Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ শনিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

১০ মিনিটের জন্যও বাবাকে চোখের আড়াল হতে দিচ্ছে না মাহিদা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২১, ০২:২৯ PM
আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২১, ০২:২৯ PM

bdmorning Image Preview


“জানেন ভাই, মেয়েটা একটা আইসক্রীম খেতে গেলেও আমাকে খোঁজে। এখনতো হাসপাতালের বেডের পাশ থেকে ১০ মিনিটের জন্যও ওর চোখের আড়াল হতে পারি না। আমাকে না দেখলে ঔষধও মুখে দেয় না”, কথাগুলো বলছিলেন মাহিদার বাবা খন্দকার মারুফুর রহমান। তার কথার প্রতিটা শব্দ কান্না হয়ে বের হচ্ছিল।

এরপর আরো বললেন, “সবচেয়ে বড় কষ্ট, মেয়েটা কিভাবে যেন জেনে গেছে ওর ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে, চিকিৎসা না পেলে বাঁচবেনা। আমাকে কখনো জিজ্ঞাসা করেনা আমি বাঁচবো কি না, শুধু কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে, আমি ওর চোখের দিকে তাকাতে পারি না। ক্যামো দেয়ার পর প্রচন্ড খারাপ শরীরেও তার চিন্তা স্কুল খুলে গেছে, সামনে জেএসসি পরীক্ষা। তাই আমাকে বলে রেজাল্ট খারাপ হলে কিন্তু মন খারাপ করবে না, কতদিন পড়তে পারছিনা“।

মাহিদার পুরো নাম মেহজাবীন খন্দকার মাহিদা। সাভারের স্বর্ণকলি আদর্শ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী। তার ১৪ বছরের ছোট শরীরটা হাসপাতালের বেডে ক্যামোর যন্ত্রনায় ব্যাথায় কুকড়ে আছে। ক্যামোর প্রভাবে এখন যেন নড়াচড়ার শক্তিও নেই। অথচ মাত্র আড়াই মাস আগেও ছিল সে সুস্থ সবল। যেই মেয়েটা কখনো কোন বড় অসুখে পড়েনি তারই এখন ব্লাড ক্যান্সার।

মাহিদার বাবা খন্দকার মারুফুর রহমান সাভারের আল মুসলিম গার্মেন্টসের স্যাম্পল ম্যান। তারা থাকেন সাভারের আড়াপাড়ায়। তার দুই সন্তানের মধ্যে মাহিদা বড় এবং ছোট একটি ছেলে আছে। ছোট ছেলেটিকে নানীর কাছে রেখে তারা স্বামী-স্ত্রী মাহিদাকে নিয়ে এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে দৌড়ে বেরাচ্ছেন। এক অসহায় বাবা জানেননা মেয়েকে সুস্থ করতে কতদিন লাগবে, কত টাকা লাগবে।

মাহিদার অসুখটার নাম একিউট লিম্ফোবাস্টিক লিউকেমিয়া। এটা একধরনের ব্লাড ক্যান্সার। ডাক্তাররা বলেছে ওর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তবে তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা চালাতে হবে। একটি গার্মেন্টস কোম্পানীর স্যাম্পলম্যান বাবার পক্ষে এই দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা কোনভাবেই চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। ইতোমধ্যে তার টেস্ট, চিকিৎসা, ক্যামো দেয়া বাবদ প্রায় চার লক্ষ টাকা্র বেশি খরচ হয়ে গেছে। নিজের জমানো সব টাকা সন্তানের জন্য ব্যয় করেছেন এক অসহায় বাবা। আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধব অনেকেই তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাই তিনি এখন স্বপ্ন দেখছেন হয়তো সকলের সহযোগীতা পেলে আল্লাহর রহমতে মাহিদাকে আবার সুস্থ করা সম্ভব হবে, আবার মাহিদা স্কুলে যেতে সক্ষম হবে।

গত আগষ্ট মাসের ২৬ তারিখ প্রথম মাহিদার ঘাড়ের পিছনে বাম পাশে একটি রগ ফুলে যায়। ওই দিন ওর বাবা ওকে সাভার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান, সেখান থেকে পরে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই হাসপাতাল থেকে পরবর্তীতে তাকে শাহবাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে ডায়াগনোসিসে মাহিদার শরীরে ক্যান্সার ধরা পরে। দেরি না করে খুব দ্রুতই ডাক্তাররা তার চিকিৎসা শুরু করেন। পিজির হেমোটলজি বিভাগের প্রফেসর ডাক্তার আতিকুর রহমানের তত্ত্বাবধানে অক্টোবরের সাত থেকে সতেরো তারিখ পর্যন্ত মাহিদাকে সাতটি ক্যামো দেয়া হয়।  

মাহিদার ছোট শরীরটা অনেকগুলো ক্যামোর ধকল সহ্য করতে পারেনি, ফলে ওর শরীর খুবই খারাপ হয়ে যায়। একদিকে টাকার সমস্যা অন্যদিকে শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাকে পিজি হাসপাতাল থেকে সাভারের জামাল ক্লিনিকে ভর্তী করা হয়। কিন্তু অবস্থা ক্রমেই খারাপ হলে তাকে আবার সাভার এনাম মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। সেখানে এমআরআই করে জানা যায় তার ব্রেন স্ট্রোক হয়েছিল। এই সময়ে তার কিছু আত্মীয় পরিজন ও এলাকার বন্ধু-বান্ধবরা মাহিদার চিকিৎসা সহযোগীতায় এগিয়ে আসে। এর ফলে তার চিকিৎসা চলছে এবং ইতোমধ্যে স্ট্রোকের ধাক্কা মেয়েটা অনেকটাই রিকভার করেছে।

কিন্তু শরীরে যেহেতু বাসা বেধেছে ক্যান্সার তাই ট্রিটমেন্টতো করতেই হবে। আবার চিকিৎসার জন্য রয়েছে অর্থের অপ্রতুলতা। তাই মাহিদাকে চিকিৎসার জন্য পুনরায় নভেম্বরের ৩ তারিখে মিরপুরের আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তী করা হয়েছে। সে এখন কেবিন নাম্বার ৫০৮ এ আছে। সেখানে গতকাল ৬ নভেম্বর তাকে পুনরায় একটি ক্যামো দেয়া হয়েছে। যেহেতু ডাক্তাররা আশাবাদী তাই মাহিদার বাবাও আশা করছেন যদি সমাজের বিত্তবানরা এই ছোট মেয়েটির চিকিৎসায় এগিয়ে আসেন তাহলে হয়তো ওকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে সরাসরি মাহিদার বাবার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরগুলিতে ০১৭০৩২২২৪২৫ (বিকাশ ও নগদ), ০১৩২২০৪৩২৫১ (বিকাশ ও রকেট)। এছাড়াও মাহিদার বাবার ব্যাংক হিসাবেও সাহায্য পাঠাতে পারেন। ঠিকানা - হিসাবের নামঃ খন্দকার মোঃ মারুফুর রহমান, হিসাব নম্বরঃ ১৮১৪০৬১০১০১, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, গুলশান শাখা, রাউটিং নম্বর-২১৫২৬১৭২৬।

Bootstrap Image Preview