Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ভূমধ্যসাগরে ঠাণ্ডায় মৃত্যু: ‘দালাল বলছে, এখনো বেঁচে আছে’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারী ২০২২, ০৭:৫৯ PM
আপডেট: ৩১ জানুয়ারী ২০২২, ০৭:৫৯ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জমে গত সপ্তাহে মারা যাওয়া সাত বাংলাদেশির মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি মাদারীপুর জেলার মাদারীপুর সদর উপজেলায়। একজনের বাড়ি সুনামগঞ্জে এবং আরেকজনের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, মারা যাওয়া ওই বাংলাদেশিদের সঙ্গে পরিচয় শনাক্তকারী কোনো ধরনের ডকুমেন্ট না থাকায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে ওই বাংলাদেশিদের সঙ্গে ইতালির ল্যাম্পেডুসায় পৌঁছা অন্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে মৃত সাতজনের তথ্য পাওয়া গেছে।

ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, মৃতদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি ছয়জনের পরিচিতরা উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন। মৃতদেহগুলো সরকারি খরচে দেশে ফেরত পাঠাতে হলে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত হতে হবে। পরিচয় নিশ্চিত করতে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়/উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় বা ইতালির রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের কল্যাণ শাখার ইমেইলে (welfare.romegmail.com) যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়েছে।

মাদারীপুরের মারা যাওয়া পাঁচজন হলেন, সদর উপজেলার পশ্চিম পেয়ারপুর এলাকার ইমরান হাওলাদার (২৩), একই ইউনিয়নের বরাইলবাড়ি এলাকার জয় তালুকদার (১৮), মস্তফাপুর ইউনিয়নের চতুরপাড়া এলাকার জহিরুল ইসলাম শুভ (২০), বাপ্পি,  রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের উমারখালী এলাকার সাফায়েত মোল্লা (২০)। সুনামগঞ্জের মারা যাওয়া সাজ্জাদ আহমেদের (২৪) বাড়ি জামালগঞ্জ উপজেলার ভিমখালি ইউনিয়নের ফেকুল মামুদপুর গ্রামে। আর সাইফুলের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বেগনাবাজ গ্রামে।

তাঁদের স্বপ্ন ছিল ইতালি যাবেন। সংসারের অভাব দূর করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় ভূমধ্যসাগরে।

মাদারীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম পেয়ারপুর এলাকার ভ্যানচালক শাজাহান হাওলাদারের ছেলে ইমরান হাওলাদার। তাঁর মারা যাওয়ার খবর এখনো জানেন না পরিবারের সদস্যরা। দালালরা আশ্বাস দিচ্ছেন, ইমরান এখনো বেঁচে আছেন।

ইমরান হাওলাদারের পরিবারের সদস্যরা জানান, স্থানীয় দালাল সামাদ বেপারীর প্রলোভনে পড়ে চার লাখ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে গত বছর অক্টোবরের ২৫ তারিখে দেশ ছাড়েন ইমরান। ডুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছে সিলেটের আহম্মেদ নামের আরেক দালালের মাধ্যমে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে ২৪ জানুয়ারি গভীর রাতে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির লাম্পেডুসা দ্বীপের উদ্দেশে রওনা দেন ইমরান। দালাল বলেছিলেন ইমরান ইতালিতে পৌঁছাতে পেরেছেন। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকায় তিনি ওখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গতকাল রবিবার সকালে ইমরানের বাড়ি গিয়ে জানা গেল, তারা কেউ জানেন না তাঁর মৃত্যুর খবর। ইমরানের মা জামিলা বেগম বলেন, ‘আমার ইমরান মরেনি। দালাল কইছে আমার ইমরান অসুস্থ, তাই হাসপাতালে আছে। আপনেরা সবাই দোয়া করবেন আমার ইমরান যেন সুস্থ হইয়া যায়। ’

মাদারীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, ‘ইতালিতে প্রবেশের সময় মাদারীপুর জেলার পাঁচজন মারা গেছেন। সে বিষয়ে ইতালির দূতাবাস আমার সঙ্গে কথা বলেছে। মারা যাওয়াদের সঠিক তথ্য দূতাবাসকে জানালে তারা দ্রুত ওই পাঁচটি লাশ দেশে পাঠিয়ে দেবে। ’

‘আমার ছেলেরে আইন্যা দেও’

এদিকে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে নির্বাক হয়ে গেছেন সুনামগঞ্জের সাজ্জাদ আহমেদের মা রহিমা খাতুন। শুধু বিলাপ করছেন তিনি। প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেরাও কেঁদে ফেলছেন। ছেলেহারা বাবা নূরুল আমিনও নিশ্চুপ। সরকারের কাছে তাঁর অনুরোধ, মৃত ছেলেকে ফিরিয়ে এনে একবার দেখার সুযোগ করা দেওয়া।

দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে তীব্র ঠাণ্ডায় জমে মারা যান সাজ্জাদ আহমেদ (২৪)।

সাজ্জাদ আহমেদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ৩ ডিসেম্বর লালুখালি গ্রামের ফয়জুর রহমান ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার ধনপুর গ্রামের রফিক মিয়ার মাধ্যমে আট লাখ টাকা চুক্তিতে সাজ্জাদকে লিবিয়া হয়ে ইতালির উদ্দেশে পাঠান বাবা নূরুল আমিন।

Bootstrap Image Preview