শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, নিউ মার্কেট ও ঢাকা কলেজ এলাকায় শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেনের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আহত ছাত্র মোশাররফকে দেখতে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে নয়টায় স্কয়ার হাসপাতালে যান শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় মোশাররফের সুচিকিৎসার আশ্বাস দেন তিনি। তিনি মোশাররফের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ ঘটনায় আহত সব শিক্ষার্থী এবং অন্যদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নাহিদ নামে এক যুবক ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
ঢামেক হাসপাতাল ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাত ৯টা ৪০ মিনিটে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেন আইসিইউর কর্তব্যরত ডা. তৌফিক এলাহী।
নিহত নাহিদের বাবা নাদিম হোসেন জানান, তাদের বাড়ি কামরাঙ্গীরচর দেওয়ানবাড়ী এলাকায়। এ্যালিফেন্ট রোডের বাটা সিগনালে একটি কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিতে চাকরি করতো নাহিদ। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে কাজে যায় সে। এরপর দুপুর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। বিকেলে ফেসবুকের মাধ্যমে তার আহত হওয়ার ছবি দেখতে পান তারা। এরপরে তাকে হাসপাতালের বিছানায় খুঁজে পাওয়া যায়।
তিনি আরো জানান, নাহিদ ৬ মাস আগে বিয়ে করেছে। তার স্ত্রীর নাম ডালিয়া। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিল সে।
মঙ্গলবার দুপুরে সংঘর্ষের এই ঘটনায় মোরসালিন (২৬) নামে আরও এক যুবক লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন আছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিউ সুপার মার্কেটে কাপড়ের দোকানের কর্মচারী তিনি। সংঘর্ষের সময় তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পায়।
এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে মোরসালিনসহ ঢাকা কলেজের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র কানন চৌধুরী (২৩) ও দোকান কর্মচারী ইয়াসিন (১৭) মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে চিকিৎসাধীন।
এদিকে নিউ মার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী কর্মচারীদের সংঘর্ষে ঢাকা কলেজের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন ৷ মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ড. মো. আবদুল কুদ্দুস সিকদার ৷
তিনি বলেন, সকাল থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে ব্যবসায়ীদের ছোড়া ইট পাটকেল ও পুলিশের টিয়ার গ্যাসে ঢাকা কলেজের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন৷ এর মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন ৫০ জন। আহত শিক্ষার্থীদের ঢাকা কলেজের টিচার্স লাউঞ্জে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ৷ যাদের আঘাত গুরুতর ছিল তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
টিচার্স লাউঞ্জে প্রাথমিক চিকিৎসার দায়িত্বে আছেন ঢাকা কলেজের চিকিৎসক, ঢাকা কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ ও যুব রেড ক্রিসেন্ট ঢাকা কলেজ ইউনিটের সদস্যরা৷
ঢাকা কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপের সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক বেলাল হোসাইন বলেন, সকালে সংঘর্ষ শুরুর পরেই আহত শিক্ষার্থীর পরিমাণ বাড়তে থাকে। তখনই আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া শুরু করি। আহত শিক্ষার্থীদের অধিকাংশেরই শরীরে ইটের আঘাত, বিভিন্ন অংশ থেঁতলে যাওয়া, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেলের আঘাত, মাথা ফাটা, হাতে পায়ে ক্ষত, হাত-পা ভাঙা ছিল। আমারা চেষ্টা করেছি আহত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর।
প্রাথমিক প্রতিবিধান দেওয়া আরেক সদস্য রোভার স্কাউটের সদস্য তারেক আজিজ বলেন, সারা দিন ধরেই আমরা আহত শিক্ষার্থীদের সেবা দিয়েছি। আমাদের এখানে দুইশর অধিক শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছে ৷ এর মধ্যে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ৫০ এর অধিক শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷
উল্লেখ্য, সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় কথা কাটাকাটির জেরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী ও দুই ব্যবসায়ী আহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।
এরপর মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে আবারও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী ও নিউ মার্কেটের কর্মীরা সংঘর্ষে জড়ান। মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে তাদের ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। ছাত্রদের অনেকে হেলমেট পরে হাতে লাঠি নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।