চট্টগ্রামে আবাসিক হোটেলে গলা কেটে শাহিদা জাহান সুমি নামে এক নারীকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ আশরাফুল ইসলাম সুজন নামে এক কলেজছাত্রকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার চার দিন পর হালিশহর থানা পুলিশ রোববার রাতে ঢাকার আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
জানা গেছে, সুমি ও সুজন সম্পর্কে দেবর ভাবি। দেবরের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছিল সুমি। সেই সুমিকে অন্যজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর সন্দেহে হোটেলে নিয়ে খুন করে সুজন। গ্রেফতার সুজন টঙ্গি সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী বলে পুলিশ জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপির) সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পশ্চিম বিভাগের ডিসি আবদুল ওয়ারিশ জানান, সুজন ও সুমি স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভুয়া এনআইডি দিয়ে হালিশহর এলাকার রোজ উড আবাসিক হোটেলে বৃহস্পতিবার উঠেছিল। সকালে তারা হোটেলটিতে উঠে। বিকাল ৫টার দিকে সুজন হোটেল ত্যাগ করে।
ডিসি আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কে কারণে সুমির সঙ্গে তার স্বামীর প্রায় ঝগড়া হতো। এর একপর্যায়ে সে তিন সন্তান নিয়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। কিন্তু তখনও স্বামীর সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়নি। এর এক বছর আগে থেকে সুমি তার চেয়ে ১০ বছরের ছোট সুজনের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান। পরে সুমির সঙ্গে মনোমালিন্য হতে থাকেন সুজনের। সেই ক্ষোভ থেকেই সুমিকে খুন করার পরিকল্পনা করতে থাকেন সুজন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিকালে হালিশহর রোজ উড আবাসিক হোটেলে রুম ভাড়া করেন সুজন। এরপর স্ত্রী পরিচয় দিয়ে সুমিকে নিয়ে যান রুমে। সেখানে গলাকেটে তাকে হত্যা করেন সুজন। দীর্ঘক্ষণ রুম বন্ধ থাকায় রাত ১২টা পুলিশে খবর দেন হোটেল ব্যবস্থাপক। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা খুলে সুমির রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে।
তিনি আরও বলেন, হোটেলটিতে কক্ষ ভাড়া নেওয়ার সময় কামরুল হাসান পরিচয়ে যে এনআইডি দেওয়া হয়েছে সেটি আরেকজনের। মাথায় টুপি ও মুখে মাস্ক লাগানো থাকায় সুজনকে শনাক্ত করা যায়নি। স্ত্রী পরিচয় দেওয়ায় হোটেলের নথিতে ওই নারীর কোনো পরিচয়ও সংরক্ষণ করা হয়নি। ফলে খুনের শিকার নারীর পরিচয় অজ্ঞাত থেকে যায়। যদিও খুনিকে গ্রেপ্তারের পর দুজনের বাড়িই সেনবাগ বলে জানা গেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুজন ঘটনায় সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে জানিয়ে ডিসি আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সুজন ঘটনার পর নিজের বাসায় না থেকে আশুলিয়ায় বোনের বাসায় আত্মগোপন করেছিল। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- খুনের শিকার সুমির স্বামীর নাম জাহাঙ্গীর আলম। জাহাঙ্গীর সন্দেহ করতেন সুমিকে। এ নিয়ে তাদের ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে এক বছর আগে তিন সন্তানের জননী সুমি উঠেন বাপের বাড়ি হালিশহরে। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়নি। আরও দুই বছর আগ থেকে সুমি তার চেয়ে ১০ বছরের ছোট সুজনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ায়। সুজনের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগে, সুমির শ্বশুরবাড়ির পাশে।