Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ শনিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাজবাড়ী সদর থানায় স্বামীকে নির্যাতন, স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১০:৩৬ AM
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১০:৩৬ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


রাজবাড়ী সদর থানায় পুলিশের কাছ থেকে ধর্ষণের হুমকি পাওয়ার অভিযোগ করেছেন এক নারী। এ ঘটনায় তিনি পুলিশ সদর দফতরে আইজিপির কমপ্লেইন সেলে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিয়েছেন। ওই নারীর নাম তাপসী রাবেয়া। তার বাড়ি রাজবাড়ী সদরের বানিবহ ইউনিয়নে। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। 

তার অভিযোগ, সদর থানায় আটকে রেখে তার স্বামীকে নির্যাতন করেছে পুলিশ। এ সময় তাকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। তার স্বামীর নাম মেহেদী হাসান। তিনিও রাজধানীর একই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। বছর দু-এক আগে ভালোবেসে তাপসীকে বিয়ে করেন যশোরের ছেলে মেহেদী। জানা গেছে, ঘটনার শুরু একটি হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে। রাজবাড়ীর বানিবহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন আবদুল লতিফ মিয়া (৫৭)। তিনি এবারের ইউপি নির্বাচনে দল থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। গত বছরের ১১ নভেম্বর খুন হন লতিফ। লতিফের প্রতিবেশী তাপসী। সেই সুবাদে লতিফকে নির্বাচনী কাজে সহায়তা করছিলেন মেহেদী।

নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজনের তথ্যে জানা যায়, আবদুল লতিফ এলাকায় জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি মাঝেমধ্যে হত্যার হুমকি পেতেন। গত ১১ নভেম্বর রাতে বানিবহ বাজারে নির্বাচনী কাজ শেষে তিনি মোটরসাইকেলে করে মেহেদীকে তার বাড়িতে নামিয়ে দিতে যান। রাত পৌনে ১২টার দিকে হঠাৎ পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যায়। মেহেদীকে তার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যাওয়ার পর পরই আবদুল লতিফকে সামনে থেকে দুটি গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে এগোতে থাকলে তাকে পেছন থেকে আরও তিনটি গুলি করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার সময় পথে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে আবদুল লতিফ তার ওপর হামলাকারী হিসেবে মোর্শেদ, সীমান্ত, মনির, লিটন, জাকারিয়া, হোসেন, মুন্সীসহ কয়েকজনের নাম বলে যান। তার এ-সংক্রান্ত কথা মোবাইল ফোনে রেকর্ডও করা হয়। 

মোর্শেদকে প্রধান আসামি করে কয়েকজনের নামে রাজবাড়ী সদর থানায় হত্যা মামলা করেন আবদুল লতিফের স্ত্রী শেফালী আক্তার। স্বামীর মৃত্যুর পর শেফালী বানিবহ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এখন দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, প্রধান আসামি মোর্শেদের বাবার নাম হাবিবুর রহমান। তিনি বানিবহ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা। এখন পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলার তদন্ত এখনো চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তদন্তের সূত্র ধরে আবদুল লতিফের সহযোগী মেহেদীকে আটক করার কথা বলছে পুলিশ।

তাপসী গণমাধ্যমকে বলেন, হত্যাকান্ডের সময় মেহেদী বাড়ির ভিতরে ছিলেন। চিৎকার শুনে শুরুতে তাদের ধারণা হয়েছিল, বাড়িতে হয়তো ডাকাত পড়েছে। পরে বাইরে বেরিয়ে দেখা যায়, রক্তাক্ত আবদুল লতিফকে ধরাধরি করে তাদের বাড়ির ভিতরে আনছেন লোকজন।

