Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইমাম পরিচয়ে ২১ বছর পলাতক ছিল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি নেতা শফিকুল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২২, ০২:৫২ PM
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২২, ০২:৫২ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


নাম পাল্টে নরসিংদীর প্রত্যন্ত একটি গ্রামের মাদ্রাসায় লুকিয়ে ছিলেন বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আসামি মুফতি শফিকুর রহমান ওরফে আব্দুল করিম ওরফে শফিকুল ইসলাম। মাদ্রাসাটিতে ইমাম হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।

শফিকুর ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলারও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

বৃহস্পতিবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শুক্রবার দুপুরে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান বাহিনীটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, শফিকুর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় ছয়টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

র‌্যাব জানায়, শফিকুর ভৈরবে নিজ গ্রাম থেকে ৫ম শ্রেণি পাস করার পর মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে চকবাজারের একটি মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত হেদায়ায় পড়াশোনা করেন। হেদায়া পাস করার পর ১৯৮৩ সালে ভারতে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দাওরায়ে হাদিস পাস করে বাংলাদেশে ফেরত আসেন।

১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে ইউসুফ বিন নূরী মাদ্রাসায় ফতোয়া বিভাগে ভর্তি হয়ে ৩ বছরের ইফতা (ফতোয়া) কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৮৯ সালে পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে চলে যান এবং তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করেন।

১৯৮৯ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে ফেরেন তিনি। বাংলাদেশে আসার পর ঢাকার খিলগাঁওয়ের একটি মাদ্রাসায় পার্টটাইম শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচীর নিউ টাউন এ পড়াশোনা করার সময় মুফতি হান্নানও পড়াশোনা করতে গেলে তার সঙ্গে পরিচয় হয়।

পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ভ্রমণে গেলে আফগানিস্তানে থাকাকালীন জঙ্গী সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। আফগানিস্তান থেকে দেশে এসে ‘হরকাতুল জিহাদ (বি)’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার চিন্তা করে।

১৯৯০ সালে সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ‘হরকাতুল জিহাদ (বি)’ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং দাওয়াতের কাজ শুরু করেন। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি ‘হরকাতুল জিহাদ (বি)’ এর প্রচার সম্পাদক ছিলেন।

১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত হরকাতুল জিহাদের আমীর ছিলেন শফিকুর। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি হরকাতুল জিহাদের সুরা সদস্য ছিলেন।

র‌্যাব জানায়, ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর থানাধীন বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচ জন নিহত এবং কমপক্ষে শতাধিক লোক আহতের ঘটনায় তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন।

২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি আত্মগোপনে থেকে সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। নাম পাল্টে ২০০৮ সাল থেকে নরসিংদীর একটি মাদ্রাসায় ছিলেন।

২০১৪ সালের ২৩ জুন বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন। রায়ে নিষিদ্ধঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ৮ জনের ফাঁসি ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। অনাদায়ে আরো এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেয় আদালত।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন দলটির নেতা আইভি রহমানসহ ২৪ জন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ অনেক নেতা অল্পের জন্য বেঁচে যান।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এ রায় দেয় বিচারিক আদালত।

Bootstrap Image Preview