দেশের মৌলভীবাজার থেকে গাঢ় সবুজ রঙের গ্রীন পিট ভাইপার নামের একটি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানের একটি বাংলো থেকে সাপটি উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল জানান, সোমবার দুপুরে শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের এক মালি ফুল বাগানের পরিচর্যা করছিলেন। এ সময় তিনি একটি ফুলগাছের ডালে গাঢ় সবুজ রঙের সাপ দেখতে পান। এ ঘটনায় তিনি আতংকিত হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা বিষয়টি বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনকে বিষয়টি অবহিত করেন। খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে সাপটি উদ্ধার করা হয়।
স্বপন দেব সজল জানান, এ সাপটি বড় আকৃতির কিছু একটা খেয়ে নড়াচড়া করতে পারছিল না। সেটি উদ্ধার করে সেবা ফাউন্ডেশনে নেওয়ার কিছু সময় বমিও করেছে। বমির সঙ্গে বড় আকারের একটি কাঠবিড়ালি বেরিয়ে আসে। তখন অল্প কিছু সময় নির্জীব থাকার পর আবারও সেটি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। উদ্ধার হওয়া এ সাপটি লম্বায় তিন ফুট। পুরো শরীর গাঢ় সবুজ রঙের। তবে লেজের একদম নিচ দিকে- ছয় ইঞ্চির মতো লালা রঙের। দেখতে খুবই সুন্দর। সাপটিকে অতি যত্নে একটি প্লাস্টিকের বাস্কে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার ( ২৮ সেপ্টেম্বর) বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে সাপটিকে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করা হবে।
এদিকে, গ্রিন পিট ভাইপার সম্পর্কে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, পিট ভাইপার vipreidae গোত্রের বিষাক্ত সাপ। এই গোত্রের আরও দুটি উপগোত্র আছে। ভাইপার গোত্রের সব সাপের চোখ আর নাকের মাঝামাঝি স্থানে একধরনের পিট (Pit) বা গর্ত আছে দেখা যায়। এই পিট মূলত বিশেষ তাপ সংবেদী স্নায়ুতে পরিপূর্ণ যা সেন্সরের কাজ করে। যে সেন্সরে সাপেরা ইনফ্রারেড শনাক্ত করতে পারে। এই পিট সেন্সরের কারণেই সাপটির নাম পিট ভাইপার হয়েছে। এই সাপটি দেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের চিরসবুজ বনে দেখা যায়। সুন্দরবনেও এই সাপটি দেখার রেকর্ড আছে। সাপটি সবুজ বোড়া সাপ নামেও পরিচিত। পিট ভাইপারের তিনটি প্রজাতির তিনটিই সবুজ। এরা সাধারণত লম্বায় ২ মিটারের বেশি হয়। সাপটি মূলত নিশাচর, দিনের বেলায় ঘুমিয়ে বা ঝিমিয়ে কাটিতে দেয়। সূর্য ডোবার পর এরা শিকার করতে বের হয়।
তিনি বলেন, দেশের সব সাপের মধ্যে সবুজ রঙের এই সাপটি দেখতে অপূর্ব সুন্দর। সাপটি সাধারণত ব্যাঙ, পাখি, ইঁদুর ইত্যাদি উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে। তবে এর প্রধান খাদ্য ইঁদুর। সাধারণত উষ্ণ রক্তের প্রত্যেক জীবিত প্রাণী থেকে ইনফ্রারেড তরঙ্গ নির্গত হয়, ইঁদুরের গা থেকে অনবরত ছড়িয়ে পড়া ইনফ্রারেড তরঙ্গ শনাক্ত করে এই সাপ তাদের পিছু ধাওয়া করে শিকার করে। এরা ডিম পাড়ার বদলে বাচ্চা প্রসব করে।