ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান, অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ ও নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স ম কাইয়ূমকে প্রত্যাহার ও নিহত পথচারী নাহিদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা কলেজ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র মাসুম বিল্লাহ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সুজয় বালা লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, এ ঘটনা নিয়ে পুলিশ পক্ষপাতমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। এ জন্য পুলিশকে কলেজ প্রশাসনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান তাঁরা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার উসকানি ও ইন্ধনদাতা এবং রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ অন্যান্য দাবি তুলে ধরেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ব্যবসায়ী ও পুলিশের হামলায় ঢাকা কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসার খরচ মার্কেটের মালিক সমিতি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বহন করতে হবে। হামলায় নিহত পথচারীর পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
প্রতিটি মার্কেট ও দোকানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ফুটপাত দখুলমুক্ত, অবৈধ কার পার্কিং উচ্ছেদ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি মার্কেটে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার দাবি জানান তাঁরা।
ক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্রেতাদের হয়রানি, নারীদের যৌন হয়রানি বন্ধে একটি বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। চন্দ্রিমা সুপার ও নিউমার্কেটে ঢাকা কলেজের জমির ইজারা বাতিলের দাবিও জানান তাঁরা।
গত সোমবার মধ্যরাতে নিউমার্কেটের দোকানমালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। এর জেরে মঙ্গলবার দিনভর ওই এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত এক পথচারী পরে মারা যান। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
দাবিগুলো হলো—
১. এই ন্যক্কারজনক হামলার উস্কানিদাতা, ইন্ধনদাতা ও হামলাকারীদের তদন্ত-সাপেক্ষে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সব দায়ভার নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিতে হবে।
৩. হকারদের হামলায় নিহত পথচারী নাহিদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪. রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
৫. দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ডিসি, এডিসি ও নিউ মার্কেট থানার ওসিকে প্রত্যাহার করতে হবে এবং পুলিশ প্রশাসনকে কলেজ প্রশাসনের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
৬. প্রতিটি মার্কেট ও দোকানে সিসিটিভি স্থাপন করতে হবে।
৭. প্রতিটি মার্কেটে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে।
৮. ফুটপাত দখলমুক্ত, অবৈধ কার পার্কিং উচ্ছেদ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
৯. ক্রেতা হয়রানি, নারীদের যৌন হয়রানি বন্ধে একটি বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করে ক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নিউ সুপার মার্কেটে ঢাকা কলেজের সম্পদ লিজ বাতিল করে ফিরিয়ে দিতে হবে।
এসব দাবি অনতিবিলম্বে কার্যকর না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।