Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আমি নারী, আমি জানি আপনি কি ভালো মেয়ে?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০৯:১১ AM
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০৯:১১ AM

bdmorning Image Preview


আইরিন আঁচল।। ‘ভিকটিম ব্লেমিং’তো পুরনো আলোচনা। কিন্তু এ নিয়ে নতুন হাওয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে গেলেই তা বুঝা যায়। বিষয় যেন এমন নারী অন্যায়ের শিকার হলেও তাকে ‘ভালো’ মেয়ে হতে হবে আগে। ‘ভালো’ মেয়ে না হলে মিলবে না বিচার কিংবা সহমর্মিতা।

বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে যেও। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে রাত কাটাতে হবে না। মানুষ কি বলবে এতরাত বাইরে থাকলে। এই কথাগুলো অধিকাংশ মেয়ের কাছেই বেশ পরিচিত।কারণ মেয়েদের চলাফেরায় রয়েছে হাজারো বাধা। আর সামাজ তো বলে মেপে পা ফেলতে। পান থেকে চুন খসলেই যে কেউ হয়ে যেতে পারে খারাপ মেয়ে।

আমরা আশেপাশে প্রায়শই বলতে শুনি, ওই বাড়ির মেয়ে ভালো আর ওই বাড়ির মেয়ে খারাপ। ঠিক কি করলে ভালো আর খারাপ হয়ে যায় একটা মানুষ? তথাকথিত সমাজব্যবস্থায় নারীকে চারদেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা হতো। বাইরে চলাচল ছিল সীমিত। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেগুলোর পরিবর্তন ঘটেছে। তবে পরিবর্তন ঘটেনি মানসিকতার।

সীমা আক্তার বয়স ১৯। দীর্ঘদিন একটা সংস্থার সঙ্গে ভলান্টিয়ারি করছেন। তার ঘরে ফেরার কোনো সময়-সীমা নেই। কাজের ও চলাফেরার সুবিধার জন্য জিন্স টপসেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন। বন্ধুদের সঙ্গেই হরহামেশাই চলতে হয়। তার চিন্তা-ভাবনা পুরোটা জুড়ে গবির-দুঃখীদের উন্নয়ন। বিপদে পাশে দাঁড়ানো। অন্যায়ের প্রতিবাদতো আছেই। আচ্ছা জিন্স-টপস পরা, রাতে বাড়ি ফেরা মেয়েটিও কি ভালো মেয়ে? এই মেয়ের ফোন পাওয়া মানেই আপু রক্ত লাগবে? আপু এই মানুষটা খুব বিপদে কিছু সাহায্য কর না প্লিজ! তবে মেয়েটা ভালো হোক কিংবা না সমাজের চোখে তিনি উচ্ছৃঙ্খল।

অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে, উচ্চস্বর তুললে খারাপ হয়ে যেতে হয়। অথচ পর্দা করে অন্যায় সয়ে চুপ থাকলে ভালো মেয়ে। আবার পর্দা করেও যদি কেউ জোর গলায় কথা বলে তাকে বলা হয় নামমাত্র পর্দা করে। ভেতরটা নষ্ট। ঠিক কতটা বাড়াবাড়ি করলে ভেতরটা নষ্ট হয়? আমি পর্দা বিরোধী একেবারেই নই। বরং আমি বলতে চাই পর্দা হোক নারীর স্বাধীনতা।

ভালো মানুষকে নানাভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যারা নম্র, ভদ্র বিনয়ী, অন্যের ক্ষতি করে না মূলত তারাই ভালো মানুষ। এগুলোই যদি ভালো মানুষের সংজ্ঞা হয় তাহলে পোশাক- পরিচ্ছদ কিংবা বাইরে ঘুরে ফেরা একটা নারীকে কেন খারাপ মানুষের তালিকায় ফেলা হয়? এই বিচার করার কারণে অনেকেই নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে আর শেষ পর্যন্ত উজ্জীবিত করতে পারেন না। লোকলজ্জা, সমাজের ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন।

ভালো-খারাপের তর্কে গেলে যুক্তিসঙ্গত উত্তর হয়তো মেলানো কষ্ট। কারণ ভালো-খারাপের সংজ্ঞা ব্যক্তিভেদে আলাদা। সেই হিসেবে নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল যে আসলেই ভালো খারাপ বলতে সমাজ ঠিক কি বোঝায়। কারণ এই সমাজে একজন নারীও প্রায়শই অপর নারীকে প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। ছুড়ে দেন অসংখ্য প্রশ্ন। আড় চোখ।

আপনি নিয়মিত শিক্ষার্থী। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বাইরে সময় দেন না। আপনি একপক্ষের কাছে ভালো। অপরপাশে আপনি গান করেন, নাচতে ভালোবাসেন। পাড়ায় অনুষ্ঠান হলে সেখানে অংশগ্রহণ করেন। অপরপক্ষের নিকট আপনি উচ্ছৃঙ্খল, খারাপ। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই আপনি ভালো মেয়ে তো? কারো বিপদে পাশে দাঁড়াতে জানেন তো?

Bootstrap Image Preview