Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৫ বুধবার, মে ২০২৪ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সংঘর্ষ উসকে দিয়েছেন বিএনপির দুই নেতা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২২, ১১:৩৬ PM
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২২, ০১:২০ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


নিউ মার্কেটে ফাস্টফুডের দুই দোকানের কর্মীদের বিরোধে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা জড়িয়ে পরবর্তীতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের করা মামলায় আসামি হিসেবে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ১ নম্বর আসামি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি। আরেক আসামি হাজী জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

ব্যবসায়ী-ছাত্র সংঘর্ষে টানা দুদিন রণক্ষেত্র হয়ে থাকে পুরো এলাকা। এতে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২ জন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক, যাদের মধ্যে কমপক্ষে ১০ জন সংবাদকর্মী।

সংঘর্ষ, হামলা ও ভাংচুরের এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। একটি মামলা করেছে নিহতদের একজন নাহিদের পরিবার। অন্য দুটি মামলার বাদী পুলিশ। দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা ছাত্র ও ব্যবসায়ীরা আসামি হিসেবে থাকলেও পুলিশের কাজে বাধা দেয়া, হামলা ও ভাংচুরের মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

নাম উল্লেখ করা এসব আসামির অর্ধেক নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী এবং বাকি অর্ধেক ঢাকা কলেজের ছাত্র। এই মামলার ১ নম্বর আসামি হলেন অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন। তিনি ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড দোকান দুটির প্রকৃত মালিক। একইসঙ্গে তিনি নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি।

মামলায় ৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে হাজী জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারীকে। তিনি নিউমার্কেট থানা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। বাকি ২২ জন হলেন নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের ছাত্র। তবে এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

পুলিশের মামলায় আসামি হিসেবে উল্লেখ করা ২৪ জনের প্রত্যেকে প্রত্যক্ষভাবে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন এবং মদদ দিয়েছেন- এমন তথ্য আছে গোয়েন্দাদের কাছে। ঘটনার পর থেকে মাঠ পর্যায়ে ছায়াতদন্ত করে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। তাতে ওই সংঘর্ষ ও অস্থিতিশীলতায় আসামিদের কার কী ভূমিকা ছিল তা সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতেই মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা যে গোয়েন্দা রিপোর্ট পেয়েছি তাতে সবার নাম এসেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী মামলায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

তবে সংঘর্ষকালে আসামিদের ভূমিকা কী ছিল সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সংঘর্ষটা দুই দোকানের কর্মচারীদের বিরোধ থেকে শুরু হয়েছিল এটা ঠিক। এখানে অন্য কারো স্বার্থ, রাজনৈতিক ইন্ধন বা ষড়যন্ত্র ছিল না। তবে সংঘর্ষ শুরুর পর এতে রাজনৈতিক ইন্ধন দেয়া হয়। ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের উসকে দিয়ে নাটের গুরুর ভূমিকা পালন করেছেন সাবেক বিএনপি নেতা মকবুল হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী। তাদের পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজে সংঘর্ষে জড়ানো যাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে তাদের সবাইকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ব্যবসায়ী ও ছাত্র দুই পক্ষেরই আসামি রয়েছে।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘ওই ফাস্টফুডের দুটি দোকানের একটি মকবুল সাহেব ও অন্যটি তার স্ত্রীর নামে বরাদ্দ। দোকান দুটি তিনি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। তবে তার সঙ্গে অনেক দিন ধরেই আমাদের দেখা হয় না।

‘এই ঘটনার পর গোয়েন্দারা তার রাজনৈতিক অবস্থান ও মার্কেটে তার যাতায়াতের বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন। আমি যতটুকু জানি সেসব তথ্য তাদের দিয়েছি। গতকাল (বুধবার) আমি মকবুল সাহেবকে ফোনে জানিয়েছি যে তার সম্পর্কে গোয়েন্দারা আমাকে প্রশ্ন করেছেন। একই সঙ্গে ওনার দুই দোকানের ভাড়াটিয়ারা যেহেতু এই ঝামেলা করেছে এটার সমাধান কিভাবে করব তা জানতে চেয়েছি। তখন উনি পুরো বিষয় মালিক সমিতির ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপাতত ওই দোকান দুটি বন্ধ থাকবে।’

