Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মুনিয়া হত্যা মামলায় শারুনের সাবেক স্ত্রী মিম গ্রেফতার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০৬:৪৮ PM
আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০৬:৪৮ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


কলেজ শিক্ষার্থী মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি সাইফা রহমান মিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ মঙ্গলবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মিম হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুন চৌধুরীর সাবেক স্ত্রী। 

এরআগে সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে পিবিআইয়ের স্পেশাল ক্রাইম অফিসে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয় মিমকে।  পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

গত বছরের ২৬ এপ্রিল রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজ শিক্ষার্থী মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এ ৮ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন নিহতের বোন।

চাঞ্চল্যকর এ মামলার এজাহারের ১৩তম পয়েন্টের অংশে ভিকটিম মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া অভিযোগ করেছেন, এক নম্বর আসামি আনভীর অপরাপর আসামিদের সহায়তায় টাকার ও ক্ষমতার দাপটে দেশের অনেক অসহায় সুন্দর নারীদের তার আয়ত্তে নিয়ে আনন্দ ফুর্তিতে মত্ত থাকে। টাকার জোরে দেশের অসহায় গরিব সুন্দরী মেয়েদের পণ্যের মতো ব্যবহার করার পর ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দেয় বা হত্যা করে। 

এজাহারে বলা হয়েছে, মামলার ৭ নম্বর আসামি কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার (সম্প্রতি মাদকসহ গ্রেফতারের পর কারাবন্দি) সঙ্গেও মুনিয়া হত্যার প্রধান আসামির বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। পিয়াসা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ভিকটিম মুনিয়াকে বিভিন্ন সময় ফোন করে আনভীরের সঙ্গ ত্যাগ করতে বলে। পরবর্তীতে তার মাধ্যমেই ২ নম্বর আসামি আনভীরের মা আফরোজার কাছে ভিকটিম সম্পর্কে কুৎসা রটিয়ে হত্যার প্ররোচনা দেয়।

এই পিয়াসার মাধ্যমেই গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মুনিয়াকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায় ডেকে নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে গ্রামের বাড়িতে যেতে বাধ্য করে আসামির পরিবার। সূত্রমতে, বনানী রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণকাণ্ডে ও মুনিয়া মৃত্যুরহস্যে সমালোচিত পিয়াসা গত ১ আগস্ট রাতে বারিধারার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ডিবির হাতে গ্রেফতার হন। এই রহস্যময় নারীর রয়েছে আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশন। তার সঙ্গেই আনভীরের দীর্ঘদিনের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। পিয়াসা গ্রেফতারের পর এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন ওঠে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ৬ নম্বর আসামি সাইফা রহমান মিম (হুইপপুত্র শারুনের সাবেক স্ত্রী) ১ নম্বর আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের গার্লফ্রেন্ড। মামলার বাদী নুসরাত দাবি করেন, মুনিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চলাকালীনই মিমের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন আনভীর। টেলিফোন কলরের্কডসহ এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। পরবর্তীতে ঈর্ষান্বিত হয়ে মিম ওই সম্পর্কে ফাটল ধরাতে ও পথের কাঁটা দূর করতে ষড়যন্ত্র করতে পারে বলে তার ধারণা।

বাড়িওয়ালী শারমিন সম্পর্কে মামলার এজাহারের ষষ্ঠ অংশে বলা হয়েছে, মুনিয়াকে হত্যার দিন দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে ৫ নম্বর আসামি শারমিন বাদীকে ফোন করে বলে ‘তোমার বোনের কিছু হলে আমরা জানি না, তখন পুলিশ আসবে; মিডিয়া আসবে ইত্যাদি।’ অথচ পোস্টমর্টেম রিপোর্ট মতে, ভিকটিমের মৃত্যু হয় দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে। এ ঘটনা প্রমাণ করে শারমীন মুনিয়ার মৃত্যু সম্পর্কে পূর্ব থেকে অবগত ছিল এবং এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া বাদী ঘটনার তারিখ বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে কুমিল্লা থেকে ভিকটিমের দরজা বন্ধ দেখে বাড়িওয়ালা শারমিন ও তার স্বামী ইব্রাহিমের কাছে বাসার সংরক্ষিত চাবি চাইলে তারা ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসাবে চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে চাবি না দিয়ে তালা ভেঙে বাসায় ঢোকার পরামর্শ দেয়।

নুসরাত জানান, পিয়াসার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী এই শারমিন। ঘটনার কয়েকদিন আগে শারমিনের সঙ্গে একটি ছবি তোলে মুনিয়া। শারমিন থেকে সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় দেখে ফেলে পিয়াসা। এরপরই আসামি আনভীর মুনিয়াকে ফোন করে গালাগালি করে ও ছবি তার পরিবার দেখে ফেলেছে বলে জানায় । দ্রুত বাড়ি চলে না গেলে মুনিয়াকে তার পরিবার মেরে ফেলবে বলেও জানায় আনভীর। তখন থেকেই মুনিয়া-আনভীর সম্পর্ক ভেঙে যায়। মামলার বাদী জানান, মুনিয়া আনভীরের গার্লফ্রেন্ড এবং তারা ওই ফ্ল্যাটে থাকবে। এক লাখ ৩০ হাজার টাকার বাসাভাড়া আনভীর পরিশোধ করবেন-এমন সব তথ্য জেনেই বাসাভাড়া দেন শারমিন ও তার স্বামী ইব্রাহিম। যদিও সেখানে আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহৃত হয়েছে।  জেনেশুনেও মুনিয়াকে ‘হত্যার’ পর সব অস্বীকার করেন শারমিন।

গত ২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই রাতেই বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। সেখানে বলা হয়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মুনিয়ার সঙ্গে। ওই বাসায় তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। কিন্তু বিয়ে না করে তিনি উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন মুনিয়াকে।

পরবর্তীতে নুসরাত দাবি করেন, তার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে আনভীর। গত ১৯ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে গুলশান থানা পুলিশ জানায়, আসামি আনভীরের সঙ্গে ঘটনার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হোক। এর বিরুদ্ধে আদালতে না-রাজি দেন বাদী নুসরাত। গত ১৮ আগস্ট পুলিশ প্রতিবেদন গ্রহণ করে ও বাদীর আবেদন খারিজ করে আসামিকে অব্যাহতি দেন ঢাকার সিএমএম আদালত। এরপর গত সোমবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নতুন করে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন ভিকটিমের বোন নুসরাত।

Bootstrap Image Preview