Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ব্যস্ত মহাসড়কে শত শত মানুষের চলাচল থাকলেও আফসানাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কেউ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০৮:২৭ PM
আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০৮:২৭ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


সাভারে চালকের বাগবিতণ্ডায় অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে ছটফট করতে করতে প্রাণ হারাল ৯ বছরের এক শিশু। ব্যস্ত মহাসড়কে শত শত মানুষের চলাচল থাকলেও অসহায় পরিবারটিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি কেউ। বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কের আশুলিয়ার বাইপাইলে মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।  

রাজধানীর মহাখালীর ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে দুপুরে শিশু আফসানাকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সটি গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায় ফিরছিল। পথে আশুলিয়ার-বাইপাইলে  ওভারটেকিংয়ের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অ্যাম্বুল্যান্সের চালককে মারধর করেন একটি মাইক্রোবাসের চালক। একপর্যায়ে অ্যাম্বুল্যান্সের চাবিটিও ছিনিয়ে নেন তিনি।

পরিবারের সবাই অনুনয় করে অসুস্থ শিশুর কথা বলছিল বারবার। তবু মাইক্রোবাসের চালকের মন গলাতে পারেনি। উল্টো তাঁর আরো কয়েকজন সহযোগীকে ফোনে ডেকে এনে অ্যাম্বুল্যান্সচালককে মারধর করতে থাকেন। ততক্ষণে ছটফট করতে করতে বাবার কোলেই মৃত্যু হয় শিশু আফসানার।

নিহত শিশু আফসানা আক্তার গাইবান্ধা জেলার সদর থানার মধ্য ধানগড়ার সাপলামিল এলাকার আলম মিয়ার মেয়ে। প্রায় চার মাস ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলে। সেখান থেকে ঢাকার মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে রেফার্ড করলে শিশু আফসানাকে নিয়ে ঢাকায় আসে পরিবার। ডাক্তার দেখিয়ে আজ মঙ্গলবার অ্যাম্বুল্যান্সে করে গ্রামের বাড়ি ফিরছিল তারা।

খবর পেয়ে পাশে থাকা ট্রাফিক পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে এসে অ্যাম্বুল্যান্সের চাবি সংগ্রহ করলেও অভিযুক্ত মাইক্রোবাসের চালকসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। তবে জব্দ করা হয় মাইক্রোবাসটি। তবে দীর্ঘ সময় পর অ্যাম্বুল্যান্সের চাবি পেয়ে পাশের নারী ও শিশু হাসপাতালে ছুটে যায় শিশুর নিথর দেহ নিয়ে। কর্তব্যরত চিকিৎসক নিশ্চিত করেন, হাসপাতালে আসার আগেই শিশু আফসানার মৃত্যু হয়েছে।

নিহত শিশুর বাবা আলম মিয়াবলেন, 'আমার মেয়ে ক্যান্সারের রোগী। রংপুর থেকে মহাখালীতে ডাক্তার দেখিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করে বাড়ি ফিরছিলাম। সাইট না পেয়ে মাইক্রোবাসের লোকজন অ্যাম্বুল্যান্সের ড্রাইভারকে মারধর শুরু করে। চাবি নিয়ে যায় তারা। দীর্ঘ সময় ধরেও চাবি ফেরত পাইনি। একসময় আমার মেয়ে অ্যাম্বুল্যান্সেই মারা গেল। '

প্রত্যেক্ষদর্শী পারভেজ বলেন, 'ঘটনার সময় অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিল। অনেকেই বলেছি চাবি ফেরত দিতে। কিন্তু তারা দেয়নি। এটার বিচার হওয়ার দরকার। মাইক্রোবাস চালকের কারণেই শিশুটির করুণ মৃত্যু হয়েছে। '

অ্যাম্বুল্যান্সচালক মারুফ হোসেন বলেন, 'অ্যাম্বুল্যান্সের সামনে মাইক্রোবাস দিয়ে রাস্তা আটকে দেয়। সেটার চালক নেমেই মারধর শুরু করে। অনেকবার অনুরোধ করে বলেছি, অ্যাম্বুল্যান্সে জরুরি রোগী আছে। কোনো কথা শুনে নাই। ফোন দিয়ে আরো লোকজন নিয়ে আসছে। পরে ৯৯৯-এ ফোন দিই। পুলিশ এসে চাবি সংগ্রহ করে দেয়। তবে আমার রোগী মারা যায়। চাবির নেওয়ার প্রায় ৩০ মিনিট পর চাবি পাই। '

পুলিশ জানায়, এর আগে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের নরসিংহপুর বাসস্ট্যান্ডে সাইড দেওয়া না দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে অ্যাম্বুল্যান্স ও মাইক্রোবাসের চালক। সেই সূত্র ধরে বাইপাইলে অ্যাম্বুল্যান্সের গতিরোধ করে মাইক্রোবাসটি। অভিযুক্ত মাইক্রোবাসের চালকের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁর নাম নজরুল ইসলাম। তিনি আশুলিয়ার বাইপাইলে আব্দুল মজিদের মালিকধীন মাইক্রোবাসটি রেন্ট-এ কারের চালক। তাঁর সঙ্গের অন্যদের প্রাথমিকভাবে নামও জানা গেছে।

আশুলিয়া থানার এসআই সামিউল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতাল থেকে নিহত শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শেষে ঊর্ধ্বতন অফিসারের সঙ্গে পরামর্শ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া অভিযুক্ত চালকসহ সকলের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Bootstrap Image Preview