মামলায় মকবুল হোসেনকে ১ নম্বর আসামি করার কোনো যুক্তি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এ নিয়ে কোনো ধারণা করতে পারছি না। আমরা চাই ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততা আছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ও নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমি শুনেছি যে আমাকে এক নম্বর আসামি করে আরও বেশ কয়েকজনের নামে মামলা হয়েছে। এটা আসলে একটা পলিটিক্যাল মামলা হয়ে গেছে। যারা জড়িত তাদেরকে রেখে আমরা যারা বিএনপি করি তাদের নামে মামলা করে অন্য উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা হচ্ছে। আমি এটার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আসামিদের মধ্যে আরও অনেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানান তিনি।

মামলার আরেক আসামি নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারীকে ফোন করা হলে তার সেটটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পুলিশের করা এই মামলার বাকি ২২ আসামি হলেন- আমীর হোসেন, মিজান, টিপু, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহীদুল ইসলাম শহীদ, জাপানী ফারুক, মিজান ব্যাপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, তোহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিণ্টু ও বাবুল।

পুলিশের কাজে বাধা ও হামলা চালিয়ে পুলিশ সদস্যদের আহত করা ও ভাংচুরের অভিযোগে মামলাটি করেন ইন্সপেক্টর ইয়ামিন কবীর।

মামলায় ওই ২৪ জন ছাড়াও অজ্ঞাতনামা হিসেবে ঢাকা কলেজের ৬০০ থেকে ৭০০ ছাত্র এবং নিউমার্কেট এলাকার ২০০ থেকে ৩০০ ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীকে আসামি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দিনভর থেমে থেমে সংঘর্ষের নেপথ্যে অন্তত তিনটি রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন নেতার যোগসাজশের তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, নতুন গঠিত একটি রাজনৈতিক দল, বামপন্থি একটি সংগঠন ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা বৃহৎ একটি দলের কয়েকজন নেতা বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে সংঘর্ষে লিপ্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন।

তাদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেন। তারা পুলিশকে একটি ভুল পদক্ষেপের দিকে ধাবিত করতে উসকানি দেয়। তারা একাধিক ছাত্রের লাশ চাচ্ছিল। ধৈর্যহারা হয়ে পুলিশ একটি ভুল সিদ্ধান্ত নেবে-এমন অপেক্ষায় ছিল উসকানিদাতারা।

এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ শুরুতে ঘটনাস্থলে তৎপরতা না বাড়িয়ে ব্যবসায়ী ও শিক্ষকদের সামনে এগিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের। তাদের মাধ্যমে দুপক্ষকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কলেজের দিকে এগোলেই ছাত্ররা দশতলার ওপর থেকে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল ছোড়ে। আবার পেছালে ছাত্ররা কলেজ থেকে বেরিয়ে মার্কেটে হামলার চেষ্টা চালায়।

দশতলায় টিয়ার শেল মারা সম্ভব না হওয়ায় সংঘর্ষ দমনে পুলিশের সামনে বিকল্প ছিল গুলি। কিন্তু গুলি করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো। তাই পুলিশ সময় নিয়ে সব মহলকে সম্পৃক্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। এটা পুলিশের একার সিদ্ধান্ত ছিল না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, উসকানিদাতাদের সঙ্গে যোগসূত্র থাকায় কাউকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে সন্দেহভাজন অন্তত ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগই হকার ও দোকান কর্মচারী।

এছাড়া ঢাকা কলেজের কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের কয়েক নেতার গতিবিধির ওপর নজর রাখছেন গোয়েন্দারা। নিউমার্কেট এলাকা থেকে বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ফুটেজে ঘুরেফিরে বেশ কয়েকজন যুবককে অতি মারমুখী দেখা গেছে। তারা বিনা কারণে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। 

Bootstrap Image Preview