Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘তদবির’ করার আগে দেখা করতেই লাগত এক লাখ টাকা !

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ অক্টোবর ২০২১, ১২:৩৬ PM
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২১, ১২:৩৬ PM

bdmorning Image Preview


জিপ গাড়ির ব্র্যান্ড ‘প্রাডো’। গাড়িতে সাঁটা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্টিকার। চারপাশে দেহরক্ষী, সবার হাতে ওয়াকিটকি। রাজধানীর গুলশানের ১ নম্বর সেকশনের জব্বার টাওয়ার। সেই ভবনে মাসিক পাঁচ লাখ টাকা ভাড়ায় আলিশান অফিস তাঁর। কারওয়ান বাজারেও বিলাসবহুল অফিস আছে আরেকটি। গুলশানেই তাঁর অভিজাত ফ্ল্যাট। কাজের ‘তদবির’ করার আগে শুধু তাঁর সঙ্গে দেখা করতেই গুনতে হতো এক লাখ টাকা নজরানা। তিনি আব্দুল কাদের। আভিজাত্যের  রং মেখে কাদের নিজের পরিচয় দিতেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘অতিরিক্ত সচিব’! আর এই পরিচয়ের খোলসে এত দিন চালিয়ে গেছেন ভয়ংকর সব ছলচাতুরি, রকমারি ফন্দিফিকির।

অবশেষে বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। তাঁকে ধরতে গেল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গুলশানের জব্বার টাওয়ারে অভিযানে নামে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দল। গ্রেপ্তারের পর সামনে আসছে কাদেরের নানা অপকীর্তির চাঞ্চল্যকর কাহিনি। কাদেরচক্রে রয়েছেন অন্তত ৩০ জন ভুয়া সচিব-সামরিক কর্মকর্তা। মাধ্যমিক পরীক্ষার গণ্ডি পেরোতে না পারলেও কাদের আলোচিত ব্যক্তি মুসা বিন শমসের এবং ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার সাবেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছিলেন। তাঁর প্রতারণায় বোকা বনেছেন অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিও।

অতিরিক্ত সচিবের নকল পরিচয় দিয়ে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ এনে দেওয়া, সরকারি চাকরিতে ঢোকানো এবং বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন কাদের।

ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতারক কাদের আগে একবার র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলেও পরবর্তী সময়ে জামিনে ছাড়া পেয়ে বড় পরিসরে ধান্দাবাজি শুরু করেন। কাদেরের নামে রাজধানীর গুলশান, উত্তরা, মতিঝিল ও শাহ আলী থানায় প্রতারণা, চেক জালিয়াতি, পাসপোর্ট জালিয়াতি, চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে রয়েছে সাতটি মামলা।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন উর রশিদ বলেন, ‘সচিবের ভুয়া পরিচয় দিয়ে সবাইকে বোকা বানিয়েছেন কাদের। জব্বার টাওয়ারের অফিসে মুসা বিন শমসেরের সঙ্গে কাদেরের বেশ কিছু ছবি আছে। আলোচিত সাহেদের মতোই তাঁর বিরুদ্ধে ভয়ংকর সব প্রতারণার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এমন আরো প্রতারকের তথ্য পেলে আমরা তাদেরও আইনের আওতায় আনব।’

ডিবি সূত্র জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সহযোগিতায় গুলশান ডিবি পুলিশ নজরদারি করে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কাদেরের ভাষ্য মতে, তাঁর চক্রে আরো ৩০ জন ভুয়া সচিব ও সামরিক কর্মকর্তা আছেন। তাঁরা প্রতারণা করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে সেনাবাহিনী পরিচালিত ঝিলমিল প্রকল্প এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের থানচি এলাকার সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করেও প্রতারণা করেছেন তাঁরা। দেহরক্ষী নিয়ে স্টিকার লাগানো গাড়িতে চলাফেরা করলেও কেউ তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখেনি। প্রতারক কাদের ২০১৫ সালে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে বেশ কিছুদিন জেলহাজতে ছিলেন। প্রতারণার ঢাল হিসেবে তিনি তাঁর অফিসে কর্মরত নারীদের ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলিং করতেন বলেও তথ্য পেয়েছেন ডিবির কর্মকর্তারা। তাঁর ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকার লেনদেন এবং আয়কর ফাঁকির তথ্য মিলেছে। ভুয়া পরিচয়ে তিনি দুটি পাসপোর্টও তৈরি করেছেন।

ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনার চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে ধরা পড়া সাহেদের মতোই বড় প্রতারক কাদের। তাঁর ব্যাপারে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলছে। তদন্তে তাঁর ও সহযোগীদের আরো অনেক প্রতারণা পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে।’

Bootstrap Image Preview