Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ শনিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ড্যাটিং অ্যাপে সুন্দরী নারীদের ফাঁদ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারী ২০২২, ০৮:৫৭ PM
আপডেট: ১২ জানুয়ারী ২০২২, ০৮:৫৭ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


গুগল প্লে-স্টোর থেকে ডেটিং অ্যাপ টিন্ডার ডাউনলোড করেছিলেন সাকিবুল হাসান রাকিব (৩৫)। এই অ্যাপের মাধ্যমে তার পরিচয় হয় সোনিয়া মেহের নামের ১৮ বছর বয়সী এক তরুণীর সঙ্গে। পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে নিয়মিত কথাবার্তা শুরু হয়। কিছুদিন পর দু’জনের মধ্যে সখ্যতা বাড়ে। সেই সখ্যতা প্রেমের দিকে গড়ায়। হোয়াটসঅ্যাপে নম্বর নিয়ে চ্যাটিং, ভিডিও কল, অন্তরঙ্গ কথাবার্তা হতো। কিন্তু ভার্চ্যুয়ালি কথা বলে তাদের মন ভরছিল না। আরও কিছুদিন যাওয়ার পর রাকিব তার প্রেমিকার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।রাজি হয়ে যান প্রেমিকা সোনিয়া মেহের। দেখা করার দিনক্ষণ, সময় ও স্থান ঠিক করেন। চতুর প্রেমিকা সোনিয়া দেখা করার জন্য একটা নির্জন স্থানের ঠিকানা দেন রাকিবকে। কাঙ্ক্ষিত সেই দিনটির অপেক্ষা করতে থাকেন রাকিব।

নির্ধারিত দিনে সোনিয়ার দেয়া স্থানে দেখা করতে যান রাকিব। কথা ছিল তারা দু’জন মিলে নির্জন ওই স্থানে একান্তে সময় কাটাবেন। কিন্তু রাকিবের ভাগ্যে আর সেটি জুটেনি। কে জানতো যাকে ভালোবেসে স্বপ্ন দেখে দেখে দিন-রাত কাটিয়েছেন সেই সোনিয়া অপহরণকারী চক্রের সদস্য। দেখা করতে যাওয়ার পর ওই চক্রের সদস্যরা রাকিবের চোখ মুখ বেঁধে নিয়ে যায় গোপন আস্তানায়। মারধর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে আদায় করে লাখ লাখ টাকা। সম্প্রতি ড্যাটিং অ্যাপে সুন্দরী নারীদের দিয়ে ফাঁদ পেতে টাকা আত্মসাৎকারী অপহরণকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবি জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সোনিয়া মেহের (১৮), তার বাবা আব্দুল জলিল হাওলাদার (৫৬) ও মো. ইউসুফ মোল্লা (৪৩)। ভুক্তভোগীর করা যাত্রাবাড়ী থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে সোনিয়া পেশায় অপহরণকারী চক্রের সদস্য ও কলগার্ল। আব্দুল জলিল হাওলাদার ও ইউসুফ মোল্লা পেশাদার অপহরণকারী। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন ও ৮টি সিম উদ্ধার করা হয়।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সোনিয়া মূলত একটি অপহরণ চক্রের সদস্য ও কলগার্ল। রাকিব দেখা করতে যাওয়ার পরে সুকৌশলে সোনিয়া ও তার চক্রের সদস্যরা রাকিবকে তাদের গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে একটি অচেনা এলাকার ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। চোখ খোলার পর রাকিব দেখতে পায়, সেখানে শুধু সোনিয়াই নয় সেই অপহরণ চক্রের আরও কয়েকজন নারী ও ৫/৬ জন বিভিন্ন বয়সী পুরুষ উপস্থিত। রাকিব কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৫/৬ জন পুরুষ রাকিবের ওপর শারীরিক নির্যাতন করতে শুরু করে। চরম নির্যাতনের একপর্যায়ে রাকিবের সঙ্গে আপত্তিকরভাবে চক্রের নারীদের কিছু ছবি ও ভিডিও করা হয়। ছবি তোলা ও ভিডিও করা শেষে চক্রের সদস্যরা রাকিবের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে অপারগতা জানায় রাকিব। এতে করে চক্রের সদস্যরা তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় অপহরণকারীরা। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রাকিব তার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা এনে অপহরণকারীদের দেয়। কিন্তু তাতেও মন গলেনি তাদের। তারা আরও টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে তাদের কাছে মুক্তির আকুতি-মিনতি করে রাকিব। পরে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও তাদের হেফাজতে রেখে রাকিবকে মুক্তি দেয় তারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মুক্তি পেয়েও রক্ষা হয়নি রাকিবের। কিছুদিন পর অপহরণকারীদের কাছ থেকে কল আসে রাকিবের মোবাইলে। তারা পূর্বের ধারণকৃত ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও তার আত্মীয় স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে হেয় করবে বলে হুমকি-ধমকি দিয়ে আরও টাকা দাবি করে। উপায়ান্তর না পেয়ে রাকিব পুলিশ ও ডিবির সহযোগিতা নেয়। ঘটনার বিবরণ দিয়ে থানায় অভিযোগ করে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবি জানিয়েছে, শুধু রাকিবের ক্ষেত্রে যে এমনটা হচ্ছে তা নয় ডেটিং অ্যাপ টিন্ডার, টানটান, মামবা ব্যবহার করে অনেক নারী পুরুষই এখন প্রতারণার ফাঁদে পড়ছেন। এসব অ্যাপ ঘিরে ফাঁদ পেতে রেখেছে অপহরণকারী ও প্রতারক চক্র। এসব চক্রের সদস্যরা বিভিন্নভাবে মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রত্যাশিত টাকা আদায় করতে না পারলে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলছে। ডিবি বলছে, এ ধরনের অনেক চক্র ডেটিং অ্যাপ দিয়ে প্রতারণা করছে। এজন্য টিন্ডার, টানটান, মামবা, বাম্বল, হিটচ, ট্রুলি ম্যাডাল, ওও, ক্যুপিডের মতো ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে সঙ্গী খোঁজার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।

ডিবি আরও জানায়, এই চক্রের গ্রেপ্তার তিনজনের আলাদা আলাদা কাজ ছিল। সোনিয়া মেহের ডেটিং অ্যাপে ত্রিশ ঊর্ধ্ব ছেলেদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে প্রথমে বন্ধুত্ব করে। পরে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর নিয়ে কথা বলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতো। অন্তরঙ্গ কথা বলে ছেলেদের তার প্রতি দুর্বল করতো। ছেলেরা দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করলে চক্রের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের সুবিধামতো স্থানে দেখা করার কথা বলতো।

ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ফাইন্যানসিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মহিদুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে অপহরণের মতো ঘটনা ঘটছে। কিছু চক্র সুন্দরী নারীদের দিয়ে ফাঁদ পেতে ছেলেদের অপরহরণ করিয়ে নির্যাতন করে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে। আমাদের কাছে এ ধরনের বেশকিছু অভিযোগ আসার পর তদন্ত করে এর সত্যতা পেয়েছি।

Bootstrap Image Preview