Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ সোমবার, মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের ৭১০ কিলোমিটার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৪৩ AM
আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৪৩ AM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের দৈর্ঘ্য ৭১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে সুন্দরবন ১২৫ কিলোমিটার। যেটি দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল হিসেবে পরিচিত। বিশ্বব্যাংক ২০১৮ সালে এই অঞ্চলকে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল, এই ১০ বছরের তুলনায় ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৫ সাল, এই ১০ বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে ১০ গুণ। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, অধিক বৃষ্টিপাত, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, খরা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ভূমিকম্প ইত্যাদির ফলে এই উপকূলের মানুষের খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্য ঝুঁকি, জীবিকার উৎস হ্রাস, অপুষ্টি এবং সুপেয় পানির অভাবে রোগ ব্যাধি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে অর্থনৈতিক সংকটও বেড়েছে।

জলবায়ুর প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় ৭১০ কিলোমিটার এলাকা চরম ঝুঁকিতে পড়বে। সরকারি এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালিত এ জরিপে বলা হয়েছে, উন্নত বিশ্বের অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে। এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলের নদ-নদীর পানির স্তরের উচ্চতা প্রতি বছরই বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছর পানির স্তরের উচ্চতা বাড়ার হার তিন সেন্টিমিটার। ফলে তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে দেশ। বহু গ্রাম এরই মধ্যে সাগর-নদীতে বিলীন হয়েছে। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে নদীভাঙনে প্রায় ২৮ হাজার মানুষ বাস্তুহারা হতে পারেন। এছাড়া, পানিতে লবণের মাত্রাও বাড়ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে।

চলতি বছরের (২০২১ সাল) ২৬ এপ্রিল সকাল ১০টা ২০ মিনিটে কক্সবাজারে পানির স্তরের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল দুই দশমিক ৪৯ মিটার। গত ২৫ এপ্রিল রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে খেপুপাড়ায় উচ্চতা ছিল দুই দশমিক ৬৮ মিটার। গত ২৫ জুন বেলা ১১টা ১০ মিনিটে সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টে পানির স্তরের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল তিন দশমিক ৫৬ মিটার।

অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে (২০২১ থেকে ২০১৯ সাল) কক্সবাজারে পানির স্তরের উচ্চতা বেড়েছে শূন্য দশমিক ২৫ মিটার, খেপুপাড়ায় পানির উচ্চতা বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৭ মিটার। তবে, সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টে পানির স্তরের উচ্চতা কমেছে শূন্য দশমিক এক মিটার।

সিইজিআইএসের পূর্বাভাসে এ বছর ভাঙনপ্রবণ ১৩টি অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে আট জেলায় বর্ষার শুরুতেই নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর ২৫টি জায়গায় এখন ভাঙন চলছে। জেলার বিদ্যানন্দ, বজড়া, বেগমগঞ্জ, কালীগঞ্জসহ ১৭টি জায়গায় জরুরিভিত্তিতে ভাঙন রোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

গাইবান্ধার ৩৩টি পয়েন্ট দিয়ে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। তিস্তার পানিতে ডুবেছে জেলার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, কাপাসিয়া। ব্রহ্মপুত্রের স্রোতে বিলীন হচ্ছে সদরের কামারজানির কয়েকটি স্থান। ফুলছড়ি ও সাঘাটার পাঁচ ইউনিয়নের বসতি ভেসে যাচ্ছে স্রোতে। টাঙ্গাইলের সদর, গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতি ও নাগরপুরে শুরু হয়েছে ভাঙন।

যমুনার প্রবল স্রোতের মুখে টাঙ্গাইলের এক হাজার ২৬৩ হেক্টর জমি-বসত এবার ঝুঁকিতে পড়েছে। গত বছর সদরের কাকুয়া ইউনিয়নের চরপৌলি ও কাকুয়া গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। যমুনার ভাঙনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পাঁচিল ইউনিয়নের হাট পাঁচিল গ্রামের অর্ধেক ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। ফরিদপুর সদরের গোলডাঙ্গি, হাজিডাঙ্গি ও ভাঙ্গার মাথা এলাকায় ভাঙন অব্যাহত আছে। অল্পবিস্তর ভাঙছে জামালপুর, রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়ায়।

Bootstrap Image Preview