ঝিনাইদহে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা দেওয়ায় ৫ দিনের ব্যবধানে ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ইয়াদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি। এরমধ্যে দুইজন পুরুষ ও এক নারী রয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি জেলা সদরের পোড়াহাটি এলাকায় এক নারীকে ধর্ষনের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পিটিয়ে হত্যা করার পর তাকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশ হেফাজতে এসব হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে স্বিকারোক্তি দেয় আটক ইয়াদ মোল্লা। সে নড়াইল জেলার বিল ডুমুরতলা গ্রামের মৃত চান মোল্লার ছেলে।গতকাল শনিবার দুপুর ১২ টার দিকে তাকে নিয়ে পৃথক তিনটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা পুলিশের কর্তা ব্যক্তিরা। হত্যাকারী ইয়াদ মোল্লাও কিছুটা মানুষিক বিপর্যস্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ইয়াদ বেশ কিছুদিন ধরে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করত। রাতে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকার স্কুল কলেজ ও নির্জন স্থানে ঘুমাতো। গত প্রায় ১৫ দিন আগে জেলা সদরের লাউদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রাত্রি যাপন করে ইয়াদ মোল্লা ও সালাউদ্দিন নামে মানষিক ভারসাম্যহীন অপর এক ব্যক্তি। এই সময় সালাউদ্দিনকে সমকামিতার জন্য জবর দস্তি করে। তাকে রাজি করাতে না পেরে পাশ্ববর্তি মাঠে থাকা মেহগনি ডাল দিয়ে ঘুমন্ত সালাউদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যা করে স্কুলের সিড়ির নীচে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে রেখে দেয়।
এই ঘটনার পড় একই এলাকার তেতুলতলা এম কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় এলাকায় রাতে থাকতে শুরু করে। ওই স্কুলের বারান্দায় আগে থেকে রাত যাপন করে আসছিল ইলিয়াস পাটোয়ারি নামের এক ব্যক্তি। এখানেও সে সমকামিতার জন্য বাক-বিতন্ডা ও জবরদোস্তি করে। সমকামিতায় ব্যর্থ হয়ে রাতের এক পর্যায়ে ইলিয়াস পাটোয়ারীকে নলকুপের হাতল দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।
সেখানে থেকে চলে আসে শহর সংলগ্ন পোড়াহাটি গ্রামে। সেখানে ১০ ফেব্রুয়ারি পোড়াহাটি গ্রামে বাড়ির পাশ্ববর্তি স্থানে ছাগলের জন্য গাছের পাতা কাটতে যায় বিবি জান নামে এক গৃহবধু। সেসময় বিবি জানকে ধর্ষনের চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে তাকেও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ইয়াদ মোল্লা। পরে স্থানীয়রা টের পেয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় ওই নারী।এ ঘটনার পর সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ইয়াদ মোল্লাকে আটক করে র্যাব-৬ ঝিনাইদহ ক্যাম্পের টহল দল। ওই রাতেই ইয়াদ মোল্লার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করে সদর থানায় শপর্দ করে র্যাব।
এই বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার জানান, চলতি মাসে ৬ তারিখে তেতুলতলা এমকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯ তারিখে লাউদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে দুই ব্যক্তির রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি পোড়াহাটি এলাকায় এক নারীকে ধর্ষনের চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে হত্যা করার ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে ইয়াদ মোল্লা নামের ওয়ি ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
পরে হত্যা ও ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর ইয়াদ মোল্লাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই তিন জনকে হত্যার কথা স্বীকার করে। এরপর শনিবার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি ইয়াদ মোল্লাকেক নিয়ে। পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক ঘটনায় ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। এই তিন জনকে ধর্ষণ ও সমকামিতায় বাধা দেওয়াই হত্যা করা হয়েছে বলে ইয়াদ মোল্লা স্বীকার করেছে।
উল্লেখ্য, মৃতদেহগুলোর মধ্যে ৬ ফেব্রুয়ারি এম কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে উদ্ধার ইলিয়াস পাটোয়ারী চাদপুর জেলার কচুয়া থানার নুরপুর গ্রামের মৃত সিদ্দিক পাটোয়ারি ছেলে। ৯ ফেব্রুয়ারি লাউদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে উদ্ধার সালাউদ্দিন সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ থানার রহিমপুর গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে এবং ১০ তারিখে পোড়াহাটি গ্রামে হত্যার স্বীকার বিবি জান ওই গ্রামের আনা মিয়ার স্ত্রী।