হত্যাকান্ডের এক সপ্তাহ পর এক রাতে রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাদের বাড়িতে আসে। বাড়িতে এসে মেহেদীর সঙ্গে কথা বলতে চান পুলিশের এসআই হিরণ কুমার বিশ্বাস। পরে মেহেদীকে সঙ্গে নিয়ে যায় পুলিশ। ওই রাতে মেহেদী আর বাড়িতে ফেরেননি। পরদিন রাজবাড়ী সদর থানা, পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অফিসে স্বামীর খোঁজ করেন তাপসী। তাপসী বলেন, থানায় গিয়ে দেখি, মেহেদীকে বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে পুলিশ। পেটাতে পেটাতে তারা মেহেদীকে বলছে, ‘স্বীকার কর যে তুই লতিফ চেয়ারম্যানকে গুলি করেছিস।’ থানায় গেলে আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় পুলিশ। আমাকে ও মেহেদীকে পাশাপাশি দুটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। মাঝে কাচের দেয়াল ছিল। আমি সব দেখতে ও শুনতে পাচ্ছিলাম। আবদুল লতিফ হত্যার ঘটনায় মেহেদীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। পুলিশ মেহেদীকে মারধর করছিল আর তাকে বলছিল- ‘অস্ত্র কোথায় আছে বল? তোর বউ এখানে আছে। ওর নামেও মামলা দেব। স্বীকার কর যে তুই খুন করেছিস। মারতে মারতে মেহেদীকে আমার কাছে নিয়ে আসে। মেহেদী আমাকে বলে- আমি তো কিছু করিনি।’

তাপসীর ভাষ্য, পুলিশ মেহেদীর দাড়ি ধরে জোরে টান মারে। তার নখ তুলে ফেলে। ছয় থেকে সাতজন পুলিশ মিলে বুট জুতা দিয়ে মেহেদীকে মেঝের সঙ্গে চেপে ধরে। পুরো সময় মেহেদীর চোখ বাঁধা ছিল। মাঝরাতে পুলিশ বলে- মেহেদীকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে। তাপসীর সামনে দিয়ে তার স্বামীকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর মেহেদীকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়। তাকে যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল, সেখানে ভোর ৪টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দীন, ওসি শাহাদত হোসেন, গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক প্রাণবন্ধু বিশ্বাস, এসআই হিরণ কুমার বিশ্বাস প্রবেশ করেন। ঢাকা থেকে আরেক পুলিশ সদস্য এসেছিলেন। তিনি আমার গা ঘেঁষে বসেন। অন্যরা আমাকে ঘিরে বসেন। আমার, মেহেদী ও আমাদের সন্তানের নামে তারা আজেবাজে কথা বলছিলেন। এমনকি আমার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে দাবি করে তারা নানা অশ্লীল মন্তব্য করেন। আমি বসে ছিলাম। আমাকে উঠে দাঁড়াতে বলা হয়। জানাই, আমি দুই মাসের গর্ভবতী। এ কথা শুনে একজন ছাড়া পুলিশের অন্য সদস্যরা কক্ষটি থেকে চলে যান। কিন্তু আমার গা ঘেঁষে যিনি বসেছিলেন, তিনি থেকেই যান। তাকে ইঙ্গিত করে পুলিশের অন্য সদস্যরা বলেন- ওকে আপনার দায়িত্বে দিয়ে গেলাম। এরপর তারা দরজা লাগিয়ে চলে যান। অন্যরা চলে গেলে ওই পুলিশ সদস্য আমাকে বলেন- আমারে চিনস? তার হাতে দুটো মোবাইল ছিল। তিনি বলেন- ‘কিছু দেখবি?’ আমি বুঝতে পারিনি। আমি বলি, কী দেখব? তখন আমাকে উনি বলেন- ‘তুই কি র‌্যাপ হইতে চাস?’ এ কথা শুনে আমি তার হাতে-পায়ে ধরি। আমার ক্ষতি না করতে অনুরোধ করি। তখন ওই পুলিশ সদস্য আমাকে একটা চড় মেরে বেরিয়ে যান। তাপসী বলেন, এভাবেই রাতটা কেটে যায়। পরদিন সকাল ৮টার দিকে তার বাবা থানায় আসেন। তখনো তার ও মেহেদীর অবস্থান নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছিল। এক পর্যায়ে তিনি জানালা দিয়ে তার বাবাকে ডাকেন। এরপর সাদা কাগজে মুচলেকা দিয়ে তিনি তার বাবার সঙ্গে বাড়িতে ফেরেন। আর মেহেদীকে পাঠানো হয় কারাগারে।

Bootstrap Image Preview