Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৪ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘বিএনপি নেতার মালিকানাধীন’ দোকান থেকে ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের শুরু

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২২, ১২:২৬ AM
আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২২, ১২:২৭ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের শুরু হয়েছে খাবারের দাম নিয়ে কথাকাটাকাটির জেরে-এমন খবর ছড়িয়ে পড়লেও প্রকৃত ঘটনা ভিন্ন। জানা গেছে, দফায় দফায় এ সংঘর্ষের সূত্রপাত ব্যবসায়ীদের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই। অনেক ব্যবসায়ী শিক্ষার্থীদের খাবারের বিল না দেওয়ার বিষয়টি সামনে আনলেও জানা গেছে, ইফতার সামগ্রী বিক্রির জন্য টেবিল বসানোর জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে এর শুরু।

একাধিক ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই টেবিল বসানো নিয়ে শুক্রবার মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় একই মালিকের দুই ফাস্ট ফুড দোকানের মধ্যে। তারাই প্রভাব খাটাতে ঢাকা কলেজের বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে ডেকে আনে। শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের ওপর চড়াও হলে ব্যবসায়ীরাও তাদের মারধর করেন। পরে ওই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে গিয়ে সত্য ঘটনা আড়াল করে বিষয়টি অন্যভাবে উপস্থাপন করলে দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। যার একপর্যায়ে নিউমার্কেটের আশপাশের মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

ব্যবসায়ীরা জানান, নিউমার্কেটের ৪ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই ডান পাশের ২য় দোকানটি ওয়েলকাম ফাস্ট ফুড এবং সরু গলির বিপরীত পাশেই ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুড। এই দুই দোকানের মালিক নিউমার্কেট থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন সরদার। তার আপন ভাই শহিদুল ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুড ও চাচাতো ভাই রফিক ওয়েলকাম ফাস্ট ফুড পরিচালনা করেন। প্রতিদিন ইফতারের আগে প্রতিটি ফাস্ট ফুডের দোকানের সামনে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে ইফতার বিক্রি করা হয়। মূলত এই টেবিল বসানোর জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। শুক্রবার থেকে চলে আসা দ্বন্দ্ব সোমবার সন্ধ্যার পরপর প্রকাশ পায়। সোমবার সন্ধ্যায় ইফতারির টেবিল বসানো নিয়ে ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুড ও ওয়েলকাম ফাস্ট ফুডের স্টাফদের মধ্যে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়। পরে ইফতারির পর ওয়েলকাম ফাস্ট ফুডের স্টাফরা প্রভাব খাটাতে ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের কয়েকজনকে ডাকেন।

জানা যায়, একজন ছাত্রলীগ নেতা ৮-১০ জনকে নিয়ে নিউমার্কেটে প্রবেশ করেই অতর্কিত ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুডের কর্মচারীদের মারধর করতে থাকেন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দোকানে অকারণে হামলা চালিয়েছে ভেবে আশপাশের ব্যবসায়ীরা ওই শিক্ষার্থীদের মারধর করেন। ব্যবসায়ীদের কাছে মারধরের শিকার হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে বিষয়টি অন্যভাবে উপস্থাপন করে ওই শিক্ষার্থীরা। পরে ঢাকা কলেজের ১০০-১৫০ শিক্ষার্থী নিউমার্কেটে হামলা চালান। পাল্টা হামলা চালান ব্যবসায়ীরাও। দু’পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে আশপাশের সব মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তারপর থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতেই থাকে।

ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুডের আশপাশের দোকানদাররাও ওই দুই দোকানে ঝামেলা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।

তবে ফাস্ট ফুড দুটির সংশ্লিষ্ট কাউকেই দোকানে পাওয়া যায়নি। কারো মন্তব্য নেয়াও সম্ভব হয়নি। 

অনেকে অভিযোগ করেছেন, ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুডটি বিএনপি নেতা মকবুলের দখলে নেওয়া। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের একটি পক্ষকে নিয়মিত চাঁদা দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে গভীর রাত পর্যন্ত নিউমার্কেট এলাকায় বেচাকেনা চলে। তাই সোমবার রাত ১১টাও খোলা ছিল পুরো নিউমার্কেট। শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়টি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী নিউমার্কেটে হামলা চালায়। এই সময় ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ফুটপাতের হকাররা শিক্ষার্থীদের হামলা করে। দু’পক্ষের সংঘর্ষের খবরে রাতেই সেখানে পৌঁছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। এরপর সংঘর্ষ বাড়তে থাকলে আশপাশের থানা পুলিশ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও মিরপুর রিজার্ভ থেকে তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য সেখানে মোতায়েন করা হয়।

মঙ্গলবার সকালে আবার সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। তাদের একজন পরে মারা যান। এ ছাড়া ঢাকা কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ছাত্ররা সেই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে সড়কে অবস্থান নিয়ে আছেন। ওই এলাকায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সূত্রঃ দেশ রূপান্তর 

Bootstrap Image Preview