Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ সোমবার, মে ২০২৪ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পাহাড়ে যুগ যুগ ধরে জ্বলছে গ্যাস

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৫১ AM
আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৫১ AM

bdmorning Image Preview


চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিভিন্ন পাহাড়ে যুগের পর যুগ ধরে প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বলতে দেখছে এলাকাবাসী। এসব গ্যাস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন জ্বলতে দেখে তাদের আফসোস, মূল্যবান এই গ্যাস নিজেই জ্বলে নিঃশেষ হচ্ছে। উত্তোলনের কোনো উদ্যোগ নেই। তাদের বিশ্বাস, এখানে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ আছে। শীত-গ্রীষ্ম ১২ মাসই এ আগুন জ্বলছে তো জ্বলছেই। কখনোই এই আগুন নেভে না। বরং শুষ্ক মৌসুমে এ আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাহাড়ের লতাগুল্ম-জীবজন্তু পুড়ে ছাই করে দেয়। এই প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করা গেলে জাতীয়ভাবে কাজে লাগানো যেত।

তবে দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কম্পানি বাপেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, সীতাকুণ্ডে বিভিন্ন জায়গায় যে গ্যাস লিক হচ্ছে এগুলো পকেট গ্যাস, কোনো কমার্শিয়াল গ্যাস নয়। কমার্শিয়াল গ্যাস এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার মিটার নিচে থাকে। তার পরও তারা পরিকল্পনা নিয়েছে, পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে গ্যাস অনুসন্ধানে যৌথ উদ্যোগের জন্য টেন্ডার আহ্বান করার। যেখানে বাপেক্সের সক্ষমতা আছে সেগুলো বাপেক্স করবে, সক্ষমতার বাইরে জটিল কাজগুলো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে করা হবে। আগামী ডিসেম্বর থেকে নোয়াখালী, ফেনী, সীতাকুণ্ড, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের অংশ মিলিয়ে তিন হাজার কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক সাইসমিক সার্ভের কাজ শুরু করবে বাপেক্স।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের কুমিরা, বাড়বকুণ্ড, বারৈয়ারঢালার পাহাড়ে এভাবে গ্যাসের আগুন জ্বলছে। এ তিনটি স্থানে এই আগুন কখনোই নেভে না। এ ছাড়া এলাকার আরো বিভিন্ন গ্রামে টিউবওয়েল স্থাপনসহ নানা খননকাজের সময়ে প্রায়ই আগুন জ্বলে ওঠে। মেলে প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান। ফলে এ উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে এই খনিজসম্পদ রয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের। সরেজমিনে এসব এলাকার পাহাড় ঘুরে গ্যাস নির্গমনের এসব দৃশ্য দেখা যায়। কুমিরা পাহাড়ের একাধিক স্পটে এভাবে আগুন জ্বলছে। গহিন পাহাড়ের ছোট ছোট জলাশয়ের মধ্যেও বুদবুদ দিয়ে গ্যাস নির্গত হয় দিবা-রাত্রি। কেউ সে জলাশয়ে একটি দিয়াশলাইয়ের কাঠিতে আগুন ফেললে মুহূর্তেই দাউ দাউ আগুন জ্বলা শুরু হয়।

সীতাকুণ্ডের কবি বাসুদেব নাথ বলেন, ‘আমাদের কয়েক পুরুষ এখানে এভাবে গ্যাস নির্গত হয়ে আগুন জ্বলতে দেখেছেন। এটি সত্যিই বিস্ময়কর। সহজেই অনুমান করা যায় এখানে কী পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস থাকতে পারে।’

কুমিরার ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোর্শেদুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘এই পাহাড়ের দুই জায়গা থেকে গ্যাস বের হয় বহুকাল আগে থেকে। সেটি এক শতাব্দীরও বেশি সময় হতে পারে। আমার বাবা, তাঁর বাবা, তাঁরও বাবাসহ অনেক পুরুষ এসব দেখছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে এসব গ্যাস আহরণের জন্য সার্ভেও হয়েছে বলে শুনেছি, কিন্তু তারা এসব গ্যাস উত্তোলনে প্রচুর ব্যয় হবে ধরে নিয়ে আর আহরণ করেনি, এমনটাই শুনেছি।’

