নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত ওই মার্কেটের দুটি ফাস্ট ফুডের দোকানের কর্মীদের নিজেদের বিরোধ থেকে। ইফতারের আগে বাঁধে এই বিরোধ পরে সেটি রুপ নেয় সংঘর্ষ।
নিউ মার্কেটের কয়েকটি ফাস্টফুড দোকানের মালিক, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে জানা যায়, ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের চাঁদাবাজি বা খাবারের দোকানে কম মূল্য পরিশোধ নয়, বরং নিউ মার্কেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারীদের নিজেদের বিবাদ থেকে সংঘাতের শুরু। এ বিবাদে একপক্ষকে শায়েস্তা করতে অন্যপক্ষ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ডেকে আনে। পরবর্তীতে এটিই ব্যবসায়ী বনাম শিক্ষার্থী সংঘর্ষে রূপ নেয়।
ঘটনার শুরু ইফতার পণ্যের টেবিল সাজানো নিয়ে। নিউ মার্কেটের-৪ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতেই ‘ওয়েলকাম’ নামের ফাস্টফুডের দোকান। সামনেই ‘ক্যাপিটাল’ নামের আরেকটি ফাস্টফুড দোকান। দুটি দোকানের মালিক আপন চাচাতো ভাই। ইফতারের সময় নিউ মার্কেটের ভেতরে হাঁটার রাস্তায় টেবিল পেতে বসে ইফতারের ব্যবস্থা করে ফাস্টফুডের দোকানগুলো।
সোমবার সন্ধ্যায় এই টেবিল পাতা নিয়ে দুই পক্ষের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। মূলত এ বিরোধের সূত্রপাত ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারী বাপ্পী ও ক্যাপিটালের কর্মচারী কাওসারের মধ্যে। বিতণ্ডার একপর্যায়ে কাওসারকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে বাপ্পী ওই জায়গা থেকে চলে যায়।
এরপর রাত ১১টার দিকে বাপ্পীর সমর্থক ১০-১২ জন যুবক আসে নিউ মার্কেটে। এ সময় তারা হাতে রামদা নিয়ে আসে। তারা ক্যাপিটাল দোকানটিতে গিয়ে কাওসারের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ায়। সেখানে কাওসার সমর্থকরা বাপ্পীর সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে মার্কেট থেকে বের করে দেয়। বাপ্পী সমর্থকরা মার্কেট থেকে পালিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি দলকে নিয়ে এসে মার্কেটে হামলা চালায়।।
ওয়েলকাম ফাস্টফুডের মালিক মো. রফিক বলেন, ‘কাওসার টেবিল রেডি করার সময় বাপ্পীকে মেরেছিল। এরপর আমি বাপ্পীকে বলেছিলাম আমরা বিষয়টা মীমাংসা করে দেব। কিন্তু এর মধ্যে রাতে বাপ্পী তার পরিচিত ঢাকা কলেজের বন্ধুদের বিষয়টা জানালে ঢাকা কলেজের কয়েকজন এসে কাওসারকে জিজ্ঞেস করে, কেন তারা বাপ্পীকে মেরেছে। তখন কাওসার আর তার সাথের ছেলেরা কলেজের ছেলেদের ওপর দোকানের ছুরি-চাপাতি নিয়ে হামলা করে। কলেজের ছাত্রদের গায়ে হাত তোলায় পরে ছাত্ররা সব দল বেঁধে আসে। আমি বাপ্পীকে মানা করেছিলাম এসব করতে, কিন্তু বাপ্পী শোনেনি।’
এ বিষয়ে ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের মালিক শহিদুল ইসলাম সরদারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনার নেপথ্যের কারণ জানতে চাইলে নিউ মার্কেট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সাহেব আলী বলেন, ‘যদ্দূর জেনেছি, দুই ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারীর মধ্যে ঝামেলায় একপক্ষের হয়ে ঢাকা কলেজের ছেলেরা এসেছিল। এরপর এই ঝামেলা শুরু।
সোমবার মধ্যরাত থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১.১ জন সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। বন্ধ রয়েছে নিউ মার্কেট এলাকার সকল দোকানপাট ও সড়কে যান চলাচল। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ঢাকা কলেজ ও এর ছাত্রাবাসগুলো।