাকে না। বাংলাদেশকে দেবে কোত্থেকে।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ভারত সরকার জানে পশ্চিমবঙ্গে যে দলই আসুক, কেউ রাজি হবে না তিস্তার পানি দিতে। এটা জেনেই বাংলাদেশকে ওই অনুরোধ করা হয়েছে। এটা দিল্লি-কলকাতার রাজনীতি। বাংলাদেশ কেন এতে অংশ হবে! তিনি বলেন, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পানি সমস্যার সমাধান নিজেদেরই করতে হবে। প্রয়োজনে বর্ষার পানি বাঁধ দিয়ে ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ বিষয়ে চীনের একটি প্রস্তাব আছে। এ প্রস্তাবে আপত্তি থাকলে ভারত নিজেই বাঁধের জন্য অর্থসংস্থান করুক না।

জেসিসির বৈঠকে কুশিয়ারা নদী থেকে ৫ হাজার হেক্টর জমির জন্য সেচের পানি নিতে খাল খননে ভারতীয় সম্মতির জন্য বাংলাদেশ আবারও অনুরোধ জানায়। ভারত এ অনুরোধ বিবেচনা করবে বলে জানায়। এ বিষয়ে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা আছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

এ ছাড়া ভারতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সব রকম শুল্ক-অশুল্ক বাধার অপসারণ চেয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি আশা করছে ঢাকা।

অন্যদিকে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও মজবুত করতে চায় ভারত। দুই দেশের মধ্যে ইতিপূর্বে স্বাক্ষর হওয়া প্রতিরক্ষা ঋণ চুক্তির বাস্তবায়ন করতে জেসিসিসহ এবার বিভিন্ন বৈঠকে আবারও তাগিদ দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষা খাতে কেনাকাটার জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সমঝোতা স্মারকটি সই হয়েছিল ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময়। এ ছাড়া ভারত চায় করোনাকালে থেমে যাওয়া প্রতিরক্ষা সংলাপ আবার শুরু করতে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি ত্বরান্বিত করতে ভারত আবার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশকে।

উভয় দেশের মধ্যকার সার্বিক বিষয়ে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে আবারও শীর্ষ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

জেসিসি বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস বলেন, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ও এসেছে আলোচনায়। ভারত মনে করে দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে স্থিতিশীল দেশ। তারা চায় বিমসটেকসহ এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নিক। দুই দেশ এ ক্ষেত্রে আরও কাজ করবে।

সূত্রঃ আজকের পত্রিকা

Bootstrap Image Preview