বারৈয়ারঢালার ইউপি চেয়ারম্যান মো. রেহান উদ্দিন রেহান বলেন, ‘আমার এলাকার ছোট দারোগারহাট পাহাড়ের দুটি স্পটে বহুকাল ধরে গ্যাস নির্গত হয়ে আগুন জ্বলে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নানা ধর্মীয় কথা বলে এখানে পূজা-অর্চনা করে। এই গ্যাস আহরণে কখনোই কোনো উদ্যোগ দেখিনি। আহরণ করলে জাতীয় সম্পদ হয়ে সবার কাজে আসত। কেন আহরণ হয় না তা কর্তৃপক্ষই ভালো জানে।’

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আসলে এভাবে দেশের অনেক স্থানেই প্রাকৃতিক গ্যাস নির্গত হয়। বাপেক্স এগুলো আহরণে উদ্যোগ নেয়। তবে অনেক স্থানের গ্যাস উত্তোলন করার অবস্থায় থাকে না। তাই তোলা হয় না। আবার অনেক স্থানে আহরণের সুযোগ থাকায় তা আহরণ করা হয়।’

জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় যে গ্যাস লিক হচ্ছে বলা হচ্ছে, এগুলো কোনো রিজার্ভ গ্যাস নয়। আমার জানা মতে, কোথাও প্রাকৃতিক গ্যাস অপচয় হচ্ছে না। এগুলো পকেট গ্যাস, অল্প গ্যাস, কোনো কমার্শিয়াল গ্যাস নয়। কমার্শিয়াল গ্যাস এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার মিটার নিচে থাকে। আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি, পুরো চট্টগ্রাম ও হিলট্র্যাক্সে গ্যাস অনুসন্ধানে যৌথ উদ্যোগের জন্য টেন্ডার আহ্বান করব। এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বর থেকে নোয়াখালী, ফেনী, হাতিয়া, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের অংশ মিলিয়ে তিন হাজার কিলোমিটার টুডি সাইসমিক সার্ভের কাজ শুরু করবে বাপেক্স। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কোথায় প্রাকৃতিক গ্যাস আছে, সেটি খুঁজে বের করার জন্য।’

বাপেক্সের এমডি আরো বলেন, ‘চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১৯১০ সালে পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড সীতাকুণ্ড-১ কূপখনন কাজ শুরু করে। পরে সীতাকুণ্ড-২,  সীতাকুণ্ড-৩, সীতাকুণ্ড-৪ এবং  সীতাকুণ্ড-৫ এই পাঁচটি কূপখনন করা হয়, কিন্তু গ্যাস পায়নি। সীতাকুণ্ড-৫ কূপখনন করার সময় আমি নিজেই যোগদান করেছি ১৯৮৪ সালে। দেশের কোথাও যদি গ্যাস বের হয়, তাহলে সেসব এলাকার প্রশাসন থেকে আমাদের জানানো হয়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে বাপেক্স থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়ে গ্যাসের নমুনা সংগ্রহ করি, জায়গাটি দেখে আসি। বেশির ভাগ জায়গায় দেখা যায়, পাঁচ-ছয় দিন গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নিঃশেষ হয়ে যায়।’

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এগুলো মূলত শেল পকেট গ্যাস। এগুলো প্রডিউস করার মতো গ্যাসক্ষেত্র নয়। শেল গ্যাসের ক্যাপ রকটি উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ায় এখান থেকে গ্যাস বের হচ্ছে (গ্যাসের ওপরে এক ধরনের রক থাকে, যেটি গ্যাসকে আটকে রাখে মাটির নিচে)। যদি কোনো কারণে ওপরের ক্যাপ রক না থাকে তাহলে গ্যাস জমে নিজ থেকে একটু একটু করে বের হতে থাকে। হয়তো এখানে গ্যাসক্ষেত্র ছিল, সেটি এখন প্রাকৃতিকভাবেই ওপেন হয়ে গেছে। এই গ্যাসক্ষেত্রগুলো মূলত ডেভেলপ করে লাভ হবে না। তাই গ্যাসের আগুন জ্বলছে দেখেই প্রচুর গ্যাস মজুদ আছে, এটি বলা যাবে না। পাহাড়ি এলাকায় অনেক সময় গ্যাস রিজার্ভ হয়, সেটি অনেক সময় উন্মুক্ত হয়ে সেখান থেকেও গ্যাস লিক হতে পারে।

সূত্র সমকাল

Bootstrap Image Preview